:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ৫ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে।
রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্পের খবর পাওয়া গেছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ৮ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর-পূর্বে; গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।
জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেসের (জিএফজেড) বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৮।
এদিকে, অ্যান্ড্রয়েড আর্থকোয়াক অ্যালার্ট সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী, মাত্রা ছিল ৫.২।
এ সময় ঢাকায় ভূমিকম্প আতঙ্কে অনেকেই রাস্তায় নেমে আসেন।
ইউএসজিএসের তথ্যমতে, ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ঢাকা উত্তর-পশ্চিমে ৮৪ কিমি দূরে অবস্থিত; ফলে এখানে তীব্রতা ছিল তুলনামূলক কম। এ ধরনের তীব্রতায় সাধারণত হালকা কাঁপুনি অনুভূত হয় এবং ক্ষয়ক্ষতির তেমন সম্ভাবনা থাকেনা। কেন্দ্রস্থল থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্বে ১২৮ কিমি দূরে অবস্থিত। ফলে এখানে তীব্রতা ছিল আরও কম।
আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে কলকাতাতেও। এছাড়া, উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলিতেও আজ সকালে ভূমিকম্প টের পাওয়া গেছে। ভূমিকম্প হয়েছে ত্রিপুরা, মিজোরামের বেশ কিছু এলাকায়।
উল্লেখ্য, গত ২ অক্টোবর সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টা ৪৬ মিনিটে বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রেসুবেলপাড়া থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়াও নেপাল, ভুটান এবং চীনেও এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
বাংলাদেশে এ বছর প্রথম ভূকম্পন অনুভূত হয় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের পাশাপাশি কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলাও। ৩ দশমিক ৯ মাত্রার এ ভূমিকম্পে জানমালের তেমন ক্ষতি হয়নি।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে মাঝারি মাত্রার জোড়া ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশটির আয়াবতি ও রাখাইন রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের কক্সবাজারেও ভূকম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১।
চট্টগ্রামে গত ৩০ এপ্রিল ৪ দশমিক ৬ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়।
গত ৫ মে রাজধানীতে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। শুক্রবার সকাল ৫টা ৫৭ মিনিট ৮ সেকেন্ডে রাজধানীতে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
গত ৫ জুন ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে বঙ্গোপসাগরে। এদিন সকালে বঙ্গোপসাগরে ৩ দশমিক ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে।
গত ১৬ জুন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূকম্পন অনুভূত হয়। ঢাকা ছাড়াও সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ থেকে ভূকম্পনের তথ্য আসে। রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫।
গত ১৪ আগস্ট সিলেটে ফের ৫ দশিমক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। একই সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জেলায়ও এটি অনুভূত হয়।
ঠিক ১৬ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৯ আগস্ট সিলেট মহানগরীর আশপাশে ফের মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৫।
এদিকে গত সেপ্টেম্বরেই তিনবার দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে গত ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৪ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প আঘাত হানে। আসামে আঘাত হানা ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের সিলেট জেলাও।
গত ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত।
এ ছাড়া ৯ সেপ্টেম্বর আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসামের কাছাড় এলাকা।
১৭ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলে ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলে। ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫ কিলোমিটার নিচে।
ভূমিকম্পে ঢাবির হলে খসে পড়ল পলেস্তারা
রাজধানী ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের বিভিন্ন স্থানে খসে পড়েছে পলেস্তারা, ভেঙে পড়েছে পাঠকক্ষের দরজার গ্লাস। এতে কোনো শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি তবে যে কোনো মুহূর্তে বড় দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকাল ৯ টা ৩৫ মিনিটে ৫.৬ রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে।
৬০ বছরের পুরনো এই হলে প্রায়ই ইট-সিমেন্টের পলেস্তারা খসে পড়ে। ছাদের ঢালাইয়ের ভেতরে থাকা রডও এখন বাইর থেকে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েক স্থানে। অতীতে সিলিংয়ে লাগানো ফ্যানও হঠাৎ খুলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে হলে। ভবনের ছাদ থেকে বড় আকারের এই পলেস্তারার টুকরা খসে পড়ায় শিক্ষার্থীরা যে কোনো সময় জখম হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ভূমিকম্প আতঙ্কে জানালা দিয়ে লাফ, আহত ঢাবি ছাত্র
ভূমিকম্প আতঙ্কে হলের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে মাস্টারদা সূর্য সেন হলের দোতলা থেকে লাফ দেন মিনহাজুর রহমান। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র মিনহাজুর ওই হলের ২৩৩ নম্বর কক্ষের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়েন। পড়ে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ভূমিকম্প আতংকে হুড়োহুড়িতে চৌদ্দগ্রামে শতাধিক পোশাক শ্রমিক আহত
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে ভবন থেকে নামতে গিয়ে হুড়োহুড়িতে শতাধিক পোশাক শ্রমিক পদপিষ্ট হয়ে আহত হয়েছেন। তিন শ্রমিককে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার ছুপুয়া এলাকায় আমির শার্ট লিমিটেডের কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত রোগী, প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এসময় উপজেলার ছুপুয়া এলাকায় অবস্থিত আমির শার্ট লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে ও উপর থেকে লাফ দিয়ে কমপক্ষে শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। এসময় পোশাক কারখানাটির মূল ফটক তালাবদ্ধ থাকার কারণে কেউ বেরিয়ে আসতে পারেনি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
ভূমিকম্পে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন হলে ফাটল
ভূমিকম্পের কারণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ছেলেদের ২টি ও মেয়েদের একটি হলে ফাটলের দেখা দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া, মেয়েদের শেখ হাসিনা হলের রিডিং রুমেও হালকা ফাটল দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, বঙ্গবন্ধু হলের পাঁচতলার দক্ষিণ পাশের ব্লকের ৫০৪ নম্বর কক্ষের সামনের করিডোরের মেঝের দুটি টাইলস উঠে গেছে।
একই তলায় নতুন ও পুরাতন ব্লকের সংযোগস্থলের করিডরে ফাটল দেখা গেছে। পাশাপাশি দক্ষিণ ২০৪ ও ২০৫ নং কক্ষের মাঝের সংযোগস্থলে পুরো পাঁচতলাব্যাপী ফাটল লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া ২০৯ নং কক্ষেও ফাটল দেখা যায়।
এছাড়া নজরুল হলের দোতালার ২০৭ নম্বর কক্ষের দেয়ালে, টিভি রুমের সামনের পিলারের সংযোগস্থলে নতুন ফাটল দেখা গেছে। ফয়জুন্নেছা হলের পাঁচতলার ৫১১ নম্বর কক্ষে, ৫০৩ নম্বর কক্ষ এবং চারতলার ৪০৩ নম্বর সামনের করিডরে ফাটল দেখা গেছে।