শ্রীলংকাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ভারত

:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::

সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে ৩০২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সবার আগে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে ভারত। ভারতের ৩৫৭ রান তাড়া করতে নেমে শ্রীলঙ্কা মাত্র ৫৫ রানে গুটিয়ে যায়।

ভারতের ছুঁড়ে দেওয়া ৩৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে লঙ্কানরা। মোহাম্মদ সিরাজ ও জাসপ্রিত বুমরাহর পেসে বেসামাল হয়ে যান কুশল মেন্ডিসরা। পরে যুক্ত হন মোহাম্মদ শামি। শ্রীলঙ্কার মাত্র ১৪ রানেই গুটিয়ে যায় ৬ উইকেট। ২৯ রানে ৮ উইকেট হারানোর আরও বড় ব্যবধানে হারের শঙ্কা ছিল দলটির।

তবে শেষ দুই উইকেটের জুটিতে ৫০ পেরুতে পারে লঙ্কানরা। মাত্র ৫৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে রেকর্ড ব্যবধানের হার। আইসিসির পূর্ণাঙ্গ কোনো সদস্য দেশ হিসেবে লঙ্কানরা সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড গড়েছে। এতদিন এটা ছিল বাংলাদেশের দখলে। ২০১১ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অলআউট হয় তারা। ওয়ানডেতে এর আগে তারা ৪৩ রানে অলআউট হয়েছিল ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে।

গতকাল লঙ্কাকে ৫৫ রানে গুটিয়ে নেওয়ার পথে নায়ক হয়েছেন শামি। দশম ওভারে প্রথমবার বল হাতে আসেন তিনি। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে চারিথ আসালাঙ্কা ও দুশান হেমন্থকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ সৃষ্টি করেন। তবে সেটা আদায় করতে পারেননি। তবে সেই ওভারে মেডেনসহ নেন দুই উইকেট। থেমে থাকেনি তার উইকেটরথ। পেস তোপে তিনি শিকার করেছেন ৫ উইকেট। ক্যারিয়ারের চতুর্থবার ৫ উইকেট পেলেন তিনি। মাত্র ৫ ওভার বল ঘুরিয়ে দিয়েছেন ১৮ রান। এছাড়া ৭ ওভারে ২ মেইডেনসহ ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট সিরাজের ও রবীন্দ্র জাদেজা এবং জাসপ্রিত বুমরাহ নিয়েছেন একটি করে উইকেট।

শ্রীলঙ্কার প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানের তিনজনই আউট হয়েছেন রানের খাতা খোলার আগে। বাকিরাও ১ রানের বেশি করতে পারেননি। দুই অঙ্কের রান টপকাতে পেরেছেন মাত্র তিনজন। কাসুন রাজিথা ১৪, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ এবং মহেশ থিকশানা ১২ রান করে আউট হন।

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ভারতকে ব্যাটিং পাঠায় শ্রীলঙ্কা। আগে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই চার মেরে খেলা শুরু করেন রোহিত শর্মা। পরের বলেই তাকে বোল্ড করে দেন লঙ্কান পেসার দিলশান মাদুশাঙ্কা। প্রথম ওভারেই ২ বলে ৪ রান করে সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার রোহিত।

তিনে নেমে শুভমান গিলকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর ধাক্কাটা সামাল দিতে থাকেন বিরাট কোহলি। অল্প সময়ের মধ্যেই ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন গিল এবং কোহলি। ফিফটি ছুঁয়েও দোর্দন্ড প্রতাপে এগিয়ে যেতে থাকেন কোহলি এবং গিল। দুজনেই চলে যান সেঞ্চুরির খুব কাছে। তবে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের কাছে গিয়েই ঝামেলাটা পাকান গিল-কোহলি। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছেন দুজনই।

দলের ১৯৩ রানের মাথায় থামেন গিল। ভারতীয় ওপেনারকে ফিরিয়েছেন সেই মাদুশাঙ্কা। সাজঘরে ফেরার আগে ৯২ বলে ৯২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন শুভমান গিল। কিছুক্ষণ পরেই সাজঘরে ফেরেন কোহলি। সেঞ্চুরির অনেক কাছে গিয়েও ৯৪ বলে ৮৮ রানের ইনিংস খেলে আউট হন বিরাট কোহলি।

মাঝে লোকেশ রাহুল এবং সূর্যকুমার যাদব ক্রিজে নামলেও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হয়েছেন। ১৯ বলে ২১ রান করেন রাহুল। অন্যদিকে ৯ বলে ১২ রানের ইনিংস খেলেন সূর্যকুমার। অন্যরা যে যাই করুক না কেন আইয়ার এগিয়ে যাচ্ছিলেন আপন গতিতে। তার সাবলীল ব্যাটিংয়ে ৩০০ রানের কোটা পার করে ফেলে ভারত। আইয়ার নিজেও ফিফটি হাঁকিয়ে ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে।

শেষ দিকে আরও আগ্রাসী ব্যাটিং করেছেন আইয়ার। সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে যেন গিল আর কোহলির মত অল্পের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয় আইয়ারের। ৫৬ বলে ৮২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান শ্রেয়াস আইয়ার।

বাকি সময়ে ঝড় তুলেছেন রবীন্দ্র জাদেজা। ইনিংসের একদম শেষ বলে রান আউট হওয়ার আগে ২৪ বলে ৩৫ রানের ক্যামিও খেলেন জাদেজা। নির্ধারিত ৫০ ওভারের খেলা শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৫৭ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত। 

শ্রীলঙ্কার হয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন দিলশান মাদুশাঙ্কা। এছাড়া ১ উইকেট নেন দুশমন্থ চামিরা।

বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানে জয়ের পাঁচটি রেকর্ড:
৩০৯ রান; অস্ট্রেলিয়া; প্রতিপক্ষ: নেদারল্যান্ডস; ২০২৩
২৭৫ রান; অস্ট্রেলিয়া; প্রতিপক্ষ: আফগানিস্তান; ২০১৫
২৫৭ রান; ভারত; প্রতিপক্ষ: বারমুডা; ২০০৭
২৫৭ রান; দক্ষিণ আফ্রিকা; প্রতিপক্ষ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ; ২০১৫
২৫৬ রান; অস্ট্রেলিয়া; প্রতিপক্ষ: নামিবিয়া; ২০০৩

ওয়ানডেতে এক ইনিংসে দুই ওপেনারের গোল্ডেন ডাক:
পিট রিঙ্কি-টেরি ডাফিন (জিম্বাবুয়ে); প্রতিপক্ষ:ওয়েস্ট ইন্ডিজ; ২০০৬
লাহিরু থিরিমান্নে-তিলকরত্নে দিলশান (শ্রীলঙ্কা); প্রতিপক্ষ: আফগানিস্তান; ২০১৫
কলিন মুনরো-মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড); প্রতিপক্ষ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ; ২০১৯
ডিমুথ করুণারত্নে-পাথুম নিশাঙ্কা (শ্রীলঙ্কা); প্রতিপক্ষ:ভারত; ২০২৩

বিশ্বকাপে ইনিংসের প্রথম বলে আউট হওয়া শ্রীলঙ্কার ব্যাটার:
লাহিরু থিরিমান্নে; প্রতিপক্ষ: আফগানিস্তান; ২০১৫
ডিমুথ করুণারত্নে; প্রতিপক্ষ: দক্ষিণ আফ্রিকা; ২০১৯
পাথুম নিশাঙ্কা; প্রতিপক্ষ: ভারত; ২০২৩

বিশ্বকাপে দুই লঙ্কান ওপেনারের একই ইনিংসে শূন্য রানে আউট:
লাহিরু থিরিমান্নে-তিলকরত্নে দিলশান; প্রতিপক্ষ: আফগানিস্তান; ২০১৫
ডিমুথ করুণারত্নে-পাথুম নিশাঙ্কা; প্রতিপক্ষ:ভারত; ২০২৩

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *