ওয়াশিংটনে হেলিকপ্টার-উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা, ১৮ মরদেহ উদ্ধার

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■ 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন সামরিক হেলিকপ্টার ও যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের সংঘর্ষের ঘটনায় পোটোম্যাক নদী থেকে ১৮টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

আমেরিকান এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, পিএসএ এয়ারলাইনসের বম্বার্ডিয়ার সিআরজে ৭০০ বিমানটিতে ৬০ জন যাত্রী এবং ৪ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হেলিকপ্টারে তিনজন সেনা সদস্য ছিলেন, যারা ভার্জিনিয়ার ফোর্ট বেলভয়র থেকে একটি প্রশিক্ষণ মিশনে ছিলেন। 

বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার হেলিকপ্টার এবং উদ্ধারকারী নৌকা পোটোম্যাক নদীতে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির জরুরি সেবা দল রিগ্যান ন্যাশনাল এয়ারপোর্টে উপস্থিত হয়েছে। দমকল বাহিনী ও উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। পোটোম্যাক নদীর তীরে হেলিকপ্টারটির কিছু ধ্বংসাবশেষ মিলেছে।

ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের রানওয়ে ৩৩-এ অবতরণের সময় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর দুটি উড়োযানই পোটোম্যাক নদীতে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই সব ধরনের উড্ডয়ন ও অবতরণ বন্ধ করে দিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে মার্কিন আর্মি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারে তিন জন সেনা ছিলেন। সামরিক হেলিকপ্টারটি প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিল। তবে উড়োজাহাজটিতে থাকা কোনো সেনার পরিচয় পাওয়া যায়নি।

আমেরিকান এয়ারলাইন্স এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছে, ‘পিএসএ এয়ারলাইন্সের পরিচালিত আমেরিকান ঈগল ফ্লাইট ৫৩৪২ কানসাসের উইচিটা থেকে ওয়াশিংটন রিগ্যান ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। সেটি দুর্ঘটনায় পড়েছে আমরা অবগত হয়েছি।’

এফএএ ও ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছে এনটিএসবি।

হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি করোলিন লেভিট ফক্স নিউজ বলেছেন, ‘দুর্ঘটনার এলাকার জনগণকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। তাদের কাজে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে, যাতে তাঁরা জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারে।

এ ঘটনাকে ভয়াবহ দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। জরুরি সেবা কর্মীদের তাঁদের অবিশ্বাস্য কর্ম দক্ষতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সে পোস্টে বলেছেন, ‘দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার জন্য প্রার্থনা করুন।’

মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে জানা যায়, তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর না পাওয়া গেলেও এই দুর্ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে অন্তত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় দুর্ঘটনা

রোমান মোমবাতির ঝলকানির মতো কিছু একটা আকাশে দেখেছিলেন অ্যারি শ্যুলম্যান।  জর্জ ওয়াশিংটন পার্কওয়ে ধরে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল বিমানবন্দরের পাশ দিয়ে গেছে এই রাস্তা। গাড়ি চালিয়ে এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায়ই উড়োজাহাজের ওঠানামা দেখেন তিনি।

শ্যুলম্যান বলেন, ‘দেখে সবকিছু স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল। উড়োজাহাজটি  ঠিকমতো নেমে আসছিল, কোনো ত্রুটি ছিল না।’

কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই পেছনে ফিরে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় শ্যুলম্যানের। তিনি বলেন, ‘ আমি পেছনে ফিরে দেখি কিছুই আর ঠিকঠাক নেই। উড়োজাহাজটি দেখে মনে হচ্ছিল সেটি ডান দিকে বেঁকে যাচ্ছে। সম্ভবত ৯০ ডিগ্রি। আমি উড়োজাহাজের নিচের অংশ দেখতে পাচ্ছিলাম। বাইরে খুব, খুবই অন্ধকার ছিল। তাই  উড়োজাহাজের নিচের অংশ ভালোমতো দেখতে পাওয়ার কথা না।’তিনি আরও বলেন ‘উড়োজাহাজটির নিচের অংশে উজ্জ্বল হলুদ আলো দেখা যাচ্ছিল।  নিচ থেকে স্ফুলিঙ্গ বেরিয়ে আসছিল।’

শ্যুলম্যানের মনে হচ্ছিল উৎসবে রোমান মোমবাতি জ্বালানোর পর যেমন আলোর ঝলকানি দেখা যায় অনেকটা তেমনই। যেন দৈত্যের মতো বড় একটি মোমবাতি থেকে আলোর স্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছিল। আর সেই স্ফুলিঙ্গ উড়োজাহাজটির নাকের দিক থেকে লেজের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

শ্যুলম্যান রাস্তায় পেছন দিকে ফিরে তাকান। তিনি কোনো বিস্ফোরণের শব্দ বা বড় কোনো আওয়াজ শুনতে পাননি। তিনি উড়োজাহাজ বিস্ফোরণ হয়েছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কোনো আগুন দেখতে পাননি বলে জানান।

শ্যুলম্যান বলেন, ‘আমি আগুনের গোলা দেখার জন্য পেছনে ফিরে তাকাই। কিছু বিধ্বস্ত হয়েছে কিনা সেটা খুঁজতে থাকি। কিন্তু আমি কিছুই দেখতে পাইনি।’ এনবিসিকে শ্যুলম্যান আরও বলেন,  ‘প্রথমে মনে হয়েছিল দৃষ্টিভ্রম হয়েছে।  যদি সেখানে ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, কেন আমি পরে কিছুই দেখতে পেলাম না।?’ তবে ঘটনা যে ঘটেছে তা বুঝতে পারেন পরক্ষণেই। জরুরি উদ্ধারকারীদের প্রথম দলটিকে তিনি দেখতে পান।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *