বাংলাদেশে স্টারলিংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা দেওয়া স্টারলিংক বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে স্টারলিংকের যাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

স্পেসএক্স-এর গ্লোবাল বিজনেস অপারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার বলেন, আমি এখানে আসতে পেরে খুব আনন্দিত। প্রধান উপদেষ্টা (অধ্যাপক ইউনূস) এবং তার প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাতেই হয়, কারণ তিনি বাংলাদেশের জনগণের জন্য নজিরবিহীন এক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। কয়েক মাস আগেই আমরা এটা নিয়ে কথা বলেছিলাম, আজ এটা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আমাদের জন্য হাইস্পিড ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। স্টারলিংকের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা স্থিতিশীল ইন্টারনেট পাবে। এটা বাংলাদেশের টেলিমেডিসিন শিক্ষায় অবদান রাখবে। আমরা মনে করি, কানেক্টিভিটি একটি সমাজের উন্নতির পথে যাত্রা।

ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, এখন থেকে ঠিক এক বছর আগে বাংলাদেশে ইন্টারনেট শাটডাউনের মতো কালো অধ্যায়ের সম্মুখীন হয়েছে। আজ একটি নতুন দিনের শুরু, আজ থেকে কোনো সরকার ইন্টারনেট বন্ধের মতো পদক্ষেপ নিতে পারবে না। এটা আমাদের শিক্ষার্থী ও ফ্রিল্যান্সারদের জন্য একটি সুযোগ। নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট শুধু একটা সুবিধা না, অধিকার। স্টারলিংক বাংলাদেশের প্রতিটি স্থানে থাকবে, বিশেষ করে দূরবর্তী তৃণমূল এলাকায়।

বাংলাদেশে স্টারলিংকের কিট ও সংযোগের দাম নিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় স্টারলিংক সেবা চালু হয়েছে, তার তুলনায় বাংলাদেশে স্টারলিংক সংযোগের দাম কম। এ সময় স্টারলিংকের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, প্রতি মাসে স্টারলিংকের প্রতিটি সংযোগ থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব পাবে সরকার।

প্রায় তিন মাস ধরে পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চালানোর পর শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে স্টারলিংক তার সেবা চালু করে। প্রতিষ্ঠানটি বিটিআরসি থেকে ‘স্যাটেলাইট অপারেটর লাইসেন্স’ এবং ‘রেডিও কমিউনিকেশন অ্যাপারেটার্স লাইসেন্স’ পায়, যার বৈধতা ১০ বছর।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্টারলিংকের সেবা নিতে হলে গ্রাহকদের প্রাথমিকভাবে ৪২ হাজার টাকা খরচে একটি সেটআপ কিট কিনতে হবে। এতে থাকবে স্যাটেলাইট রিসিভার ডিস, রাউটার, পাওয়ার সাপ্লাইসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ। এরপর গ্রাহকরা মাসিক ভিত্তিতে দুটি প্যাকেজের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে পারবেন।

২ প্যাকেজ, সর্বোচ্চ গতি ৩০০ এমবিপিএস: রেসিডেন্সিয়াল প্যাকেজের মাসিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার টাকা, যেখানে পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতির আনলিমিটেড ইন্টারনেট। অপরদিকে, স্টারলিংক লাইট প্যাকেজের মূল্য ৪ হাজার ২০০ টাকা, যা অপেক্ষাকৃত কম দামে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা দেবে।

এ সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত স্টারলিংকের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলও উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন স্টারলিংকের ব্যবসা পরিচালনা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার এবং আন্তর্জাতিক কৌশল ও সরকারি সম্পর্ক পরিচালক রিচার্ড গ্রিফিথস। 

গত বছরের ১৮ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে সেই ঘটনার কথা তুলে ধরে ফয়েজ আহমদ বলেন, “ইন্টারনেট শাটডাউনের ঠিক ৩৬৫ তম দিন আজ। ইতোমধ্যে স্টারলিংকের অর্ডার নেওয়া শুরু হয়েছে। আজ তারা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করলেন। আগে সফট লঞ্চ হয়েছিল, আজ তাদের উপস্থিতিতে স্টারলিংক সেবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এল।”

ফয়েজ আহমদ বলেন, “স্টারলিংকের মাধ্যমে পরিষ্কার বার্তা দিতে চাই যে, বিশ্বের সঙ্গে আমাদের জনগণের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার দুঃসাহস যেন আর কেউ না করে। নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট শুধু একটা সুবিধা নয়, অধিকার।

“স্টারলিংক বাংলাদেশের প্রতিটি স্থানে থাকবে, বিশেষ করে দূরবর্তী তৃণমূল এলাকায়। আজ বাংলাদেশ কানেক্টেড এবং এটা আর কখনও ডিসকানেক্টেড হবে না।”

সংবাদ সম্মেলনে টেলিযোগাযোগ নীতিমালা সংস্কারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও উত্তর দেননি ফয়েজ আহমদ।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল এমদাদ উল বারী ও বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাদুর রহমান।

এর আগে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেপের (বিএসসিএল) সঙ্গে ‘বি টু বি‘ চুক্তি করে স্টারলিংক।

বিএসসিল এমডি ইমাদুর রহমান ও স্টারলিংক এর ব্যবসা পরিচালনা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার চুক্তিতে সই করেন।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের মধ্যে ফোনালাপ হয়। সেই আলোচনার সূত্রে বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা চালুর উদ্যোগ শুরু হয়।

এরপর বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ১০ বছর মেয়াদী দুটি লাইসেন্স পায় স্টারলিংক। এর একটি হচ্ছে ‘ননজিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অরবিট অপারেটর লাইসেন্স’; অন্যটি ‘রেডিও কমিউনিকেশন অ্যাপারেটার্স লাইসেন্স।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *