■ ক্রীড়া প্রতিবেদক ■
ফিক্সিংয়ের দায়ে বাংলাদেশ নারী দলের স্পিনার সোহেলি আক্তারকে ৫ বছরের জন্য সব ধরণের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। আইসিসির অ্যান্টি-করাপশন কোডের পাঁচটি বিধি লঙ্ঘনের কথা স্বীকার করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, গতকাল ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে সোহেলীর নিষেধাজ্ঞার শাস্তি কার্যকর শুরু হয়ে গেছে।
আইসিসির অ্যান্টি-করাপশনের কোডের যেসব বিধিগুলো লঙ্ঘনের কথা স্বীকার করেছেন সোহেলি—২.১.১ ধারায় ম্যাচ ফিক্সিং বা যেকোনো উপায়ে খেলার ফলাফল, অগ্রগতি, আচরণ বা অন্যান্য দিক অনৈতিকভাবে প্রভাবিত করা বা এর সঙ্গে জড়িত থাকা, যার মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ পারফরম্যান্স করাও অন্তর্ভুক্ত। ২.১. ১ ধারা লঙ্ঘনে আছে—ম্যাচ ফিক্সিং বা বাজি সংক্রান্ত উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা ঘটানোর জন্য ঘুষ বা অন্য কোনো পুরস্কার গ্রহণ, গ্রহণে সম্মতি প্রদান, প্রস্তাব করা বা গ্রহণের চেষ্টা করা।
এ ছাড়া ২.১.৩ ধারায় বলা আছে—ম্যাচ ফিক্সিং বা বাজির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা ঘটানোর জন্য ঘুষ বা অন্য কোনো পুরস্কার গ্রহণ, গ্রহণে সম্মতি প্রদান, প্রস্তাব করা বা গ্রহণের চেষ্টা করা। ২.১.৪ ধারায়, অন্য কোনো অংশগ্রহণকারীকে ওপরের যে কোনো বিধান লঙ্ঘনের জন্য প্ররোচিত করা, উৎসাহিত করা, নির্দেশনা প্রদান করা বা কোনোভাবে সহায়তা করার কথা বলা হয়েছে।
আকসুর ২.৪.৪ ধারামতে– অ্যান্টি-করাপশন ইউনিটকে বিলম্ব না করে দুর্নীতির জন্য করা কোনো প্রস্তাব বা আমন্ত্রণের সম্পূর্ণ তথ্য জানাতে ব্যর্থ হওয়া। ধারা ২.৪.৭-এ আছে, অ্যান্টি-করাপশন ইউনিটকে তদন্তে বাধা সৃষ্টি করা বা বিলম্ব করা, যার মধ্যে প্রাসঙ্গিক নথিপত্র বা অন্যান্য তথ্য গোপন করা, বিকৃত করা বা ধ্বংস করাও অন্তর্ভুক্ত।
সোহেলি আক্তার ২০২৩ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে ছিলেন না। তবে স্কোয়াডে থাকা আরেক ক্রিকেটারকে তিনি মুঠোফোনে ফিক্সিংয়ের বার্তা পাঠান অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচের আগে। যেখানে ওই ক্রিকেটারকে বড় অঙ্কের টাকার লোভ দেখানোও হয়। যা ওই ক্রিকেটার জানিয়ে দেন আকসুকে।
দুই বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে থাকা এক নারী ক্রিকেটারকে স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন দলের বাইরে থাকা সোহেলী। দুজনের কথোপকথনের অডিও প্রকাশ হলে বেশ হইচই হয় দেশের ক্রিকেটে। সেখানে জানা যায়, জাতীয় দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটার সোহেলী আক্তার বিশ্বকাপ দলের এক সদস্যকে নিয়মবহির্ভূত প্রস্তাব দেন। সেই ক্রিকেটার অবশ্য ওই প্রস্তাবে রাজি হননি।
সোহেলীর সেসময় জানান, আকাশ নামে এক জুয়াড়িকে চ্যালেঞ্জ জানাতে গিয়ে ভুল করে ফেলেছেন। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এত দূর গড়াবে, বুঝতে পারিনি। ফেসবুকে পরিচিত হওয়া আকাশ স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেয়। আমি তাকে বলেছিলাম, বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটাররা এ রকম কিছু করে না। সেটা প্রমাণ করতেই আমি লতাকে প্রস্তাবটা দিই। লতা সঙ্গে সঙ্গে ভয়েস মেসেজ দিয়ে প্রমাণ করে দেয় মেয়েরা এসবে জড়িত না। আমার কাছে আকাশের সঙ্গে মেসেঞ্জারের সব লেখা রয়েছে। সেগুলো আকসুকে (এসিইউ) দেখাব। যা যা হয়েছে সেগুলো বলব।’
তবে শেষ রক্ষা হয়নি সোহেলীর। নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে এসেছে তার ক্যারিয়ারে।
জাতীয় দলের সঙ্গে থাকা ওই ক্রিকেটার ঘটনাটি দ্রুত টিম ম্যানেজমেন্টকে অবহিত করেন। টিম ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) বিষয়টি জানায়। বিষয়টি দ্রুত আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের (এসিইউ) নজরেও নিয়ে আসা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বিষয়টি দুই বছর তদন্ত করেছে এসিইউ। সেটিরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ পাঁচ বছরের নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আইসিসি।
সোহেলির বিরুদ্ধে এই সবকটি অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সোহেলি নিজেও তার দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। সোহেলি বাংলাদেশের হয়ে ২টি ওয়ানডে ও ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি। ওয়ানডেতে তিনটি ও টি-টোয়েন্টিতে আটটি উইকেট নিয়েছেন তিনি।