:: জবি প্রতিনিধি ::
শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের প্রভাষক আবু শাহেদ ইমনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
একই অভিযোগে শিক্ষার্থীকে অসহযোগিতা করায় বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জুনায়েদ হালিমকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বিকেলে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
উপাচার্য বলেন, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের দেওয়া রিপোর্টে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতন প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ সিন্ডিকেট এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দায়ের করা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমি এখানে উপাচার্য হয়ে আসার পর আরেকটি তদন্ত বোর্ড গঠন করে দিয়েছি। আশা করি খুব শিগগিরই সেই রিপোর্ট আমরা হাতে পাবো।
তিনি আরো বলেন, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের সাময়িক বহিষ্কার আদেশ নিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনার যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সে বিষয়েও সম্মানিত সিন্ডিকেট সদস্যদের অবহিত করা হয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে একই বিভাগের ছাত্রী কাজী ফারজানা মীম যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলে। এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ডিবি কার্যালয় ও রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় চেয়ারম্যান হালিমসহ মূল অভিযুক্ত শিক্ষক ইমনকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল।
যৌন নিপীড়নের অভিযোগের বিচার চেয়ে তিনি ২০২০ সাল থেকে ঘুরছেন। এরপর তাঁকে পরীক্ষায় অকৃতকার্য করা হয়েছে। একটি পরীক্ষায় তিনি ৪০–এ শূন্য পান। তিনি বলেন, ‘যে ম্যাডাম পরীক্ষায় শূন্য দিয়েছেন, তিনি ওই স্যারের বন্ধু ছিলেন।’
বিচার চাওয়ার কারণে ওই ম্যাডামের একটি ও বিভাগীয় প্রধানের দুটি বিষয়ে তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী।
ওইদিন (২০ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদের কার্যালয়ে অভিযোগের ব্যাপারে অভিযোগকারী ছাত্রী ও অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
গত সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে এসে ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন। অভিযোগ দেওয়া শেষে বিকেলে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিভাগের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন আমাকে যৌন হেনস্তা করেছেন। এই অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম ও অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। এতে আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে হাত-পা কেটে হত্যা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমাকে এক ঘরে করে দেওয়া হয়। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় শূন্য নম্বর দিয়ে ফেল করানো হয়। আমার অনার্সের ফাইনাল ভাইভায় আমাকে ফেল করানো হয়।
২০২১ সালে আবু শাহেদ ইমন তাকে যৌন হেনস্তা করেন। এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলে তার জীবনে নেমে আসে নানা নির্যাতনের খড়্গ। সম্প্রতি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় যৌন হয়রানি ও নানা নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই শিক্ষার্থী সোচ্চার হন। সেখানেই অবন্তিকার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে নিজের প্রসঙ্গও আসে। গণমাধ্যমে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেলেন জবি শিক্ষার্থী মীম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের সম্পূরক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও বিভাগটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ আহমদ হালিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ফলে পরীক্ষায় বসতে পারবেন যৌন নিপীড়ন ও পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলা শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীম।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্নাতক ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের যে সকল শিক্ষার্থী বিভিন্ন সেমিস্টারে যে কয়টি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের ২৩ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে সেসব বিষয়ে সম্পূরক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বিভাগে আবেদন করতে হবে।
সাংবাদিকদের কক্ষ থেকে বের করে দিলেন জবি উপাচার্য
শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্যের কনফারেন্স কক্ষে প্রবেশ করায় সাংবাদিকদের ধমক দিয়ে কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অবন্তিকার আত্মহত্যায় দায়ীদের বিচার চেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কনফারেন্স কক্ষে স্মারকলিপি দিতে যান। সেসময় সংবাদ সংগ্রহ করতে সাংবাদিকরাও সেখানে ঢুকে পড়লে এমন কাণ্ড ঘটান উপাচার্য।
এ বিষয়ে প্রক্টর বলছেন, সাংবাদিকদের সেখানে আগেই না যেতে বলা হয়েছিল।
কনফারেন্স কক্ষে ঢুকে সাংবাদিকদের দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘আপনারা এখানে কেন? এখানে তো শুধু শিক্ষার্থীরা থাকবে। আপনাদের সঙ্গে আমার কথা নেই। গণমাধ্যম বের হলে আমি প্রবেশ করব।’
এ সময় আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা কেন গণমাধ্যম নিয়ে আসছ? আমি কথা বলব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। গণমাধ্যমকে আমি এখানে ডাকিনি।’
এরপর সাংবাদিকরা সেখান থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন, জাতীয় দৈনিকসহ অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন, উপাচার্য সুন্দর করে বিষয়টা বলতে পারতেন। পরে উপাচার্যের বক্তব্য বয়কটের ঘোষণা দেন সাংবাদিকরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন নাগরিক নিউজকে বলেন, ‘তখন গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ বোর্ড চলছিল। বিষয়টি খুবই গোপনীয়। আমি আগেই সাংবাদিকদের অনুরোধ করেছিলাম, আগেই ওপরে না যেতে। সময় হলে আমি তাদের ডেকে পাঠাব বলেছিলাম। কিন্তু তারা সেটা না রেখেই উপাচার্যের কনফারেন্স কক্ষে প্রবেশ করেন। পরে আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছি।’