:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::
বিশ্বকাপে টানা ১৪ হারের পর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৯ রানের ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়েছে আফগানিস্তান। বিশ্বকাপ শুরুর ১১তম দিনে প্রথম অঘটন দেখল ক্রীড়াপ্রেমীরা।
আজ দিল্লিতে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার আগে আফগানিস্তান বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলেছে ১৭টি। তার মধ্যে ১৬টিতেই হার। একমাত্র জয়টি সেই ২০১৫ আসরে। বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে।
আগে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও মিডল অর্ডার ব্যাটার ইকরাম আলী খিলের ফিফটিতে ২৮৪ রানের লড়াকু পুঁজি পায় আফগানরা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র মুজিব, রশিদ, নবির স্পিনে ৪০.৩ ওভারে ২১৫ রানে গুটিয়ে যায় ইংলিশরা।
ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান ভালো শুরু পায়। এক প্রান্ত দিয়ে রহমানুল্লাহ গুরবাজের ঝড়ে ১১৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় তারা। তরুণ ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ২৮ রান করে আউট হন। পরপরই আউট হন রহমত শাহ। এরপর দলের ১২২ রানে গুরবাজকে হারায় আফগানরা। তরুণ ওপেনার ৫৭ বলে ৮০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। তার ব্যাট থেকে আটটি চার ও চারটি ছক্কার শট আসে।
দ্রুত উইকেট হারানোর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন হাসমতউল্লাহ শাহেদি (১৪), আজমতউল্লাহ ওমরজাই (১৯) ও মোহাম্মদ নবী (৯)। তবে নাজিব জাদরানের জায়গায় সুযোগ পাওয়া ইকরাম আলী খিল ৬৬ বলে ৫৮ রানের ভালো এক ইনিংস খেলেন। তিনটি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকান তিনি। শেষ দিকে রশিদ খান ২৩ ও মুজিব উর রহমান ২৮ রানের ইনিংস খেলে দলকে লড়াই করার পুঁজি এনে দেন।
জবাব দিতে নেমে শুরু থেকে নিয়মিত উইকেট হারিয়ে হারের লজ্জায় ডুবেছে ইংল্যান্ড। দলটির হয়ে ওপেনার ডেভিড মালান ৩২ রানের ইনিংস খেলেন। চারে নামা হ্যারি ব্রুক ৬১ বলে সাতটি চার ও এক ছক্কায় ৬৬ রানের ইনিংস খেলে এক প্রান্ত আগলে রাখেন। কিন্তু জনি বেয়ারস্টো (২), জো রুটের (১১) পর জস বাটলার (৯), লিয়াম লিভিংস্টোন (১০) ও স্যাম কারেন (১০) ফিরলে হার নিশ্চিত হয়ে যায় ইংল্যান্ডের। শেষে আদিল রশিদ (২০), মার্ক উড (১৮) ও রিস টপলি (১৫) ছোট ছোট ইনিংস খেললে হারের ব্যবধান ছোট হয় ইংলিশদের।
আফগানিস্তানের হয়ে এই ম্যাচে স্পিনার রশিদ খান ৩৭ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। মুজিব উর রহমান ৫১ রানে ৩ উইকেট নিলেও ম্যাচ সেরা হয়েছেন তিনি। অন্য স্পিনার মোহাম্মদ নবী নিয়েছেন ২ উইকেট। ইংল্যান্ডের হয়ে আদিল রশিদ ৩টি ও মার্ক উড নেন ২ উইকেট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আফগানদের এটি প্রথম জয়। এই হারে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের সেরা চারে যাওয়ার সমীকরণ কঠিন হলো।
আফগানদের বিপক্ষে ইংলিশ ব্যাটারদের এমন আত্মসমর্পণ দেখে মাইকেল ভনের টুইট, ‘ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্স দেখে ২০১৫, ২০১১, ২০০৭, ২০০৩, ১৯৯৯ ও ১৯৯৬ বিশ্বকাপের অনুভূতি হচ্ছে।’
দলের হয়ে ৫১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন মুজিব উর রহমান। ম্যাচ শেষে তিনি বলেছেন, এটা দলের জন্য গর্বের মুহূর্ত।
মুজিব বলেছেন, ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারানো আমাদের জন্য খুব গর্ব করার মতো মুহূর্ত। পুরো দলের জন্য এটা বড় অর্জন। আমরা অনেক বড় দলকে হারিয়েছে। এই দিনটির জন্য আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি।’
ব্যাটিং-বোলিং দুই প্রান্তে ভালো পারফরম্যান্স হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন মুজিব। ম্যাচ সেরা হয়ে খুশি মুজিব জানিয়েছেন, পাওয়ার প্লেতে স্পিনার হয়ে তার জন্য বোলিং করা কঠিন। কাজটা তিনি ঠিকঠাক করতে পেরে খুশি।
এছাড়া ম্যাচ সেরার পুরস্কার আফগানিস্তানের ভূমিকম্পে হতাহতদের উৎসর্গ করেছেন মুজিব, ‘পরে শিশিরের প্রভাব পড়তে পারে বলে আমি পাওয়ার প্লেতে বোলিং করতে চেয়েছিলাম। ব্যাটিংয়ে অবদান রাখতে পেরে খুশি। আমার এই ম্যাচ সেরার পুরস্কার ভূমিকম্পে হতাহতদের জন্য। এই জয়টাই তাদের জন্য।’
ইংল্যান্ডের এই হারকে আফগান ক্রিকেটের সেরা বলে মন্তব্য করেছেন অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদি।
ম্যাচ শেষে সম্প্রচার মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘আমি খুব খুশি, সতীর্থরা সকলেই খুশি। এটা আমাদের সেরা জয়, এই জয়ের আত্মবিশ্বাস পরবর্তী ম্যাচেও থাকবে। আমি দলের জন্য খুবই গর্বিত।’
আফগানদের হয়ে ৫৭ বলে ৮০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন মুজিব উর ও রশিদ খান। এছাড়া নাজিব জাদরানের জায়গায় খেলতে নেমে ফিফটি করেছেন ইকরাম আলী খিল। তাদের প্রশংসা করেছেন অধিনায়ক শাহিদি।
তিনি বলেছেন, ‘ওপেনাররা খুব ভালো শুরু দিয়েছিলেন, বিশেষ করে গুবরাজ। ইকরাম অনেক দিন দলের সঙ্গে আছে। কিন্তু সেভাবে সুযোগ পায়নি। এই ম্যাচে সে ভালো করবে এই বিশ্বাস আমার ছিল। সেজন্যই তাকে একাদশে নেওয়া।’
রশিদ-মুজিবকে নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ফজল খুব ভালো শুরু এনে দিয়েছিল। যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্পিনারদের ওপর আমাদের বিশ্বাস ছিল। আমি ড্রেসিংরুমে বলেছিলাম, জয়ের জন্য ২৮০-৯০ রান হলেই যথেষ্ঠ। এটা টুর্নামেন্টে আমাদের প্রথম জয়, আমরা আরও কিছু জয়ের প্রত্যাশা করে আছি।’