■ ক্রীড়া প্রতিবেদক ■
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ হল দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে ২৭ বছর আগে আইসিসির ট্রফি জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সালটা ১৯৯৮। সেবার বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। টুর্নামেন্টের নাম অবশ্য শুরুতে আইসিসি নকআউট ট্রফি ছিল।
আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫-এর শিরোপা জেতার প্রায় সব আয়োজন গতকালই করে রেখেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৮২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ২১৩ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আজ চতুর্থ দিনে তারা যখন ব্যাটিংয়ে নামে, তখন জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৬৯ রান। হাতে ছিল ৮ উইকেট আর পুরো দুই দিন সময়! এমন সহজ সমীকরণেও তাদের পক্ষে বাজি ধরতে ভয় ছিল অনেকের!
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার টেম্বা বাভুমা ও এইডেন মার্করামের জুটি আজ সকালে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দিনের খেলার তৃতীয় ওভারেই ফেরেন বাভুমা। গতকালের রানের সঙ্গে আর মাত্র এক রান যোগ করতে পেরেছেন অধিনায়ক। যদিও সবমিলিয়ে দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। ১৩৪ বলে করেছেন ৬৬ রান। বাভুমা লম্বা সময় হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে ব্যাটিং করেছেন। তার এই ফিফটি রান তাড়ায় বেশ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
বাভুমার পর ট্রিস্ট্রিয়ান স্টাবস দ্রুতই ফেরেন। তাতে কিছুটা হলেও শঙ্কার কালো মেঘ জমেছিল আফ্রিকার আকাশে। তবে সেটা একাহাতে সরিয়ে দিয়েছেন মার্করাম। এক প্রান্ত আগলে রেখে দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করেছেন। যদিও জয়ের সময় তিনি উইকেটে থাকতে পারেননি। তার ম্যারাথন ইনিংস থেমেছে জয় থেকে মাত্র ৬ রান দূরে থাকতে।
সবমিলিয়ে ২০৭ বলে ১৩৭ রান এসেছে মার্করামের ব্যাট থেকে। যেখানে ১৪টি বাউন্ডারি মেরেছেন তিনি। এমন দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতেছেন এই ওপেনার।
এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২১২ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। জবাব দিতে নেমে ৫৭ ওভার ১ বলে ১৩৮ রানের বেশি করতে পারেনি টেম্বা বাভুমার দল। ৭৪ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৬৫ ওভারে ২০৭ রানে অল আউট হয় অজিরা।
প্রথম ইনিংসে ১৩৮ রানে অলআউট হয়ে যাওয়া দলটি কী অবলীলায় ছুঁয়ে ফেলল ২৮২ রানের লক্ষ্য। চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রান করে জেতা সহজ নয় টেস্ট ক্রিকেটে। ১৪৮ বছরের ইতিহাসে ২৮২ ও এর বেশি রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে জয়ের উদাহরণ ছিল মাত্র ৫০টি। লর্ডসে তো মাত্র দুবারই কোনো দল চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ বা এর বেশি লক্ষ্য ছুঁয়ে জিতেছিল। সংখ্যাটাকে আজ তিন বানিয়ে ফেলল দক্ষিণ আফ্রিকা।
বৈশ্বিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ১৪টি নকআউট ম্যাচে হারা দক্ষিণ আফ্রিকা তাই প্রথমবার ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ হলো আজই। দরকারি মুহূর্তে ভেঙে পড়ার পুরোনো ইতিহাসকে ছুড়ে ফেলে মার্করামরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে।
এ নিয়ে তিন আসরে তিন নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখল ক্রিকেট দুনিয়া।
প্রথম আসরে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় আসরে ভারতকে হারিয়ে অজিরা শিরোপা ঘরে তোলে। এবার প্যাট কামিন্সের দলকে হারিয়ে আইসিসির দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলল প্রোটিয়ারা।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতায় আইসিসির থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ পুরস্কার পাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারের ফাইনালের জন্য জন্য ৫.৭৬ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল আইসিসি।
এর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা ৩.৬ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা পাবে পুরস্কার হিসেবে। যা গত দুই চক্রের দ্বিগুনেরও বেশি। গত দুই আসরে চ্যাম্পিয়ন দল ২০ কোটি টাকারও কম অর্থ পুরস্কার পেয়েছে। রানার্স আপ অস্ট্রেলিয়া ২.১৬ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা পাবে।
এছাড়া টুর্নামেন্টে তিনে শেষ করেছে ভারত। তারা পাবে প্রায় ১৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। চারে টুর্নামেন্ট শেষ করা সাবেক চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড প্রায় ১৪ কোটি ১০ লাখ টাকা পাবে। পাঁচে শেষ করা ইংল্যান্ডের ভাগে পড়বে ১১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার মতো।
আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ষষ্ঠ অবস্থানে থেকে শেষ করেছে শ্রীলঙ্কা। তাদের ভাগে পড়েছে ১০ কোটি ১২ লাখ টাকা। সপ্তম অবস্থানে শেষ করা বাংলাদেশ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকার মতো ঘরে তুলতে পারবে। আটে শেষ করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নয়ে শেষ করা পাকিস্তান যথাক্রমে ৭ কোটি ২৩ লাখ ও ৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকার মতো অর্থ পুরস্কার হিসেবে পাবে। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টের জন্য ১৩৫ কোটি টাকার মতো অর্থ পুরস্কার বরাদ্দ ছিল আইসিসির।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া: ২১২ ও ২০৭।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৩৮ ও ৮৩.৪ ওভারে ২৮২/৫ ( মার্করাম ১৩৬, বাভুমা ৬৬, মুল্ডার ২৭, বেডিংহাম ২১*; স্টার্ক ৩/৬৬, কামিন্স ১/৫৯)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: এইডেন মার্করাম।