শ্রীলঙ্কার হ্যাটট্রিক হারে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম জয়

:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::

বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম জয়ের দিনে হারের হ্যাটট্রিক করল শ্রীলঙ্কা। ৩৫ ওভারেই জয় তুলে নিয়েছে প্যাট কামিন্সের দল। আসরে অজিদের এটি প্রথম জয়। 

বিশ্বকাপের রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হেরে যায় এবং দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হেরে ব্যাক ফুটে চলে যায় অসিরা। 

লখনৌতে শ্রীলঙ্কার নতুন অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। 

কুশল পেরেরা ও পাথুম নিশাঙ্কার ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহের আভাস দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দুজনের ব্যাটিং ঝলক শেষ হতেই লঙ্কানদের চেপে ধরেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। ৪৩.৩ ওভারে ২০৯ রানেই গুটিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। অস্ট্রেলিয়ার সামনে লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ২১০ রানের। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৮ রান করেছেন কুশল পেরেরা। অজিদের হয়ে ৪৭ রানে ৪ উইকেট পেয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা।

দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচটিকে বলা হচ্ছে অলিখিত সেমিফাইনাল। আজ যে দল হারবে, তারাই খাদের কিনারে চলে যাবে। আর ২ পয়েন্ট যারা পাবে, তাদের সেমির সম্ভাবনা বেশ ভালোভাবে জেগে উঠবে।

দলীয় ১২৫ রানে পাথুম নিশাঙ্কার বিদায়ে ভাঙে এই ওপেনিং জুটি। এরপর কিছু সময় পেরেরার ব্যাটে লড়াই চালিয়ে যায় লঙ্কানরা। কিন্তু ৭৮ রানে পেরেরার বিদায়ের পর লঙ্কান শিবিরে শুরু হয় আসা যাওয়ার ঘটনা। একে একে শামিল হন কুশল মেন্ডিস, সাদিরা সামারাবিক্রমা, চারিথ আশালাঙ্কা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, দিমুথ ওয়েল্লালেগা, চামিকা কারুনারত্নে, মাহেশ থিকসানা ও লাহিরু কুমারা। এতে স্কোরবোর্ডে ২০০ রান তোলার আগেই আট ব্যাটারকে হারিয়ে রীতিমতো ধসে পড়ে লঙ্কানদের ইনিংস। শেষ পর্যন্ত বেশিদূর আগানো সম্ভব হয়নি শ্রীলঙ্কার। ২০৯ রানেই থেমে যায় তাদের ইনিংসের চাকা।

বৃষ্টির বাধায় কিছুক্ষণ থেমে ছিল অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার খেলা। অপেক্ষা শেষে খেলা মাঠে গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণভাগে হাজির হন মিচেল স্টার্ক। দ্বিতীয় বলেই ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে বোল্ড করেন তিনি। তার কিছু সময় না যেতেই কামিন্সের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হয়ে যান দুনিথ ভেল্লালাগে।

এরপর বোলিংয়ে ফিরে আবার জোড়া আঘাত হানেন জাম্পা। ফিরিয়ে দেন চামিকা করুণারত্নে ও মাহিশা থিকশানাকে। পরের দুটি উইকেট নিজেদের করে নেন স্টার্ক ও ম্যাক্সওয়েল। দারুণ শুরু করা শ্রীলঙ্কা ৪৩.৩ ওভারে মাত্র ২০৯ রানেই গুটিয়ে যায়। প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক ২টি করে উইকেট নেন।

এদিন ম্যাচসেরা অ্যাডাম জাম্পার স্পিন ভেল্কিতে কুপোকাত হন লঙ্কান ব্যাটাররা। তাদের ইনিংস থামে ২০৯ রানে। উদ্বোধনী জুটিতে চমৎকার জুটির পর মাত্র ৫২ রানেই শেষ ৯ উইকেট হারিয়ে বসে এশিয়ার সিংহরা। জাম্পা একাই শিকার করেন ৪ উইকেট। এ নিয়ে দশমবারের মতো ইনিংসে ৪ উইকেট শিকার করলেন এই লেগী। অজি স্পিনারদের মধ্যে এর বেশি ১৩ বার চার উইকেট শিকারের কীর্তি আছে শুধু শেন ওয়ার্নের।

বিশ্বকাপে দুশোর গণ্ডি ছুঁতে না পারা অজিদের ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচে ২১০ রানের লক্ষ্যটাকে খুব একটা সহজ মনে হচ্ছিল না। আরেক পশলা বৃষ্টি শেষে তবুও ভালো শুরু করেন দুই ওপেনার। এরপর লঙ্কান পেসার দিলশান মাদুশঙ্কার জোড়া আঘাতে কাঁপন ধরেছে অস্ট্রেলিয়া ড্রেসিংরুমে। স্কোরবোর্ডে ২৪ রান তুলতেই ফিরে যান দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভেন স্মিথ। ডাবল উইকেট মেডেন ওভার করার পথে প্রথম ও শেষ বলে এ দুজনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন মাদুশঙ্কা।

এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার দুশ্চিন্তার কারণ তাদের ব্যাটিং। তারপরও শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২১০ রানের লক্ষ্যটিকে সহজ মনে হচ্ছিল। সেটাকেই কঠিন বানিয়ে ফেললেন অজি টপ অর্ডার। ওয়ার্নার ৬ বলে ১১ রান করলেও স্মিথ ফেরেন রানের খাতা না খুলেই।

২৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রতিরোধ গড়েছেন মিচেল মার্শ। নিজে ফিফটি করার পাশাপাশি লাবুশেনকে নিয়ে গড়েন ৫০ রানের জুটি।১২তম ওভারে ভেল্লালেগের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৩৯ বলে ৫০ করেন মার্শ। বিশ্বকাপে এটিই প্রথম ফিফটি মার্শের।

দলীয় ৮১ রানে দুর্ভাগ্যজনক রান আউট হয়ে মিচেল মার্শ ফিরে যাওয়ার পর ক্রিজে আসেন অজি উইকেটটকিপার ব্যাটার জশ ইংলিস। নেমেই বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকেন। একপাশ ধরে রাখা লাবুশেনকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটি তুলে নিলেন এই ব্যাটসম্যান। লাহিরু কুমারার বলে দৃষ্টিনন্দন চার মেরে ৪৬ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন তিনি। ক্যারিয়ারের এটি তার দ্বিতীয় ফিফটি।

অজি ইনিংসটি ধরে রেখেছিলেন লাবুশেন। ৭৭ রানের জুটি গড়েন ইংলিসের সঙ্গে। ৪০ রান করে তিনি আউট হলে বাকি কাজটুকু সারেন ম্যাক্সওয়েল। ৩১ রানে অপরাজিত থেকে ৫ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। মাদুশঙ্কা ৩টি আর ভেল্লালাগে ১টি উইকেট নেন শ্রীলঙ্কার হয়ে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *