তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নামল ৬.১ ডিগ্রিতে

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

দুইদিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর আবারও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে শীতের জেলা পঞ্চগড়। শনিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। 

শুক্রবার অঞ্চলটিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরও দুয়েকদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।

সপ্তাহজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে ঘনকুয়াশা আর হিমশীতল বাতাস বয়ে চলেছে অবিরাম। এতে হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। তবে প্রতিদিনের মত শনিবার সকাল ৯টার পর সূর্যের মুখ দেখা দিয়েছে। ঝলমলে রোদে স্থানীয়দের মাঝে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে। কিন্তু টানা শৈত্যপ্রবাহে ছিন্নমূল, খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বলেন, শনিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আরও দুয়েকদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পঞ্চগড়ে বইছে কনকনে উত্তরের শীতল বাতাস। সকাল পর্যন্ত ভারী কুয়াশা ঝরতে থাকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফোটার মতো। সেই সঙ্গে আছে উত্তরের কনকনে শীতল বাতাস। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে জেলার দুঃস্থ ও খেটে খাওয়া লোকজন। কনকনে শীতে সাধ্যমতো গরম কাপড় গায়ে জড়িয়েই তারা বেরিয়েছে কাজে। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। 

উত্তরের সীমান্ত জনপদ পঞ্চগড়ে শীতের তাণ্ডব দেশের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ঘন কুয়াশা এবং পাহাড় থেকে নেমে আসা হিমেল হাওয়া বইতে থাকায় সীমান্তবর্তী এই জনপদের মানুষের জীবনযাত্রাকে স্থবির করে ফেলেছে। অব্যাহত শীতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় অচল হতে বসেছে। বিশেষ করে ছিন্নমূল এবং খেটে খাওয়া মানুষজন পড়েছে বিপাকে।

একদিকে কর্মহীন হয়ে পড়া, অপরদিকে শীতজনিত বিভিন্ন রোগবালাই মানুষকে অসহায় করে ফেলেছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষদের দুর্ভোগ চরমে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

পঞ্চগড় শহরের হোটেল শ্রমিক শরিফুল ইসলাম জানান, শীতে কাজে যেতে কষ্ট হচ্ছে। কাজ কর্ম একেবারেই কমে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।

রামের ডাঙ্গা এলাকার দিনমজুর আকবর আলী বলেন, গত ১৫ দিন ধরে ঠান্ডার কারণে তেমন কোনও কাজ মিলছে না।

হরেক মালের ব্যবসায়ী সুলতান জানান, শীতের মধ্যেই সাইকেলে করে মালামাল নিয়ে গ্রামে যেতে হচ্ছে। কিন্ত তীব্র শীত এবং ঘন কুয়াশার কারণে টিকে থাকায় মুশকিল। বেচাকেনাও নেই।

পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মনোয়ারুল ইসলাম জানান, রোটা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে শিশু ডায়রিয়া ও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের চিকিৎসা এবং সুরক্ষিত রাখার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। তবে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ রোগীকে মেঝেতে ভর্তি করতে হচ্ছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলছেন,  ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির ১৪ তারিখ পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে তা দেশের সর্বনিম্ন হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে। শেষ জানুয়ারিতে একাধিক শৈতপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তখন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রিতে নেমে যেতে পারে।  

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর শীত প্রবণ এই এলাকার মানুষের কথা ভেবে সরকারিভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সুরক্ষিত রাখা হয়। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দ চেয়ে বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে। শীতার্ত মানুষের পাশে এগিয়ে আসার জন্য সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী আনিস জানান, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে এই উপজেলায়। পাহাড়ি হিমেল হাওয়া বইতে থাকায় কর্মজীবি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন। শীতের সুরক্ষার পাশাপাশি অভাবি মানুষের খাদ্য নির্ভরতা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *