:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
মানবজাতির বিবর্তনের জিনতত্ত্ব আবিষ্কারের জন্য এ বছর চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সুইডেনের বিজ্ঞানী সান্তে প্যাবো।
সোমবার সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এটিই এ বছরে ঘোষণা দেওয়া প্রথম নোবেল পুরস্কার।
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে বাংলাদেশে সময় সোমবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে নোবেল কমিটি এই ঘোষণা দেয়। নোবেল কমিটির প্রধান থমাস পার্লম্যান টেলিফোনে এবারের নোবেল বিজয়ীকে এই সুখবর জানান। এই ঘোষণার আগে চিকিৎসায় নোবেলের জন্য মনোনীত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান বা সংক্ষিপ্ত তালিকা সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। বরাবরের মতোই সব নথিপত্র অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে রেখে তা জনসাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা হয়।
গত বছর চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছিলেন ডেভিড জুলিয়াস এবং আর্ডেম প্যাটাপৌসিয়ান। ডেভিড জুলিয়াস চিকিৎসা শাস্ত্রের শরীরতত্ত্ব এবং আর্ডেম প্যাটাপৌসিয়ান মেডিসিনের ওপর এই পুরস্কার পেলেন। তাপমাত্রা এবং স্পর্শের রিসিপটর আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তারা। তার আগের বছর চিকিৎসায় তিনজন বিজ্ঞানীকে নোবেল দেওয়া হয়েছিল।
এ বছর নোবেল ফাউন্ডেশন ২০২২ সালের বিজয়ীদের সঙ্গে ২০২০ ও ২০২১ সালের বিজয়ীদেরও আগামী ডিসেম্বরে সুইডেনের স্টকহোমে নোবেল সপ্তাহে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আগামী মঙ্গলবার ঘোষণা করা হবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীর নাম। পরের দিন ঘোষণা করে হবে রসায়নে নোবেল বিজয়ীর নাম। এরপর যথাক্রমে ৬ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে সাহিত্যে ও ৭ অক্টোবর শান্তিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম। মাঝে শনি ও রোববার বিরতি দিয়ে আগামী সোমবার শেষদিন ঘোষণা করা হবে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীর নাম।
সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে নোবেল কমিটি বলেছে, ‘মানুষ সব সময়েই তার শেকড়ের সন্ধান করছে। আমরা কোথা থেকে এসেছি এবং আমাদের আগে যারা এসেছিল তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী? হোমিনিন থেকে মানুষের বর্তমান প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্স কীভাবে আলাদা? তাৎপর্যপূর্ণ গবেষণার মাধ্যমে সান্তে প্যাবো আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব কিছু উদ্ঘাটন করেছেন। তিনি বর্তমান সময়ের মানুষের বিলুপ্ত নিকটাত্মীয় নিয়ান্ডারথালের জিন মানচিত্র তৈরি করেছেন। তিনি আমাদের অজানা হোমিনিন ডেনিসোভার অস্তিত্বও আবিষ্কার করেছেন।’
বিজ্ঞপ্তিতে নোবেল কমিটি লিখেছে, ‘প্যাবো এটিও দেখিয়েছেন, প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে অভিবাসনের পর এই বিলুপ্ত হোমিনিন থেকে হোমোস্যাপিয়েন্সে জিনগত স্থানান্তর ঘটে। বর্তমান সময়ের মানুষের কাছে সেই জিনের শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজনীয়তা এখনও থেকে গেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনো সংক্রমণের ক্ষেত্রে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তাতে এসব জিনের প্রভাব রয়েছে।’
এতে বলা হয়েছে, ‘প্যাবোর মূল গবেষণাটি প্যালিওজেনমিক্স নামে একটি সম্পূর্ণ নতুন বৈজ্ঞানিক ধারার জন্ম দিয়েছে। যে জিনগত পার্থক্যগুলো বর্তমান মানুষকে বিলুপ্ত হোমিনিন থেকে আলাদা করে তার গবেষণা সেগুলো উন্মোচিত করেছে। তার আবিষ্কার আমাদের মনুষ্যপ্রজাতির অনন্য হয়ে ওঠার কারণ খোঁজার ভিত্তি দিয়েছে।’
১৯৫৫ সালের ২০ এপ্রিল সুইডেনের স্টকহোমে জন্ম নেন প্যাবো। তার বাবা-মা দুজনই ছিলেন বিজ্ঞানী। মা এস্তোনিয়ান বংশোদ্ভূত কারিনা প্যাবো ছিলেন একজন কেমিস্ট। অন্যদিকে সান্তের বাবা সুনে বার্গস্ট্রম ছিলেন একজন বায়োকেমিস্ট। ১৯৮২ সালে তিনি বেঙট স্যামুয়েলসেন ও জন আর ভেইনের সঙ্গে যৌথভাবে চিকিৎসায় নোবেল পান।
১৯৮৬ সালে সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএচডি ডিগ্রি অর্জন করেন সান্তে প্যাবো। তার গবেষণার মূল বিষয় ছিল কীভাবে অ্যাডেনোভাইরাসের ই-নাইন্টিন (E19) প্রোটিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে পরিচালিত করে। প্যাবো তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় নিয়ান্ডার্থাল মানুষের জিন নিয়ে গবেষণা করেছেন।
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বর মাসে প্যাবোর পুরস্কারের পদক, সনদ ও অর্থ হাতে তুলে দেওয়া হবে।
প্রতি বছর শান্তি, সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা ও অর্থনীতি- এই ৬ বিষয়ে যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন; তাদের পুরস্কার প্রদান করে সুইডেনভিত্তিক নোবেল ফাউন্ডেশন। পুরস্কার প্রদানের পর তা উদযাপনে উৎসবের আয়োজন করে নোবেল কমিটি। নোবেল কমিটির সদর দফতর নরওয়েতে।
উনবিংশ শতাব্দিতে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল আবিষ্কার করেছিলেন ডিনামাইট নামের ব্যাপক বিধ্বংসী বিস্ফোরক; যা তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পত্তির মালিক করে তোলে। মৃত্যুর আগে তিনি ৩ কোটি ১০ লাখ ক্রোনার রেখে গিয়েছিলেন, আজকের বাজারে যা প্রায় ১৮০ কোটি ক্রোনের সমান। আলফ্রেড নোবেলের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের গোড়াপত্তন ঘটে। ১৯৬৮ সালে এই তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি।