:: নাগরিক সাহিত্য ::
একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা মারা গেছেন। মঙ্গলবার (১৮ জুনে) দুপুর পৌনে ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
কবি অসীম সাহার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
তিনি জানান, মাঝখানে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর অসীম সাহা মোটামুটি সুস্থই ছিলেন। অল্প কয়েকদিন আগেই আমার সঙ্গে দেখা হয়। আজ শুনি তিনি আর নেই।
কবি অসীম সাহা গত ২১ মে থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত শনিবার তাঁর চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হুদা জানান, বর্তমানে অসীম সাহাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তাকে সেখানেই দেখতে যাচ্ছি।
চলতি বছরের শুরুর দিকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কবি অসীম সাহা। কবির ছয় বছরের ছোট ভাই মারা যাবার পর তিনি আরও ভেঙ্গে পড়েন। চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, বিষণ্ণতায় ভুগছেন কবি। এছাড়া হাত কাঁপা রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়াবেটিস রোগেও ভুগছিলেন তিনি।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জানান, কাল বুধবার সকালে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অসীম সাহার মরদেহ বাংলা একাডেমি চত্বরে নেওয়া হবে।
অসীম সাহার শেষকৃত্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁর ছোট ছেলে অর্ঘ্য সাহা জানান, তাঁর বাবা মরদেহ দান করে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে গেছেন।
১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নানাবাড়ি নেত্রকোনা জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন কবি অসীম সাহা। পড়াশোনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্য বিভাগে।
বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য অসীম সাহা ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। অসীম সাহা পেয়েছেন আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা।
কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশোর কবিতা, গান কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশোর কবিতা ও গানের মধ্যে কবি অসীম সাহা বেঁচে থাকবেন পাঠকের মাঝে।
অসীম সাহার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই
পূর্ব-পৃথিবীর অস্থির জ্যোৎস্নায় (১৯৮২), কালো পালকের নিচে (১৯৮৬), পুনরুদ্ধার (১৯৯২), উদ্বাস্তু (১৯৯৪), মধ্যরাতের প্রতিধ্বনি (২০০১), অন্ধকারে মৃত্যুর উৎসব (২০০৬), মুহূর্তের কবিতা (২০০৬), সৌর-রামায়ণ (২০১১), অক্টাভিও পাজ ও ডেরেক ওয়ালকটের কবিতা (অনুবাদ) (২০১১), কবর খুঁড়ছে ইমাম (২০১১), প্রেমপদাবলি (২০১১), পুরনো দিনের ঘাসফুল (২০১২) (কবিতা)। প্রগতিশীল সাহিত্যের ধারা (১৯৭৬), অগ্নিপুরুষ ডিরোজিও (১৯৯০), উদাসীন দিন (উপন্যাস) (১৯৯২), শ্মশানঘাটের মাটি (গল্প) (১৯৯৫), কিলের চোটে কাঁঠাল পাকে (২০০২), শেয়ালের ডিগবাজি (২০০৭), হেনরি ডিরোজিও (২০১০)।
সাহিত্য পুরস্কার
ষাটের দশকের কবিদের অন্যতম প্রধান এ-পর্যন্ত আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৩), ময়মনসিংহ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফোরাম সম্মাননা (২০০৯), সাতক্ষীরা জাতীয় কবিতা পরিষদ কবিসম্মাননা (২০১০), কবিতাবাংলা কবিসম্মাননা (২০১০), বিন্দুবিসর্গ কবিসম্মাননা (২০১১), দিকচিহ্ন কবিসম্মাননা (২০১১), কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর কবিসম্মাননা (২০১১) এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কার (২০১২) এবং কবিতালাপ পুরস্কার (২০১২)।