ইমরান-বুশরা দম্পতির ১৪ বছরের কারাদণ্ড

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

তোশাখানা দুর্নীতি মামলার পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত।

পাকিস্তানের জবাবদিহি আদালতের বিচারক মোহাম্মদ বশির বুধবার কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে ইমরান ও বুশরাকে ১০ বছরের জন্য সরকারি পদে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুজনের প্রত্যেককে ৭৮৭ মিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি জরিমানা করা হয়েছে।

রায় ঘোষণার সময় ইমরান খান আদালতে হাজির থাকলেও তাঁর স্ত্রী বুশরা আদালতে হাজির হননি।

৮ ফেব্রুয়ারির পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আট দিন আগে এই রায় এলো। এই নির্বাচনে ইমরান খানের রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ তাদের পুরনো নির্বাচনী মার্কা ক্রিকেট ব্যাট ছাড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দলটির নেতাকর্মীরা দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সাইফার মামলায় ইমরানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁসের এই মামলায় একই সাজা দেওয়া হয়েছে তাঁর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশিকে। পাকিস্তানের বিশেষ আদালত এই রায় দেন। তবে রায়ের স্বচ্ছতাসহ আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনবিশেষজ্ঞদের অনেকে।

তোশাখানা দুর্নীতির যে মামলায় আজ রায় হলো, তার বিচারকাজ হয় রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে। এ কারাগারেই বন্দী ইমরান।

গত বছরের আগস্টে তোশাখানা দুর্নীতির আরেক মামলায় ইমরানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

তোশাখানা মানে সরকারি কোষাগার। পাকিস্তানে বিদেশি নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া যেকোনো উপহার সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, ইমরান খান তার প্রাপ্ত উপহার সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেছেন। এ ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, তাকে তোশাখানা মামলা বলা হচ্ছে। তোশাখানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালে।

শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, সাংবিধানিক পদে বসা প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এ নিয়ম প্রযোজ্য। পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

২০১৮ সালে ইমরান খান যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন তিনি কোনো নিয়ম মানেননি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইমরান খানের যুক্তি ছিল, এটি করলে অন্য দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক হুমকির মুখে ফেলবে।

কিন্তু পরে ক্ষমতাসীন জোটের কিছু আইনপ্রণেতা জাতীয় পরিষদের স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফের কাছে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ইমরান খানকে অভিযুক্ত করা হয় যে, তার প্রাপ্ত উপহারের বিবরণ তোশাখানায় হস্তান্তর করা হয়নি। সেগুলো বিক্রি করে অর্থ আয় করেছেন। পরে পাকিস্তানের স্পিকার তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজার কাছে পাঠিয়ে দেন।

এ অবস্থায় ২০২২ সালের এপ্রিলে এক অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

এরপর ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ইমরান খানকে নোটিস দেয় দেশটির জাতীয় জবাবদিহি ব্যুরো (এনএবি)। ইমরান এ নোটিসের জবাব দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তিনি যে চারটি উপহার পেয়েছিলেন তা বিক্রি করে দিয়েছিলেন। উপহারের মধ্যে একটি গ্রাফ, একটি রোলেক্স ঘড়ি, এক জোড়া কাফলিঙ্ক, একটি দামি কলম, বেশ কয়েকটি ধাতব জিনিসপত্র ও একটি আংটি ছিল।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইমরান খানের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ আনে এনএবি। এতে ইমরানের পাশাপাশি তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, তারা সৌদি যুবরাজের থেকে অলংকার উপহার পেয়েছিলেন। তা কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজেরাই ব্যবহার করেছেন বা বিক্রি করে দিয়েছেন।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরানের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়। মঙ্গলবার সাইফার মামলায় সেনা সদর দপ্তরে হামলাসহ ৯ মের সহিংসতার ঘটনায় ইমরানকে নতুন করে অন্তত ১২টি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *