■ ক্রীড়া প্রতিবেদক ■
ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ চলাকালে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব।আল হাসান। ভারতের বিপক্ষে কানপুরে টেস্টে মাঠে নামার একদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে দুই ফরম্যাটের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন এই অলরাউন্ডার।
ওয়ানডে ক্রিকেট নিয়ে সাকিবের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আগামী বছর পাকিস্তানে হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন ট্রফি পর্যন্ত খেলার কথা জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেন, ‘আমার মনে হয় আমি আমার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ফেলেছি। মিরপুর টেস্টে (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) খেলতে পারলে সেটি হবে আমার শেষ টেস্ট। যার অর্থ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটাই ছিল ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে সাকিব আল হাসানের শেষ ম্যাচ।’
অক্টোবরে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে খেলা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সাকিব বলেন, ‘দেখুন, এখন পর্যন্ত আমি তো এভেলেবল। দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না। আমি বিসিবির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদেরকে বলা হয়েছে আমার কি প্ল্যান। এই সিরিজ আর হোম সিরিজটা আমি ফিল করেছিলাম আমার লাস্ট সিরিজ হবে, টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালি।’
সাকিব আরও বলেন, ‘ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে ও সিলেক্টরদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই এবং খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য লাস্ট। বোর্ড চেষ্টা করছে কীভাবে সুন্দরভাবে আয়োজন করা যায়।’
দেশে নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়ে সাকিব বলেন, ‘আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ ফিল করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোনো সমস্যা না হয়। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তারা দেখছেন। তারা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবেন, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অ্যাট লিস্ট টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।’
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডার সাকিবের জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ মাগুরা জেলায়। পুরো নাম খন্দকার সাকিব আল হাসান ফয়সাল। ছোটবেলায় ফয়সাল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। বাবা মাশরুর রেজা ছিলেন বাংলাদেশ কৃষিব্যাংকের কর্মকর্তা এবং মা শিরিন শারমিন গৃহিণী। ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর উম্মে শিশিরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সাকিব।
মাঠ ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন কার্যকলাপের কারণে বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন এই তারকা। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে তাকে ছয় মাসের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে বিসিবি। যদিও পরে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানো হয়। এ ছাড়া জুয়াড়িদের কাছ থেকে একাধিকবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও গোপন করায় ২০১৯ সালে তাকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি। তবে ভুল স্বীকার করার পর এক বছরের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয়।
সাকিব ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন ওয়ানডে দিয়ে। খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছিল তার। ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে ১২৯টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। সাকিব বাংলাদেশের পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ২,৫৫১ রান ও ১৪৯ উইকেটের মালিক।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে অভিষেক ম্যাচে ব্যাট হাতে ২৬ রান আর বল হাতে ১ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের সাক্ষী হয়েছিলেন সাকিব। দেশের ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই ছিলেন তিনি। এরপর প্রতিনিধিত্ব করেছেন টানা নয় বিশ্বকাপে।
২০০৭ সালের ১৮ মে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ সেই ম্যাচ ড্র করেছিল। সাকিব কেবল ১ ইনিংসেই ব্যাট এবং বল করার সুযোগ পেয়েছিলেন সেবারে। ব্যাট হাতে করেছিলেন ২৭ রান। বল হাতে ছিলেন উইকেটশূন্য। দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশের বাইরে নিজের শেষ টেস্টটাও সেই ভারতের বিপক্ষেই খেলবেন সাকিব। এখন পর্যন্ত ৭০ টেস্ট খেলে ৩৮.৩৩ গড়ে করেছেন ৪,৬০০ রান। সেঞ্চুরি আছে ৫টি, অর্ধশতক ৩১টি।
বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করা সাকিব বল হাতে নিয়েছেন ২৪২ উইকেট। তিনিই অন্য দুই সংস্করণের মতন টেস্টেও দেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।