পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নে থাকছে না পুলিশ ভেরিফিকেশন

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে এখন থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক থাকছে না। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে পাসপোর্টের জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পাসপোর্টের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন পাসপোর্ট ইস্যুর মূল ভিত্তি ধরা হয়। এ দুটি সঠিক থাকলে পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকার কথা নয়- উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এমন মতামত উঠে আসায় এরপরই এ নিয়ে কাজ শুরু করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।

এ বিষয়ে সভায় অনেকটা এগিয়ে গেছে। পরবর্তীতে আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় বেশিরভাগ প্রতিনিধি পাসপোর্টে ভেরিফিকেশন উঠানোর বিষয়ে মত দিয়েছেন।

জানা গেছে, সভায় পাসপোর্ট জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনার আলোকে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে। সভায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পুলিশের বিশেষ শাখাসহ অন্যান্য বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ প্রতিবেদনের অপেক্ষায় এ মুহূর্তে সারাদেশে ১৬ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু ঝুলে আছে। প্রতিবেদন পেতে অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। অথচ অনেকের অসুস্থতাজনিত চিকিৎসা ও অন্যান্য কারণে দ্রুত দেশের বাইরে যেতে জরুরি পাসপোর্ট করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, পাসপোর্ট পাওয়া নাগরিকের অধিকার। এর জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন কেন করতে হবে? ইংল্যান্ডে পাসপোর্টের আবেদন করলে পোস্ট অফিসে পাসপোর্ট চলে আসে। প্রত্যেক নাগরিকের পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার আছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পুলিশ প্রতিবেদনের বাধ্যবাধকতা থাকায় পাসপোর্টপ্রত্যাশী সাধারণ নাগরিক পাসপোর্ট জারি ও নবায়নে নানামুখী হয়রানির সম্মুখীন হয়ে আসছেন। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা থেকে প্রতিকার পেতে ভুক্তভোগীরা সরকারের বিভিন্ন মহলে আবেদন-নিবেদন করেও প্রতিকার পাননি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জটিলতা নিরসন করে পাসপোর্ট জারি ও নবায়নের নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

পাসপোটের্র জন্য ভেরিফিকেশন করতে গেলে পুলিশের কাছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা দেওয়ার একটি অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ কাগজ-কলমে এ ধরনের টাকা দেওয়ার বিধান নেই। আবেদনকারীর তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলাকালে নানা ধরনের ভোগান্তি, পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এ পদ্ধতিকে কলুষিত করেছে। বিগত সময়ে সরকারগুলো পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে নানা উদ্যোগ নিলেও তা কার্যকর হয়নি। 

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হযরানি ও দুর্নীতি বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রার্থীর বা তার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচিতি যাচাই করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বর্তমান ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এটি বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, কমিশন থেকে আমরা সুপারিশ করছি, চাকরি কিংবা অন্য সেবার ক্ষেত্রে পুলিশের ভেরিফিকেশন আর বাধ্যতামূলক না রাখতে। এটি কোথাও আর থাকবে না।

পুলিশ সংস্কার কমিশন গত ১৯ নভেম্বর জমা দেওয়া সুপারিশে জানায়, চাকরি ও পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই বন্ধের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন সেদিন বলেন, ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধ হওয়া জরুরি। প্রার্থীর বা তাঁর পরিবারের রাজনৈতিক পরিচিতি বিচার করা অযৌক্তিক।’

সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন- প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সচিব সাইফুল্লাহ পান্না, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব শেখ আবু তাহের,  প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সচিব, মো. রুহুল আমিন, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নূরুল আনোয়ার, মোহাম্মদ নুরুল, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), এ এস এম হুমায়ুন কবীর, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর যুগ্ম-পরিচালক, মো. জিয়াউল কাদের, অতিরিক্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ রেজিস্ট্রার জেনারেল, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, মো. যাহিদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, গোলাম রসূল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উপসচিব আমিন আল পারভেজ, বিশেষ পুলিশ সুপার (এসবি) হায়াতুন্নবী, বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন শীর্ষক প্রকল্প পরিচালক, মো. সাইদুর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাফি প্রমুখ।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *