:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল আলম বাবুকে আটক করেছে র্যাব।
শনিবার ভোর ৪টার দিকে পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের চরতিস্তাপাড়া থেকে তাকে আটক বলে নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা।
চিলাহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেছেন, সকালে চিলাহাটি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের আলিম মাদ্রাসার প্রভাষক মো. ফখরুল ইসলামের বাড়ি থেকে র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাহমুদুল আলম বাবুকে আটক করে নিয়ে গেছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে নাদিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করে ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য গোলাম কিবরিয়া সুমন, ওই ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কফিল উদ্দিন, তোফাজ্জল, আয়নাল, শহীদ ও ফজলু। বাকিদের আটক করার চেষ্টা চলছে।
গত বুধবার রাত ১০টার দিকে বাড়িতে ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি মোড়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম। এ সময় তাঁকে ব্যাপক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাঁকে ফেলে পালিয়ে যায়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার সময় চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আর চেয়ারম্যানের ছেলে রিফাত সাংবাদিক নাদিমকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এ সময় সেখানে ২০-২৫ জন উপস্থিত ছিলেন। পরে চিকিৎসাধীন নাদিম মারা যান। এ ঘটনার বর্ণনা দেন নাদিমের সহকর্মী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক আল মুজাহিদ।
সাংবাদিক নাদিম অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলার সংবাদ সংগ্রাহক ও মানবজমিন পত্রিকার জামালপুর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। উপজেলা শহরের গরুহাটি কাছারিপাড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।
বাবুকে আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার
নাদিম হত্যার ঘটনায় মাহমুদুল আলম বাবুকে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার রাত ১০টায় বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন তালুকদার বাবুলের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৪ জুন বুধবার রাত ১০টায় বকশীগঞ্জ পৌর শহরের পাটহাটি মোড় এলাকায় বাংলা নিউজ ২৪ ডটকম এবং ৭১ টেলিভিশনের সংবাদ সংগ্রাহক সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের ওপর একদল দুষ্কৃতকারী অতর্কিত হামলা করে। হামলায় তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, অতঃপর অত্যন্ত মুমূর্ষু অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
উক্ত ন্যক্কারজনক ঘটনায় প্রশাসন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে আপনার সংশ্লিষ্টতা জোরালোভাবে উল্লেখিত হওয়ায় দলীয় ভাবমূর্তি প্রচণ্ডভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আপনার অসাংগঠনিক কার্যক্রম এবং অসদাচরণ প্রকাশ পাওয়ায় আপনাকে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সাধুরপাড়া ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক পদ হইতে অব্যাহতি প্রদান করা হইল এবং সংগঠন হইতে সাময়িক বহিষ্কার করা হইল। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আপনাকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না—এই মর্মে পত্র প্রাপ্তির ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে বকশীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের বরাবর জবাব দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
মামলা হয়নি এখনও
নাদিম হত্যার ঘটনার তিন দিন হয়ে গেলেও এখনও পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। পুলিশ বলছে, মামলা করা হলে আটকদের গ্রেফতার দেখিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।