পৃথিবীতে এরকম জায়গা কি আছে যেখানে মানুষের যাওয়া নিষেধ। লুকানো আস্তানার মত পৃথিবীর মোট পাঁচটি গোপন এবং নিষিদ্ধ জায়গার কথা তুলে ধরা হলো।
জেনে নিন পৃথিবীর পাঁচটি গোপন ও নিষিদ্ধ জায়গা সম্পর্কে।
১. সাল্ভার্ড গ্লোবাল সিড ভল্ট, নরওয়ে (Svalbard Global Seed Vault, Norway)
এমন একটি পৃথিবীর কথা কল্পনা করুন যেখানে ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটছে অবিরত। দুর্যোগের আক্রোশে পৃথিবী বদলে গেছে, মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে, পৃথিবীর কাঠামো দুমড়ে মুচড়ে গেছে। নেই কোনো শস্য, নেই কোনো খাবার। বেঁচে আছে শুধু একজন, তার লক্ষ্য হচ্ছে – নতুন করে আবার পৃথিবীকে সাজানো।
অবস্থা যখন হলিউডের সিনেমার অতি রহস্যময় কাহিনীর মত তখন, নায়ক যাবে কোথায়? নায়ককে খেয়ে বাঁচতে থাকতে হলে এবং মানবজাতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে, শেষ সম্বল হিসেবে যেতে হবে নরওয়ের সাল্ভার্ড গ্লোবাল সিড ভল্টে।
জায়গাটি নরওয়ের উত্তর মেরুর বরফ দ্বীপ স্পিটসবার্গেনের ১২০ কিমি ভেতরে স্যান্ডস্টোন পাহাড়ে অবস্থিত। উত্তর মেরু থেকে ১৩শ’ কিমি দূরত্বে অবস্থিত এই সাল্ভার্ড গ্লোবাল সিড ভল্ট প্রবল নিরাপত্তাবেষ্টিত সুরক্ষিত একটি জায়গা।
২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জায়গাটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে যদি পৃথিবীর সব উলট পালট হয়ে যায় সেজন্য আগে থেকেই এখানে পৃথিবীর শস্যাদি সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। বিশেষ কায়দায় তৈরি প্যাকেটে করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পৃথিবীর ২৫০ কোটি শস্য বীজ এখানে সংরক্ষিত রাখা আছে। যাতে দরকারে যে কোনো ধরনের বীজ তারা সরবরাহ করতে পারে।
বিজ্ঞানীদের জায়গাটি ব্যবহারের পেছনে কারণ আছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই দ্বীপ পুরোটাই বরফ আচ্ছাদিত। এখানকার পরিবেশ বীজ সংরক্ষণের জন্য আদর্শ একটি জায়গা। এমনকি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বরফ গলে যাওয়ার হাত থেকেও জায়গাটি নিরাপদ। এখানে শস্য বীজ হাজার বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে।
কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত গবেষক এবং উদ্ভিত প্রজননবিদ না হলে এই ভল্টের ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।
২. বিচ্ছিন্ন নিহাউ দ্বীপ, হাওয়াই (Ni’ihau, Hawaii)
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের একটি অতি ক্ষুদ্র এবং গাছপালা পরিবেষ্টিত গ্রীষ্মকালীন দ্বীপ হচ্ছে নিহাউ দ্বীপ। এখানে রয়েছে সারি সারি পাম গাছ। কিন্তু অল্প কয়েকজন মাত্র স্থানীয় মানুষ। এই জায়াগাটা হওয়ার কথা ছিল পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য আদর্শ একটা জায়গা। কিন্তু তা হয়নি। কারণ ১৮০ বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপটি বহিরাগতদের জন্য নিষিদ্ধ।
দ্বীপটি আমেরিকার নামকরা রবিনসন পরিবারের কাছে ১৮৬৩ সালে বিক্রি করে দেন হাওয়াইয়ের রাজা কামিহামিহা। ১৯১৫ সাল থেকে দ্বীপে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপের জীবনযাত্রা একটু অস্বাভাবিক। মোটামুটি ১৩০ জন হাওয়াই আদিবাসী বাস করেন। এদের বাহন হচ্ছে ঘোড়া এবং সাইকেল। বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল থেকে। দ্বীপে কোনো খাওয়ার পানি নেই। পানি এবং অন্যান্য রসদ আসে পার্শ্ববর্তী আরেকটি দ্বীপ থেকে। নিহাউ দ্বীপের ছেলেমেয়েরা ডিঙ্গি নৌকা করে সপ্তাহে একদিন পাশের দ্বীপ কাউয়াইতে যায় স্কুলে পড়াশোনার জন্য।
ছোট হলেও ইতিহাসে এই দ্বীপের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পার্ল হারবার হামলার পরে ১৯৪১ সালে জাপানি এক পাইলট বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এই দ্বীপে গিয়ে পড়ে এবং এক সপ্তাহ ধরে দ্বীপের অধিবাসীদের আতঙ্কের মধ্যে রাখে। ১৯৪৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ঠিক করেছিলেন জাতিসংঘের সদর দপ্তর করবেন এই দ্বীপে।
বর্তমানে দ্বীপটি জনসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ। কোস্ট গার্ড কড়া পাহারায় রখে দ্বীপের চারপাশ। তবে অনেক উৎসাহী পর্যটকের জন্য লুকিয়ে চুরিয়ে এক ঝলক দ্বীপটিকে দেখে নেয়ার একটা পন্থা হয়তো রয়েছে।
৩. রয়্যাল এয়ারফোর্স মেনউইথ হিল, ইংল্যান্ড (Royal Air Force Menwith Hill, England)
যদি জেমস বন্ডের কোনো গোপন আস্তানা থাকে তাহলে এটা সেইটা। ইংল্যান্ডের নিউ ইয়র্কশায়ারের এই বিমান ঘাঁটিতে নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের জন্য এই ঘাঁটি থেকে অবিরত খোঁজ খবর করা হচ্ছে গোপন সব তথ্যের।
১৯৫৪ সালে এই টপ সিক্রেট ঘাঁটিটি তৈরি করা হয়েছিল স্নায়ু যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নজরদারি করার জন্য। তবে কেউ জানেনা এখন ঘাঁটিটি কি কাজে ব্যবহার করা হয়। ধারণা করা হয় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস এবং মাদক পাচারের উপরে তদন্ত হয় এখানে। তাছাড়া মার্কিন স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবেও নাকি ব্যবহার করা হয় দ্বীপটি।
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য নিয়ে তৈরি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ‘এছেলন’ও এই ঘাঁটির সাথে জড়িত।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই এই ঘাঁটি ঘুরে দেখার উপায় নেই। একমাত্র এনএসএ সদস্যরা ভেতরে ঢোকার অনুমতি পায়।
৪. সিক্রেট আর্কাইভ, ভ্যাটিকান সিটি (Vatican Secret Archives, Vatican)
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যক্তিগত পাঠাগার সম্ভবত ভ্যাটিকান সিক্রেট আর্কাইভ। এখানে অষ্টম শতাব্দী থেকে এখন পর্যন্ত সমস্ত পোপদের ব্যক্তিগত নথিপত্র সংরক্ষিত রয়েছে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে তালা দিয়ে রাখা হয় তথ্যগুলো।
ভেতরে সাধারণ কারো প্রবেশ নিষেধ। একমাত্র গবেষক এবং জ্ঞানী-গুণীরাই ঢুকতে পারেন অনুমতি নিয়ে। তবে তাদেরকেও জটিল পদ্ধতির ভেতর দিয়ে অনুমতি দেয়া হয়।
পাঠাগারটি পোপের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পাঠাগারের ভেতরে প্রায় ৮৫ কিমি ব্যাপী দীর্ঘ তাক রয়েছে, যেখানে ৩৫ হাজার ভলিউম নথি রয়েছে।
৫. এরিয়া ৫১, নেভাডা (Area 51, Nevada)
কথায় আছে, লাস ভেগাসে যা ঘটে সেটা ভেগাসেই থেকে যায়, বাইরে বেরুতে পারে না। এই কথা লাস ভেগাসের ৮০ কিমি উত্তরে অবস্থিত একটি গোপন জায়গার ক্ষেত্রেও খাটে বলা যেতে পারে।
জায়গার নাম এরিয়া- ৫১। নামটি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় সিআইএ নথিতে। এখানে একটি সামরিক বিমান ঘাঁটি রয়েছে। বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত গোপন জিনিসের মজুদ করা হয় এখানে।
তবে ওখানে ঠিক কি আছে বা কি করা হয়, সে ব্যপারে সিআইএ নির্দিষ্ট করে কিছু বলে নি। যে কারণে এই জায়গা নিয়ে মানুষের মুখে মুখে রটেছে নানান গুজব। তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র। এমনো বলা হয় যে, এখানে নাকি ভিনগ্রহবাসীর মৃতদেহও সংরক্ষিত রয়েছে।
সত্যটা হচ্ছে, আমরা কখনোই নিশ্চিত হয়ে জানতে পারবো না। এই এলাকার সবকিছুই করা হয় তীব্র গোপনীয়তায়। বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ। যদিও অনেকেই এখন পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন।