:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::
নেদারল্যান্ডসকে ৩০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানে জয়ের রেকর্ড গড়ল অস্ট্রেলিয়া। ৪০০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেওয়া নেদারল্যান্ডস অলআউট হয় মাত্র ৯০ রানে।
৪০০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নেদারল্যান্ডস প্রথম উইকেট জুটিতে তোলে ২৮ রান। এটিই দলটির সর্বোচ্চ রানের জুটি। শেষ ৬ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২১ ওভারে ৯০ রানে অলআউট হয়।
পাঁচ জন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কে পৌঁছালেও সর্বোচ্চ বিক্রমজিৎ সিংয়ের ২৫ রান। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩ ওভারে ৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন অ্যাডাম জাম্পা। মিচেল মার্শের শিকার ১৯ রানে ২ উইকেট। অস্ট্রেলিয়া ২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে আফগানিস্তানকে হারিয়েছিল ২৭৫ রানে। বিশ্বকাপে এটিই ছিল রানের দিক থেকে সবচেয়ে বড় জয়। নিজেদের রেকর্ডই নতুন করে লিখেছে প্যাট কামিন্সের দল।
পাঁচ ম্যাচে এটি অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় জয়। ফলে পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান চার নম্বরে।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ১৫ বলে ৯ রান করে আউট হয়ে যান মিচেল মার্শ। মার্শের আউটের পর আক্রমণাত্মক হয়ে যান ওয়ার্নার। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা স্মিথকে সঙ্গে নিয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন ওয়ার্নার।
২৩ তম ওভারের চতুর্থ বলে বাস ডি লিডকে চার মারেন ওয়ার্নার। ঠিক তার পরের বলে কাভার এলাকা দিয়ে চার মারার চেষ্টা করেন অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি ব্যাটার। ফন ডার মারউই ক্যাচ ধরে উল্লাস প্রকাশ করলেও ওয়ার্নার বুঝতে পেরেছেন যে তিনি আউট হননি। অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি ব্যাটারের রান ছিল ৭৩। এভাবে ‘প্রতারণা’ থেকে বেঁচে যাওয়ার পর একই ওভারের শেষ বলে চার মেরেছেন ওয়ার্নার।
ওয়ার্নার বেঁচে যাওয়ার ঠিক পরের ওভারেই আউট হয়েছেন স্টিভ স্মিথ। আরিয়ান দত্তকে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ফন ডার মারউইর তালুবন্দী হয়েছেন স্মিথ। টিভি রিপ্লেতে চেক করে দেখা যায় এবার মারউই ঠিকমতো ক্যাচ ধরেছেন। ৬৮ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৭১ রান করেন স্মিথ। দ্বিতীয় উইকেটে ১১৮ বলে ১৩২ রানের জুটি গড়েছেন ওয়ার্নার-স্মিথ। তাতে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ২৩.৩ ওভারে ২ উইকেটে ১৬০ রান।
মার্শ, ওয়ার্নারের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন মারনাস লাবুশেন। তিনিও এসে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন। ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি যেখানে সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল, লাবুশেনের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে তাতে শুধু দেরীই হয়েছে। ৪৭ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬২ রান করা লাবুশেনকে ৩৭ তম ওভারের প্রথম বলে ফিরিয়েছেন ডি লিড। তাতে ভেঙে গেছে তৃতীয় উইকেটে ওয়ার্নার-লাবুশেনের ৭৬ বলে ৮৪ রানের জুটি ভেঙেছেন বাস ডি লিড।
লাবুশেন আউট হওয়ার পর তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন ওয়ার্নার। ৩৯ তম ওভারের তৃতীয় বলে ডি লিডকে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২২ তম সেঞ্চুরি তুলে নেন অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি ব্যাটার। টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি করেছেন ওয়ার্নার। তাতে রিকি পন্টিংকে ছাড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি করে ফেলেন বাঁহাতি ওপেনার। সেঞ্চুরির পর অবশ্য ইনিংস বড় করতে পারেননি ওয়ার্নার। ৯৩ বলে ১১ চার ও ৩ ছক্কায় ১০৪ রান করেন অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি ব্যাটার। ওয়ার্নারের বিদায়ে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ৩৯.১ ওভারে ৫ উইকেটে ২৬৭ রান।
ওয়ার্নার যেখানে শেষ করেছেন, ম্যাক্সওয়েলের ঝড় শুরু হয় সেখান থেকেই। সবচেয়ে বেশি ঝড় তুলেছেন ৪৯ তম ওভারে। ওভারের প্রথম দুই বলে ডি লিডকে দুটি চার মারেন ম্যাক্সওয়েল। অস্ট্রেলিয়ার বিধ্বংসী অলরাউন্ডার এরপর টানা তিন বলে তিনটি ছক্কা মারেন। যেখানে ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা মেরে ৪০ বলে সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান হয়ে যান ম্যাক্সওয়েল। অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটার এরপর আউট হয়েছেন শেষ ওভারের তৃতীয় বলে। লোগান ফন বিককে তুলে মারতে যান ম্যাক্সওয়েল। লং অনে ডাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচ ধরেছেন সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট। ৪৪ বলে ৯ চার ও ৮ ছক্কায় ১০৬ রান করেছেন ম্যাক্সওয়েল। যা অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের সর্বোচ্চ রান। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৯৯ রান করেছে অস্ট্রেলিয়া। ডাচ বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন ফন বিক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৯৯/৮ (ম্যাক্সওয়েল ১০৬, ওয়ার্নার ১০৪, স্মিথ ৭১, লাবুশেন ৬২; ফন বিক ৪/৭৪, ডি লিডি ২/১১৫)।
নেদারল্যান্ডস: ২১ ওভারে ৯০ (বিক্রমজিৎ ২৫, নিদামানুরু ১৪; জাম্পা ৪/৮, মার্শ ২/১৯)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৩০৯ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।