:: বগুড়া প্রতিনিধি ::
বগুড়ায় আদালত চত্বরে ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন সাঈদ ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বগুড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে গেলে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
হিরো আলমের অভিযোগ, বিএনপির লোকজন তাকে কান ধরিয়ে ওঠবস করানোর পর মারধর করেছে। বর্তমানে তিনি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বগুড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে গিয়েছিলেন হিরো আলম। তিন দফায় জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সময় তাকে মারধর এবং ২০২৩ সালে বগুড়া-৪ আসনে তাকে ষড়যন্ত্র করে হারানোর অভিযোগ এনে মামলা করেন হিরো আলম।
মামলা দায়ের করার পর আদালত চত্বরে হিরো আলম সাংবাদিকদের সঙ্গে মামলার বিষয়ে কথা বলার প্রস্তুতি নেন। এমন সময় কয়েকজন যুবক তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ এনে হিরো আলমের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। প্রথমে তারা হিরো আলমকে কান ধরে উঠ-বস করিয়ে ক্ষমা চাওয়ার পরে তারা সড়কে নিয়ে এসে বেধড়ক মারধর করেন।
মারধরের শিকার হওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘এক স্বৈরাচারের পতনের পর আরেক দল নিজেদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করেছে। এটা কি স্বাধীনতা? প্রকাশ্যে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হলো। আমি কখনো তারেক জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি করিনি। ডিবির হারুন আমার পরিবারকে জিম্মি করে রিজভী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছিল। এই কথা আগেও বলেছি। এরপরও আমাকে আদালতের মতো জায়গায় আপনাদের সামনে পেটানো হলো।’
হিরো আলম বলেন, ‘আমি মামলা করে নিচে আসার পরে বিএনপির একটা দল আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমাকে কান ধরিয়ে উঠ-বস করায়। এরপরে আমাকে কিল-ঘুষি মেরেছে মুখে ও মাথায়। বুকে ও শরীরের অন্য জায়গায়ও মারে। তাদের অভিযোগ, আমি নাকি কোনো বক্তব্যে তারেক জিয়াকে গালিগালাজ করেছি।’
হিরো আলম বলেন, আজকে আমাকে বিএনপির লোকজন মারধর করল। তারা বলতেছে যে আমি তারেক জিয়ার নামে কিছু বলছি। কেউ যদি ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারেন আমি হিরো আলম তারেক জিয়াকে বকা দিছি, গালি দিছি, তাহলে আমি পুরো বগুড়া শহর জুতার মালা গলায় দিয়ে ঘুরব।
তিনি বলেন, আমাকে হত্যা করার উদ্দেশে হামলা করা হয়েছে। আপনারা ফুটেজ দেখেছেন। যারা মেরেছে তাদের চেহারা দেখেছি। আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। সবার বিরুদ্ধে মামলা হবে।
হিরো আলম বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগেই তাদের পাওয়ার বেড়ে গেছে। বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগেই তাদের লোকজন আমাকে মারধর শুরু করেছে।
‘বিএনপি এখনো ক্ষমতা পায়নি। তার আগেই দেশজুড়ে অরাজকতা শুরু করেছে। আমরা আন্দোলন করে এক স্বৈরশাসক তাড়িয়েছি কি আর এক স্বৈরশাসককে ক্ষমতায় আনার জন্য?,’ বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন হিরো আলম।
বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল বাছেদ বলেন, হিরো আলম মামলা করতে এসেছিলেন সরকারি লোকজন ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বিএনপির লোকজনের তাকে মারধর না করে বরং খুশি হওয়ার কথা। বিএনপির কোন লোকজন তাকে মেরেছে, কারো নাম বলতে পারবেন তিনি? আসলে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য এই অভিযোগ এনেছেন।
বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রহিম রানা বলেন, হিরো আলম মামলা করতে এসে আদালতে মারধরের শিকার হয়েছেন, এটা আমরা শুনেছি। কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ আমাদের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ দেয়নি।
রোববার দুপুরে হিরো আলম ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রচারণার সময় মারধর ও ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি একই আসনে উপ-নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ওবায়দুল কাদের, বগুড়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল করিম তানসেন ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ ৩৯ জনকে আসামি করা হয়।
উপনির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান হিরো আলম। ওই উপনির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকায় সমাবেশে মন্তব্য করেছিলেন, ‘হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে।’
এ ব্যাপারে বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা বলেন, ‘হিরো আলমকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা দেখেছি। তাকে যারা মারধর করেছে তারা বিএনপির কেউ নন। বিএনপির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।’