:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
মরক্কোর মধ্যাঞ্চলে ৬.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রাণহানি বেড়ে ২১২২ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪২১ জনে।
দেশটির সেনাবাহিনী ও উদ্ধারকারীরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পার্বত্য গ্রামগুলোতে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছেন। দুর্গম হওয়ায় অনেক এলাকায় পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। অনেক স্থানে ভবনের ধ্বংসস্তূপে এখনো অনেক মানুষ আটকা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
রেডক্রস বলছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠনে কয়েক বছর সময় লাগবে। মৃতের প্রকৃত সংখ্যা এখনো জানা যাচ্ছে না।
ভয়াবহ এই ভূমিকম্প ও হতাহতের ঘটনায় রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ দেশটিতে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন এবং বেঁচে যাওয়াদের আশ্রয়, খাবার ও অন্যান্য সাহায্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মারাকেশ শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে। স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১১ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন।
এছাড়া ভূমিকম্পটির ১৯ মিনিট পর আবারও ৪ দশমিক ৯ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বেশ কিছু গ্রাম পুরোপুরি সমতল হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, দেশটির আল হাউজ প্রদেশে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, আর এর পরে রয়েছে তারউদান্ত প্রদেশ। মারাকেশে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম, যদিও ইউনেস্কো-সুরক্ষিত পুরোনো এই শহরটিও ভূমিকম্পে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
ইউএসজিএস বলছে, ১৯৬০ সালের পর শুক্রবার এই ভূমিকম্প দেশটিতে সবচেয়ে প্রাণঘাতী। ওই বছর দেশটিতে শক্তিশালী এক ভূকম্পনে কমপক্ষে ১২ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তবে শুক্রবারের ভূমিকম্পটি মরক্কোতে গত এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল।
ভূমিকম্পের ফলে বিপুল পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বিশেষ করে কাদামাটি এবং পাথরের তৈরি ঘরগুলোর অধিকাংশই বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এসব বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচে বিপুল পরিমাণ মানুষ আটকা পড়েছে। স্থানীয়রা খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শোকার্ত স্বজনদের হাহাকারে ভারী হয়ে উঠেছে মারাকেশের আকাশ-বাতাস।
মরক্কোর এই ভূমিকম্পে বিপুল পরিমাণ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর বিপুল পরিমাণ মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও থেকে দেখা গেছে, মারাকেশের বিপুল পরিমাণ মানুষ আশ্রয়ের জন্য দিগ্বিদিক ছুটছে। কিন্তু নির্ধারিত কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় গতকাল শনিবার দিবাগত রাতেও বিপুল পরিমাণ মানুষ খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটায়।
জাতিসংঘ বলেছে, তারা মরক্কো সরকারকে উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত। এছাড়া স্পেন, ফ্রান্স এবং ইসরায়েলসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে একই ধরনের প্রতিশ্রুতি এসেছে।