কওমী মাদ্রাসার সঙ্গে এনজিওর তুলনা কেন?

:: মারুফ মল্লিক ::

দেশ থেকে গরীবি হটাতে এনজিও মডেল নিয়া কাজ করছিলাম গত কয়েকদিন ধরে। গেল সপ্তাহে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের এ নিয়া পড়ালাম। বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত্ব ও উদাহরণ দিয়ে বুঝালাম উন্নয়ন ধারনায় এনজিও মডেল আসলে কাজ করে না। এটা ব্যর্থ হয়েছে। তো গত কয়েকদিন ধরে এসব নিয়া ঘাটাঘাটি করতে করতে একটা চমৎকার তথ্য পেলাম। পেলাম বলতে একজনের কাছ থেকে ধারণা পেয়ে একটু খোঁজ নিলাম। বিষয়টা হচ্ছে, দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এনজিওর থেকে দেশে কওমি মাদ্রাসাগুলোর ভূমিকা অধিক ও বেশি কার্যকর। শিক্ষাদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র বিমোচনে কওমি মাদ্রাসাগুলোর নিজস্ব একটা মডেল আছে। এই মডেল নিয়া খুব বেশি আলাপ আলোচনা হয়নি। মাদ্রাসাগুলোকে অনেকেই সেকেলে, ধর্মব্যবসায়ীদের আস্তানা, জঙ্গী তৈরির কারখানা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। কিন্তু পুরো কাঠামো এবং সমাজে এর প্রভাব নিয়ে ওইভাবে কথাবার্তা হয় না।

সামাজিক অর্থায়নের সফল উদাহরণ হচ্ছে কওমী মাদ্রাসা। কওমী মাদ্রসাগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের পুরোপুরি দেখভাল করে। প্রথমত, দেশের প্রান্তিক গোষ্ঠীর সন্তানদের এরা বিনামুল্যে শিক্ষাসহ খাবার প্রদান করে। শিশু হিসাবে মাদ্রাসায় প্রবেশ করে হাফেজ, আলেম, মাওলানা, মুফতি, মুহাদ্দিস হিসাবে বের হয়ে সারা দেশের মাদ্রাসাগুলো শিক্ষকতা শুরু করে। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে। এবং এই শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরিই সামাজিক দানের উপর নির্ভরশীল। মুলত যাকাত, ফেতরা, কোরবানীর পশুর চামড়াসহ বিভিন্ন জনের দান ও সহায়তায় এসব মাদ্রাসা চলে। এটাকে সামাজিক দান বলা হলেও মুলত এটা সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট। সরকার বা বিদেশ থেকে কিছু কিছু অনুদান পায়। কিন্তু পুরো ব্যবস্থার জন্য এটা নিতান্তই নগন্য।

কিছু কিছু মাদ্রাসায় একই সঙ্গে প্রি স্কুলিং, স্কুল এবং আফটার স্কুল কেয়ার বা স্কুল ও ডে কেয়ারের সুবিধা আছে। ফলে অভিভাবকরা অনেকেই শিশুকে মাদ্রাসায় দিয়ে কাজে যেতে পারেন। বিশেষ করে মহিলা শ্রমিকদের এটা বিশেষ সুবিধা সৃষ্টি করেছে। বাচ্চা লালন পালনের আলাদা অর্থ কিংবা শ্রম লাগে না।

এদের ব্যবস্থাপনা সরকারি স্কুলের থেকে ভালো। একটা উদাহরণ দেই। সরকার স্কুল ফিডমিল চালু করার জন্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকা খরচ করছে। ২০১৩ সালে শুরু হলেও ৯ বছর পরও সরকার সব স্কুলে এই কর্মসূচি শুরু করতে পারে নাই। এই সময় তারা বিশ্বব্যাংকের সহায়তা পাইছে। আমাদের আমলারা বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন ফিডমিল সরাসরি দেখে শিক্ষা লাভের জন্য। কিন্তু কাজ হয় নাই। বর্তমানে সরকার স্কুল ফিডমিল চালুর জন্য ২৫০০ হাজার কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পে খিচুরির প্রস্তাব নিয়ে বেশ হৈ চৈ হয়েছে। এই বছরের কোনো এক সময় এই প্রকল্প শুরু হতে পারে।

আর বিপরীতে কওমী মাদ্রাসার দিকে নজর দেন একটু। দেখবেন এই মাদ্রাসাগুলোতে কমবেশি ১৫ লাখ শিক্ষার্থী আছে। এদের বেশির ভাগই আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনবেলাই এরা মাদ্রাসায় খাওয়া দাওয়া করে। তাহলে দেখা যাচ্ছে ফিড মিলের মডেল আমাদের হাতের সামনেই আছে। আর সরকার এত এত দক্ষজনবল দিয়ে কর্মসূচি মাঠে নাইতে হিমশিম খাচ্ছে।

চার কোটি শিক্ষার্থীর জন্য বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু কওমী মাদ্রাসা শিক্ষায় সরকারের বিনিয়োগ শূন্য। সরকার ও বেসরকারি এনজিওর শূন্য বিনিয়োগে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনের এমন এন্ড টু এন্ড মডেল বিরল। এবং এই মডেল খুবই টেকসই। সামাজিক উন্নয়নের একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে কওমী মাদ্রাসাগুলো। কওমি মাদ্রাসার নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাকে যুক্ত করা গেলে এ থেকে আরো সুফল পাওয়া যাবে।

দারিদ্র বিমোচনে এনজিও ও মাদ্রাসার কার্যকারিতা নিয়ে লিখার পর অনেকগুলো প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। আলাদা আলাদা করে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এখানে একসঙ্গে দিলাম। সবাই এখান থেকে পড়ে নিতে পারবে।

হুট করে এনজিও নিয়ে লেখছি কেন?

উন্নয়ন ধারনায় এনজিওদের তৃতীয় চাবি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। প্রথমটি হচ্ছে সরকার। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বেসরকারি খাত। গত শতকের ৭০ এর দশকে এনজিওর দ্রুত বিকাশ ঘটলেও ৯০ এর পর থেকে স্থানীয় রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক নেগোশিয়েশন্সে এনজিওদের প্রভাব বাড়তে থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এনজিওদের প্রেশার গ্রুপ হিসাবে বলে থাকেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এদের নন স্টেট অ্যাক্টর বলে বিবেচনা করা হয়। রাজনীতিতে এনজিওদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির কারণে গবেষকরা এ বিষয়ে নানা কাজ করছেন। এদের মধ্যে অক্সফোর্ডের অধ্যাপক অ্যান্ড্রিউ হুরেল অগ্রগন্য। বলতে পারেন আমি তার দ্বারা কিছু প্রভাবিত। আমার ডক্টরাল থিসিস লিখার সময় তার সঙ্গে কয়েকবার আলাপও হয়েছে। থিসিসে ছোট একটি চাপ্টার লিখেছি, জলবায়ু রাজনীতি কিভাবে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে এনজিওরা। থিসিসটি অচিরেই বই হিসাবে প্রকাশিত হতে পারে। তখন এটা পড়তে পারবেন। তাই বলা চলে এনজিও নিয়ে হুট করেই লিখছি না। অনেকদিন ধরে এনজিও নিয়ে কাজ করছি। এখন একটি পূর্নাঙ্গ বই লেখার পরিকল্পনা করছি কেবল।

চার কোটি শিক্ষার্থীর জন্য বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু কওমী মাদ্রাসা শিক্ষায় সরকারের বিনিয়োগ শূন্য। সরকার ও বেসরকারি এনজিওর শূন্য বিনিয়োগে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনের এমন এন্ড টু এন্ড মডেল বিরল। এবং এই মডেল খুবই টেকসই। সামাজিক উন্নয়নের একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে কওমী মাদ্রাসাগুলো। কওমি মাদ্রাসার নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাকে যুক্ত করা গেলে এ থেকে আরো সুফল পাওয়া যাবে।

কওমী মাদ্রাসা ও এনজিও তুলনা কেন?

কওমী মাদ্রাসা ও এনজিও; উভয়েই একে অপরের সমালোচনায় মুখর থাকে। মাদ্রাসাগুলো মনে করে এনজিওরা সমাজ ও ধর্মকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ হচ্ছে ধর্মান্তকরনের। অপরদিকে এনজিওরা মনে করে মাদ্রাসগুলো নারী স্বাধীনতা ও অধিকারের পথ রুদ্ধ করে রাখছে। সমাজে কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা তৈরিতে মাদ্রাসাগুলোর ভূমিকা জোরালো। মূলত মুখোমুখী অবস্থানে থাকার কারণেই দুই প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করার আগ্রহ। এই দুইটি প্রতিষ্ঠান বিপরীত অব্স্থানে থেকে কিভাবে কাজ করে একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে তা দেখার জন্য দারিদ্র বিমোচনে দুই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ও কার্যকারিতা নিয়ে লিখেছি স্বল্প পরিসরে। এ নিয়ে বিস্তারিত কাজ করার সুযোগ আছে। বলা দরকার, মাদ্রাসাগুলো বলে কয়ে দারিদ্র বিমোচনের কাজ করে না। তবে মাদ্রাসার সামাজিক অর্থনীতি আছে। মাদ্রাসাগুলোকে ঘিরে বড় অংকের অর্থ সক্রিয় থাকে। এই ভাবনা থেকেই দুইটি প্রতিষ্ঠানের তুলনা করা হয়েছে। সমাজে যে কোনো দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তুলনা হতে পারে যদি কোনো না কোনো ভাবে ওই দুইটি প্রতিষ্ঠান যুক্ত বা বিপরীত অবস্থানে থাকে।

মাদ্রাসা, বিদ্যানন্দ ও এনজিও সবাই ভিক্ষার টাকাতেই চলে

এটা সত্য এই প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের দান খয়রাতেই চলে। কিন্তু কেবল মাদ্রাসার ক্ষেত্রেই বলা হয় এরা দান খয়রাতের পয়সায় চলে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মাইকিং করে অর্থ উত্তোলন করে তাই একে আমরা ভিক্ষাবৃত্তি মনে করি। আর কর্পোরেট লোকজন অনলাইনে ব্যাংক ট্রান্সফার করে বিধায় বিদ্যানন্দকে অর্থ দান করাকে ডোনেশন বলি। আর বিদেশ থেকে টাকা পায় বলে এনজিওর অর্থকে আমরা ফরেন এইড বলি। তিনটাই কার্যত ভিক্ষা বা দানের টাকা। কারিতাস বা ওয়ার্ল্ড ভিশন  মূলত জার্মান চার্চের পয়সায় চলে। এই চার্চগুলো বিভিন্নভাবে মানুষজনের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। উত্তোলন করা অর্থ এরা বিভিন্ন দেশে পাঠায় চ্যারিটির কাজে। মাদ্রাসার হুজুররা যেভাবে টাকা তুলে এরাও একইভাবে তুলে থাকে। চার্চে প্রার্থনার সময় থলে নিয়ে ঘুরে ঘুরে টাকা তুলে। শহরের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প করে টাকা নেয়। ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছ থেকে ধর্মকর আদায় করে। আমাদের হুজুরা বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল করে মাদ্রাসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। এখানে বিভিন্ন বার্ষিক সভা সেমিনার করে ফাদাররা ফান্ড রেইজ করে। ক্যাথলিক চার্চের এরকম দুই একটি অনুষ্ঠানে আমার যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল।

ইহলৌকিক কাজকর্মকে নিরুসাহিত করে মাদ্রাসগুলো

অনেকেই এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। এটা ভুল ধারনা। মাদ্রাসাগুলোতে ইসলামিক থিওলজি পড়ানো হয়। থিওলজি পঠন পাঠের ফলাফলের প্রয়োগ কিন্তু ইহজগতেই করা হয়। পরকালে এই জ্ঞানের প্রয়োগ সম্ভব না। ইসলাম বৈরাগ্যবাদকে সমর্থন করে না। বরং আমল করতে বলে। আমল মানে কেবল নামাজ, রোজা, হজ্ব বা যাকাত দেওয়াই না। বরং পুরো জীবনটাই আমলের পরিপূর্ন। বড় আলেম হলেই হবে না। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালনও আমলের অংশ। এই আমলে উপর পরকাল নির্ভর করে ইসলামের ব্যখ্যা অনুসারে।

জিডিপিতে এদের অংশ নেই

এটাও ভুল ধারনা। উৎপাদন মানেই কেবল কলকারখানা বা কৃষি উতপাদন না। শ্রমও পন্য। এটাও উতপাদিত হয়। মাদ্রাসগুলোতে ঘিরে বড় ধরনের শ্রম উৎপাদন ও বিক্রি হয়। হতে পারে এই শ্রমের মূল্য কম। কিন্তু মাদ্রাসাগুলোকে ঘিরে বড় ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হয়। জ্ঞান বা নলেজকেও সম্পদ ও ক্ষমতা হিসাব গন্য করা হয়। এই সম্পদের লেনদেন হয়। মাদ্রাসাগুলোতে জ্ঞান চর্চা করা হয়। এখন আপনার পছন্দ না বলে এটাকে বাতিল করতে চাইছেন। কিন্তু কওমী মাদ্রাসার অনেক শিক্ষার্থীর দক্ষতা অনেক সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকে বেশি। সমাজ ও দর্শন নিয়ে এরা বেশ গভীরে গিয়ে পড়াশুনা করে। বলা হয়, মাদ্রাসায় বিজ্ঞান পড়ানো হয় না। হওয়ার কথাও না। ওরা থিওলজি নিয়ে বিশেষজ্ঞ হতে চায়। ওদের বিজ্ঞান পড়ানো দরকার নাই। ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে থিওলজির ক্যাথলিক ও প্রোসেটান্ট ফ্যাকাল্টি থাকে। ওইখানে কেবল থিওলজিই পড়ানো হয়। তবে হ্যাঁ শ্রমাবাজারে এদের আরো অ্যাক্টিভ করার জন্য নানামুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

পরিচালন ব্যয়

মাদ্রাগুলো সংগৃহীত অর্থের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীদের জন্যই খরচ করে। এরা মুলত শিক্ষা কার্যকম পরিচালনা করে। বিপরীতে এনজিও গুলোও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু যে কোনো প্রোগ্রামের ৮০ শতাংশ এনজিওরা পরিচালনা ব্যয় হিসাবে খরচ করে। ফলে দেখা যাচ্ছে এনজিওগুলোর থেকে মাদ্রাসাগুলে বেশি বিনিয়োগ বা খরচ করে তাদের প্রোগ্রামের জন্য। যে কারণে মাদ্রাসার হুজুর খুবই কম বেতন পান। আর এনজিও কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ৬ ডিজিটের বেতন পান অনায়াসেই।

মাদ্রাসা নিয়ে বিতর্ক

হুজুররা নানা ধরনের বাজে ভাষা ও যুক্তি দিয়ে ওয়াজ নসিহত করেন। তাদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আছে। এটা সত্য। একই অভিযোগ এনজিওগুলোর বিরুদ্ধেও আছে। এনজিওগুলোতে যেমন যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল হচ্ছে। মাদ্রাসগুলোতে অনেক বিলম্বে হলেও এ বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এনজিও থেকে অনেক হর্তাকর্তা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ চাকুরি হারিয়েছেন। মাদ্রাসগুলোতে অনেক হুজুরকে বিদায় করা হয়েছে। আবাসিক শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে পরিবার বসবাসের সুবিধা সৃষ্টির জন্য অনেক মাদ্রাসাই কাজ করছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *