রাফসানের অডি গাড়ি কেনা এবং ঋণখেলাপি বাবা

:: সাইয়েদ আবদুল্লাহ ::

একটু অনুসন্ধান করে একটা আনএক্সপেক্টেড জিনিস জানতে পেলাম। ইউটিউবার রাফসান দ্যা ছোটভাই সেদিন দেখলাম তার বাবা-মাকে সারপ্রাইজ দিতে খুবই এক্সপেনসিভ দামের অডি গাড়ি গিফট করলো। (এক্সাক্ট গাড়ির মডেলটা যেহেতু সে ডিসক্লোজ করেনি, তাই গাড়ির এক্সাক্ট দামটা বাংলাদেশে কত, তা নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। সময় টিভি ৯ মে, ২০২৪ তারিখে রাফসানের ওই গাড়ি সারপ্রাইজ দেওয়া নিয়ে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেই রিপোর্টে বলা আছে ওই অডি গাড়ির দাম ২ কোটির কম না। সময় টিভির প্রতিবেদনের ওই অংশটা কমেন্ট সেকশনে সংযুক্ত করে দিলাম। হোয়াটএভার, ওই গাড়িটার দাম সময় টিভির রিপোর্ট অনুযায়ী যদি ২ কোটি না-ও হয়, স্টিল রাফসানের ওই গাড়িটা খুবই লাক্সারিয়াস এবং সেটার দামও ৭০ লাখ থেকে ১ কোটির ভেতর হওয়ার কথা। গাড়ির দাম ২ কোটিই হোক, কিংবা ১ কোটি অথবা ৭৫ লক্ষ, স্টিল এটা খুবই এক্সপেনসিভ গাড়ি এবং সেটা এই লেখাটার মূল বক্তব্যের ওপর ইফেক্ট ফেলে না)

এত এক্সপেন্সিভ গাড়ি গিফট করার ব্যাপারটা নিয়ে হুলস্থূল বেঁধে গেলো। পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথা। যাইহোক, আমার অবস্থানটা ক্লিয়ার করে রাখি শুরুতেই। রাফসান ২ কোটি কেন, সে যদি কোন দুর্নীতি না করে ২০০ কোটি দিয়েও কাউকে কোনকিছু গিফট করে, তাতে আমার কোনই সমস্যা নাই। সে তার নিজের মত করে এগিয়ে যাক, নিজের ড্রিমগুলো পূরণ করতে থাক, এটা দেখতে বরং ভালো লাগবে।

আমার এই লেখার টার্গেট ভিন্ন এঙ্গেল থেকে।

ধরেন, আপনার পরিবার এই মুহূর্তে একটা ব্যাংক থেকে সোয়া তিন কোটি টাকার ঋণখেলাপি। সেই টাকা আপনার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে পরিশোধ করছেনা। ব্যাংকের লোন পেমেন্ট না করে ঝুলায়ে রেখে অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে টাকা উড়ায়ে বেড়াচ্ছেন আপনি এবং সবাইকে দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন সেগুলো— কেমন লাগবে সেটা দেখতে?

Jack & Spencer Accessories Limited এর নামে একটি গার্মেন্টস এক্সেসরিস কোম্পানি ট্রাস্ট ব্যাংকের মিলেনিয়াম কর্পোরেট শাখা থেকে ২.৫ কোটি টাকা লোন নিয়েছিল ২০১৬ সালে। সেই কোম্পানির শতভাগ মালিক রাফসানের বাবা এবং মা। তার বাবা মো: জাকারিয়া ওই কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর(এমডি) এবং তার মা কাজী নুরুন্নেছা সেহেলি ওই কোম্পানির ডিরেক্টর।

এখন পযর্ন্ত ব্যাংকের একটা টাকাও লোন পরিশোধ করে নাই তারা। সেই লোন আজ অবধি ইন্টারেস্টসহ বেড়ে হয়েছে সোয়া তিন কোটি। ট্রাস্ট ব‍্যাংক ওই কোম্পানি এবং সেটার মালিক রাফসানের বাবা-মা এর বিরুদ্ধে মামলা করে। কোর্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে তাদেরকে কোর্টে আত্মসমর্পণ করার নোটিফিকেশন জারি করেছিলো জাতীয় পত্রিকায়। পত্রিকার সেই নোটিফিকেশন এর ছবিও আমি দেখেছি। এরপর অভিযুক্তরা সমর্পণ করে কোর্ট থেকে জামিন নেন।

লোনের এগেইনেস্টে যেসব সম্পদ মর্টগেজ রাখা ছিলো ব্যাংকের কাছে, ব্যাংক ২০২২ সালে সেইগুলো নিলামে তুলে বিক্রি করারও প্রক্রিয়া গ্রহণ করে। সেই নিলাম বিজ্ঞপ্তিও জাতীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। অনুসন্ধান করতে গিয়ে সেই কপিও দেখেছি আমি।

পরবর্তীতে রাফসানের বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করে সেই নিলাম আটকানো হয়। এইজন্য ব্যাংক নিলাম থেকে সম্পদ বিক্রি করে টাকা উদ্ধার করতে পারেনাই।

ব্যাংককে বারবার করে তার বাবা-মা কমিটমেন্ট দিয়েছে লোন পরিশোধের, কিন্তু আজ অবধি কোন টাকা পরিশোধ করেনাই। বর্তমানে এই লোনের টাকা আদায় করতে ঢাকার অর্থঋণ আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে। ২০১৬ সালে যেই লোন ছিলো ২.৫ কোটি, বর্তমানে ইন্টারেস্টসহ সেই লোন দাঁড়িয়েছে ৩.১৫ কোটি। মানে আজ অবধি ৩.৫ কোটি টাকার ঋণখেলাপী হলো রাফসানের পরিবার।

কেউ আবার প্রশ্ন তুলতে পারেন, রাফসানের বাবা-মা ঋণখেলাপী, এটা তাদের দায়। তাহলে রাফসান এরকম লাক্সারিয়াস গাড়ি তার বাবা-মাকে গিফট করলে প্রবলেম কোথায়?

Jack & Spencer Accessories Limited এর নামে একটি গার্মেন্টস এক্সেসরিস কোম্পানি ট্রাস্ট ব্যাংকের মিলেনিয়াম কর্পোরেট শাখা থেকে ২.৫ কোটি টাকা লোন নিয়েছিল ২০১৬ সালে। সেই কোম্পানির শতভাগ মালিক রাফসানের বাবা এবং মা। তার বাবা মো: জাকারিয়া ওই কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর(এমডি) এবং তার মা কাজী নুরুন্নেছা সেহেলি ওই কোম্পানির ডিরেক্টর। এখন পযর্ন্ত ব্যাংকের একটা টাকাও লোন পরিশোধ করে নাই তারা। সেই লোন আজ অবধি ইন্টারেস্টসহ বেড়ে হয়েছে সোয়া তিন কোটি। ট্রাস্ট ব‍্যাংক ওই কোম্পানি এবং সেটার মালিক রাফসানের বাবা-মা এর বিরুদ্ধে মামলা করে। কোর্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে তাদেরকে কোর্টে আত্মসমর্পণ করার নোটিফিকেশন জারি করেছিলো জাতীয় পত্রিকায়। পত্রিকার সেই নোটিফিকেশন এর ছবিও আমি দেখেছি। এরপর অভিযুক্তরা সমর্পণ করে কোর্ট থেকে জামিন নেন। লোনের এগেইনেস্টে যেসব সম্পদ মর্টগেজ রাখা ছিলো ব্যাংকের কাছে, ব্যাংক ২০২২ সালে সেইগুলো নিলামে তুলে বিক্রি করারও প্রক্রিয়া গ্রহণ করে। সেই নিলাম বিজ্ঞপ্তিও জাতীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। অনুসন্ধান করতে গিয়ে সেই কপিও দেখেছি আমি। পরবর্তীতে রাফসানের বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করে সেই নিলাম আটকানো হয়। এইজন্য ব্যাংক নিলাম থেকে সম্পদ বিক্রি করে টাকা উদ্ধার করতে পারেনাই।

কাগজে কলমে না হলেও অবশ্যই প্রবলেম আছে। রাফসান যখন তার বাবা-মাকে এত এক্সপেন্সিভ অডি গাড়ি গিফট করছে, এর মানে হলো তাদের পরিবারের হাতে টাকা আছে। শুধু ওই গাড়ি গিফট করাটাই না, রাফসান দেখলাম পরবর্তীতে মা দিবসে একটা ভিডিও বানিয়েছে। মাকে নিয়ে একটা সোনার শোরুমে গিয়ে ৫ লক্ষ টাকার সোনার গহনা গিফট করলো সে। তার সাবস্ক্রাইবারদের বাইক, এসি, আইফোনের মত দামি দামি গিফট গিভঅ্যাওয়ে করে সে। আবার ঘোষণা দিয়েছে নেক্সট টাইম কিছুদিনের ভেতরেই সাবস্ক্রাইবারদেরকে সে গাড়ি গিভঅ্যাওয়ে করবে। তাছাড়া তার লাইফস্টাইল খেয়াল করতে দেখবেন যথেষ্ট ঠাঁটবাট নিয়েই চলাফেরা করে সে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে তাদের পরিবারের হাতে টাকা আছে। টাকা থাকা সত্ত্বেও তারা খেলাপীঋণ পরিশোধ করছেনা।

জাস্ট চিন্তা করেন রাফসান কিন্তু এভাবেও ভাবতে পারতো এই এতো টাকার সুপার লাক্সারিয়াস গাড়ি গিফট না করে চলাফেরার জন্য প্রয়োজনীয় সাধারণ গাড়ি কিনে কিংবা এত এত দামি গিফট গিভঅ্যাওয়ে না করে এই টাকাগুলো দিয়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা যায় কীভাবে।

অবশ্য সেখানে একটা সমস্যা ছিলো তার। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করার ভিডিওটা হয়ত পাবলিক করতে পারতো না, যেভাবে অডি গাড়ি সারপ্রাইজের ভিডিওটা আপলোড করে মিলিয়ন ভিউ অর্জন করা যায়। এই ভিডিওটাও যতবেশি মানুষ দেখছে, সেখান থেকেও তার ইনকাম হচ্ছে।

রাফসান এর ইস্যুটা জাস্ট একটা উদাহরণ। ইনফ্যাক্ট দেশে বিশাল বড় বড় ঋণখেলাপী আছে যারা এভাবেই দেশের মানুষের টাকা মেরে দেয়। রাফসানের পরিবার ওই রাঘববোয়ালদের তুলনায় পোনামাছও না। কোটি কোটি টাকা খেলাপীঋণ নিয়েও দেশের ভেতর তারা লাক্সারিয়াস লাইফ লিড করে বেড়ায়। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে তারা। এসব নিয়ে তাদের কোন রিমোর্সও থাকেনা। কারণ জানে যে তারা দিনশেষে ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাবে। আর ব্যাংকের টাকা এভাবে মেরে দিয়ে তাদের হাতে প্রচুর টাকা থাকে। সেটা দিয়ে কয়েক জেনারেশনের বসে বসে খাওয়ার ব্যবস্থাও তারা করে ফেলে।

আরেকটা ব্যাপার হলো, এই মানুষগুলো এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা কত সহজে মেরে দেয়, সেটা করেও বুক উঁচু করে ঘুরে বেড়ায়। অথচ একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে আপনি ব্যাংকে জাস্ট পাঁচ-দশ লাখ টাকার লোন আনতে যান, দেখেন দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে জুতার তলা ক্ষয় হয়ে যাবে। আর এই অল্প কিছু টাকার লোন যদি ঠিক সময়ে পরিশোধ করতে না পারেন, তাহলে দেখবেন কী কিয়ামত ঘটে যায়!

আমার প্রত্যাশা থাকবে রাফসান যেহেতু বহু টাকা কামায় এবং সলভেন্ট পরিবার তারা, তারা যেন ব্যাংকের লোনটা পরিশোধ করে দেয় দ্রুতই।

এইযে লোনটা নিয়েছে, এই টাকাটা কিন্তু দেশের মানুষের টাকা। এভাবেই প্রতিবছর বিভিন্ন ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপী ঋণ থাকে, যার ইমপ্যাক্ট পড়ে দেশের ওভারঅল অর্থনীতিতে। বৃহদার্থে এর দ্বারা ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে দেশের সাধারণ মানুষের কপালে।

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *