:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::
এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলংকাকে ১০ উইকেটে বিধ্বস্ত করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। এশিয়া কাপের ইতিহাসে উইকেটের দিক থেকে এটাই সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়।
লংকানদের ১৫.২ ওভারে মাত্র ৫০ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ৬.১ ওভারে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে জয় পায় ভারত। এই জয়ে এশিয়া কাপের ১৬তম আসরের ইতিহাসে রেকর্ড অষ্টম শিরোপা জিতে নেয় ভারত।
মোহাম্মদ সিরাজের বিধ্বংসী স্পেলের সঙ্গে হার্দিক পান্ডিয়া ও যশপ্রীত বুমরার দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ৫০ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা, যা ওয়ানডে ইতিহাসে ১০ম আর শ্রীলংকার ২য় সর্বনিম্ন স্কোর।
ওয়ানডে সংস্করণে সবচেয়ে কম রানে অলআউটের যৌথ রেকর্ডের একটির সঙ্গে জড়িয়ে শ্রীলঙ্কার নাম। এই লজ্জা শ্রীলঙ্কা দিয়েছিল জিম্বাবুয়েকে। ২০০৪ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়েকে ৩৫ রানে গুটিয়ে দিয়েছিল লঙ্কানরা। ২০২০ সালে কীর্তিপুরে যুক্তরাষ্ট্রের ইনিংস একই রানে মুড়িয়ে দিয়ে সেই কীর্তিতে ভাগ বসিয়েছিল নেপাল।
বলের দিক থেকেও যেকোনো টুর্নামেন্টের ওয়ানডে ফাইনালে সবচেয়ে বড় জয়ও এটি; ২৬৩ বল হাতে রেখে।
রোববার শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে চরম বিপর্যয়ে পড়ে যায় স্বাগতিকরা।
ভারতীয় তিন তারকা পেসার মোহাম্মদ সিরাজ, হার্দিক পান্ডিয়া ও জসপ্রিত বুমরাহের গতিতে দিশেহারা হয়ে যান লংকান ব্যাটসম্যানরা। ইনিংসের শুরু থেকে সময়ের ব্যবধানে উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৫.২ ওভারে ৫০ রানেই অলআউট হয় শ্রীলংকা।
ভারতীয় তারকা পেসার মোহাম্মদ সিরাজ এক ওভারেই শ্রীলংকার ৪ উইকেট শিকার করেন। এই তারকা পেসার ৭ ওভারে এক মেডেনসহ ২১ রানে শিকার করেন ৬ উইকেট।
২.২ ওভারে মাত্র ৩ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করেন ভারতীয় অলরাউরান্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। ৫ ওভারে ২৩ রানে এক উইকেট শিকার করেন জসপ্রিত বুমরাহ।
বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় এশিয়া কাপের ষষ্ঠ শিরোপা জয়ী শ্রীলঙ্কা। জাসপ্রিত বুমরাহ তুলে নেন কুশল পেরেরাকে।
এরপর স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা শিবিরে বড় ধাক্কা দেন ভারতের পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। তিনি নিজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ ওভারে বল হাতে নিয়ে চার উইকেট তুলে নেন। একে একে সাজঘরে ফেরান পাথুন নিশাঙ্কা (২), সাদিরা সামারাবিক্রমা (০), চারিথা আশালঙ্কা (০) ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে (৪)।
পরে আরও দুই উইকেট দখলে নেন ২৯ ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং করা সিরাজ। ডানহাতি এই পেসার দাশুন শানাকা (০) ও কুশল মেন্ডিসকে (১৭) বোল্ড করে দেন। ২১ রানে ক্যারিয়ারে সেরা ৬ উইকেট তুলে নেন। বাকি তিন উইকেট হার্ডিক পান্ডিয়া দখল করে লঙ্কানদের ১৫.২ ওভারে ৫০ রানে অলআউট করে দেন।
জবাব দিতে নেমে ভারতের দুই তরুণ ওপেনার শুভমন গিল ও ইশান কিষাণ ৬.১ ওভারে দলকে জয় এনে দিয়েছেন। কিশান ১৮ বলে তিন চারে ২৩ ও শুভমন ১৯ বলে ছয় চারে ২৭ রান করেন। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে ফাইনালে সর্বোচ্চ ২৬৩ বল হাতে রেখে ১০ উইকেটে জয়ের রেকর্ড গড়েন।
অন্যদিকে এশিয়া কাপের ফাইনালে ওয়ানডে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানে অলআউট হয়েছে শ্রীলঙ্কা। এর আগে ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পার্লে ২১তম ওভারে ৪৩ রানে ধসে গিয়েছিল তারা। শ্রীলঙ্কা অল্পের জন্য ওই লজ্জাসহ ওয়ানডের সর্বনিম্ন ৩৫ রানে অলআউটরে লজ্জা থেকে রেহায় পেয়েছে।
ভারত-শ্রীলঙ্কা ফাইনালে যত রেকর্ড
ব্যাটে-বলে লঙ্কানদের বিধ্বস্ত করে ভারতের এশিয়া কাপের শিরোপা জেতা ম্যাচে হয়েছে বেশ কিছু রেকর্ড।
ভারত-শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি ওয়ানডে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বনিম্ন বলে শেষ হওয়া ম্যাচ। এর আগে ২০২০ সালে নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওয়ানডে ম্যাচ ১০৪ বলে শেষ হয়েছিল। যা বিশ্ব রেকর্ড।
দুইয়ে আছে শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ের ২০০১ সালের ম্যাচটি। সেবার ১২০ বলে ম্যাচ শেষ হয়েছিল। এবার ভারত-শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি শেষ হলো ১২৯ বলে। এর আগে শ্রীলঙ্কা ২০১২ সালে ৪৩ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বিধ্বস্ত হয়ে ১৪০ বলের মধ্যে ম্যাচ হেরেছিল।
ওয়ানডে ক্রিকেটে যেকোন ধরনের আন্তর্জাতিক ফাইনাল ম্যাচে সবচেয়ে বেশি বল হাতে রেখে জয়ের রেকর্ড এটি। ভারত ২৬৩ বল হাতে রেখে জয় তুলে নিয়েছে। এর আগে ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২৬ বল হাতে রেখে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯৯ সালে লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ১৭৯ বল হাতে রেখে জয়ের কীর্তি গড়েছিল।
বলের হিসেবে এটি ভারতের সবচেয়ে বড় ওয়ানডে জয়। এর আগে ২০০১ সালে ব্লুমফন্টেইনে কেনিয়ার বিপক্ষে ২৩১ বল হাতে রেখে জিতেছিল ভারত। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতেছিল ২১১ বল হাতে রেখে। এছাড়া ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২২ সালে ১৮৮ বল হাতে রেখে জয় তুলে নিয়েছিল মেন ইন ব্লুজরা।
যেকোন আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ফাইনালে ১০ উইকেটে জয়ের এটি তৃতীয় ঘটনা। এর আগে ১৯৯৮ সালে কোকা কোলা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৯৭ রানের লক্ষ্যে নেমে ১০ উইকেটে জিতেছিল ভারত। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিডনিতে ভিবি সিরিজের ফাইনালে ১১৮ রান কোন উইকেট না হারিয়ে তাড়া করেছিল অস্ট্রেলিয়া। এবার এশিয়া কাপের ফাইনালে ৫১ রান তাড়া করলো ভারত।