:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
সিরাজুল আলম খানের ছোট ভাইয়ের মেয়ে ব্যারিস্টার ফারাহ খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই সংগঠককে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল। আজ দুপুর আড়াইটার দিকে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়।
ফারাহ খান বলেন, চিকিৎসকরা সবকিছু দেখে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়েছে।
গত ৭ মে রাতে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা নিয়ে পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হন সিরাজুল আলম খান। এরপর চিকিৎসকদের পরামর্শে ২০ মে তাকে ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ায় গত ১ জুন দুপুরে সিরাজুল আলম খানকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছিল। এরপর অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় গতকাল তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
৮২ বছর বয়সী এই রাজনীতিক অনেক দিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তাকে বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার পর থেকে চিরকুমার সিরাজুল আলম খান রাজধানীর কলাবাগানে তার ভাইদের সঙ্গেই থাকতেন। ২০২১ সালেও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সিরাজুল আলম খান।
ষাটের দশকের প্রথমার্ধে সিরাজুল আলম খানসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার উদ্যোগে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। এ সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সাল ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়।
প্রথম জানাজা হবে শনিবার
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খানের প্রথম জানাজা হবে শনিবার। এদিন সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে তার জানাজা হবে।
সিরাজুল আলম খানের ছোট ভাইয়ের মেয়ে ব্যারিস্টার ফারাহ খান শুক্রবার বিকেলে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সিরাজুল আলম খানের প্রথম জানাজা হবে। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজার পর সিরাজুল আলম খানের মরদেহ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
সিরাজুল আলম খান তার শেষ ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। সেটি হলো, আমার মৃত্যুর পর কোনো শোকসভা হবে না। শহিদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ। যত দ্রুত সম্ভব নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আমার গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে হবে মরদেহ, যা ঢাকা থাকবে একটা কাঠের কফিনে। মায়ের একটা শাড়ি রেখে দিয়েছি। কফিনটা শাড়িতে মুড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে, মায়ের কবরে।’
এ সময় সিরাজুল আলম খানের নেপথ্য নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) প্রতিষ্ঠা হয়। কখনও নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শক হিসেবে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামে ডাকতেন। রাজনৈতিক কারণে ১৯৬৩, ১৯৭৬ ও ১৯৯২ সালে তিনি কারারুদ্ধ হন।