■ কূটনৈতিক প্রতিবেদক ■
বাংলাদেশে নতুন রাষ্ট্রদূত না আসা পর্যন্ত সাবেক কূটনীতিক ট্র্যাসি অ্যান জ্যাকবসন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী সপ্তাহে ট্র্যাসি জ্যাকবসনের (Tracey Ann Jacobson) ঢাকায় এসে দায়িত্ব নেওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পদে পিটার হাস -এর উত্তরসূরি হিসেবে ডেভিড মিলিকে মনোনীত করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু মার্কিন সিনেটে মনোনয়নের শুনানি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তিনি ঢাকায় আসছেন না। আর মিলির বাংলাদেশে না আসা পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করবেন সাবেক কূটনীতিক ট্র্যাসি অ্যান জ্যাকবসন। মূলত বাংলাদেশে সংস্কারপ্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
ঢাকায় দায়িত্ব নেয়ার আগে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে তিনি বুধবার (৮ জানুয়ারি) ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
সিনিয়র ফরেন সার্ভিসের একজন অভিজ্ঞ সদস্য ট্রাসি অ্যান জ্যাকবসন ২০২৫ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং কসোভোতে।
সাম্প্রতিক সময়ে জ্যাকবসন প্রাচ্যবিষয়ক ব্যুরোতে ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। তার আগে, তিনি ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বিদেশে উচ্চপদস্থ নেতৃত্বের পাশাপাশি স্কুল অব প্রফেশনাল অ্যান্ড এরিয়া স্টাডিজের ডিন এবং ন্যাশনাল ফরেন অ্যাফেয়ার্স ট্রেনিং সেন্টারের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ ফরেন সার্ভিসের ভবিষ্যৎ গঠনে অবদান রেখেছেন অ্যাম্বাসেডর জ্যাকবসন।
এছাড়াও ট্রাসি জ্যাকবসন ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলে ডেপুটি এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি এবং সিনিয়র ডিরেক্টর ফর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন হিসেবে কাজ করেন। এবং লাটভিয়ার রিগায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন।
২০১৭ সালে কূটনীতিক হিসেবে অবসরে যাওয়ার আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে উপ-নির্বাহী সচিবের পদে কাজ করেছেন।
জর্জ হপকিনস ইউনিভার্সিটিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী পেশাদার কূটনীতিক ট্র্যাসি জ্যাকবসন তুর্কমিনিস্তান, তাজিকিস্তান ও কসোভোয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি মার্কিন কূটনীতিক হিসেবে রাশিয়া, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও লাটভিয়ার মার্কিন দূতাবাসে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন। ২০১৭ সালে কূটনীতিক হিসেবে অবসরে যাওয়ার আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে উপনির্বাহী সচিবের পদে কাজ করেছেন। ২০২১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁকে অবসর থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা পদে ফিরিয়ে আনেন। ওই বছরই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে আফগানিস্তান–সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের পরিচালক হন ট্র্যাসি জ্যাকবসন। এরপর তাঁকে ইথিওপিয়ায় দেড় বছরের জন্য ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। জো বাইডেন ইরাকে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে তাঁকে মনোনীত করেন। গত বছরের জুনে ওই মনোনয়নের বিষয়ে মার্কিন সিনেটে শুনানি হলেও নিয়োগটি ঝুলে ছিল।
ঠিক ১৭ বছর আগে দুই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ঢাকায় যাওয়া–আসার মাঝখানে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ২০০৭ সালের মতো এবারও বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালনের সময়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব কিছুদিন পালন করবেন সিডিএ। ওই সময় ২০০৬ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস। কিন্তু ১৪ মাসের মাথায় হঠাৎই মার্কিন প্রশাসন তাঁকে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়। ফলে তিনি বেশ তাড়াহুড়া করেই ঢাকা ছেড়ে যান। ২০০৮ সালের এপ্রিলে জেমস এফ মরিয়ার্টি পরের মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে ৯ মাস ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব সামলেছিলেন গীতা পাসি।