:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ১০৫ কেন্দ্রে তিনি ৫০ হাজার ৩১০ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। মাত্র ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন রিফাত।
মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।
তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ১০১টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণার পর দেখা যায় মনিরুল হক সাক্কু ৬ শতাধিক ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ফল ঘোষণা। ফলাফল ঘোষণার কেন্দ্রে তখন দুই প্রার্থীর সমর্থকেরাই বিজয় মিছিল করতে থাকেন এবং নিজ নিজ প্রার্থীর জয় হয়েছে বলে দাবি করতে থাকেন।
এসময় হলজুড়ে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, দেখা দেয় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলেন না।
তবে শেষ পর্যন্ত প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
এরপর খুব দ্রুত চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। অল্প সময়ের ওই ঘোষণায় একবারেই ১০৫ কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করে দেন তিনি। সেখানে কেবল প্রার্থীদের চূড়ান্ত ভোট সংখ্যা এবং ব্যবধান উল্লেখ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরপর তিনি নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বলে ঘোষণা করেন।
বুধবার সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল ৪টায়। উৎসবমুখর পরিবেশেই স্থানীয় সরকারের এই ধাপের নির্বাচন হয়েছে। দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে কেন্দ্রভিত্তিক ফল ঘোষণা শুরু হয়। এই নির্বাচনে মোট কেন্দ্র সংখ্যা ১০৫টি, ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা আগেই জানিয়েছিল প্রশাসন। নির্বাচনে ১০৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৭৫টি তল্লাশিচৌকি, ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৩০টি টিম, ৫২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন। পুলিশের ৩ হাজার ৬০৮ জন সদস্য নির্বাচনের মাঠে দায়িত্ব পালন করেন।
ভোটগ্রহণ শেষে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে বলেন, এ নির্বাচনে প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা তিনি পাননি। বেশকিছু ভোটকেন্দ্রে তার লোকজনকে হয়রানি করা হয়েছে এবং কোথাও মারধরও করা হয়েছে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে জানান নৌকার প্রার্থী।
সাক্কু গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ খুবই সুন্দর হয়েছে। ইভিএমের কারণে ভোট কাস্টিং কম হয়েছে। অনেকে ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। আমি তো মনে করেছিলাম, ইভিএম শুধু জাতীয় নির্বাচনের জন্য। কিন্তু সিটি নির্বাচনের মাত্র একশ কেন্দ্রেই যে জটিলতা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনে তো হাজার হাজার কেন্দ্র থাকবে। এটা ইভিএমে যদি হয়, তাহলে কী হবে তা এখনই বুঝা যাচ্ছে।
নির্বাচনের পরিবেশের জন্য জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে আরেক মেয়র প্রার্থী নিজামউদ্দিন কায়সার বলেন, খুবই ভালো নির্বাচন হয়েছে। এখন যদি ইভিএমে কারচুপি না হয় তাহলে আমার পক্ষেই রায় আসবে। ঘোড়া প্রতীকে যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে- ইভিএমে কোনো কারিগরি না করা হলে তা ফলাফলে প্রতিফলন ঘটবে।
এদিকে ভোটগ্রহণ শেষে ব্রিফিংয়ে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘সার্বিক দিক বিবেচনায় বলা যায়, কুমিল্লা সিটিতে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ভোটারদের কাছ থেকেও তেমন কোনো অভিযোগ আসেনি। এ সিটিতে প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে। খুব বিরূপ মন্তব্যও আমরা পাইনি।’
নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করলেন সাক্কু
নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় সাক্কু বলেন, আমার বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।দুই ঘণ্টা ফলাফল আটকে রাখা হলো। এটা গায়ের জোরে আটকে রাখা হলো। এখন আমি আইনি প্রক্রিয়ায় যাব।
তিনি আরও বলেন,আমার কাছে ফলাফলের কাগজ আছে। এটা অন্যায়। এর মাধ্যমে প্রমাণ হলো নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা দেখাতে পারেনি।