খাদিজাকে মুক্তি দিতে আহবান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় এক বছর ধরে কারাবন্দি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

সোমবার অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অন্তর্বর্তীকালীন উপ-আঞ্চলিক পরিচালক নাদিয়া রহমান এই আহ্বান জানান।

এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘খাদিজাকে ১ বছর ধরে কারাবন্দী করে রাখা এবং বারবার তার জামিন নামঞ্জুর করা স্পষ্টভাবে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের অযৌক্তিক লঙ্ঘন।’

এতে আরও বলা হয়, ‘খাদিজার এখন নিপীড়নমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে থেকে ভাগ্যের দিকে না তাকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি নেওয়ার জন্য পড়াশোনা করার কথা ছিল।’

নাদিয়া রহমান বলেন, ‘বছরব্যাপী কারাভোগ ও খাদিজার জামিনের আবেদন বারবার প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্পষ্ট লঙ্ঘন। তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে, তার ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করতে হবে। সমালোচনামূলক কথার জন্য তাকে নির্বিচারে আটক করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘খাদিজাসহ যারা নির্বিচারে বাংলাদেশে আটক আছেন, তাদের সবাইকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। খাদিজার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে নিয়মিত পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল খাদিজার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন জোগাড় করতে এবং তার অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় খাদিজাতুল কুবরাকে ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়। তখন তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। গত এক বছরে তার জামিন হয়নি। এক বছর ধরে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তবে তিনি যে মামলায় গ্রেফতার আছেন, সেই মামলার বিচার শুরুই হয়নি। 

এদিকে গত জুলাইয়ে আপিল বিভাগের এক আদেশে আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত তার জামিনসংক্রান্ত আবেদনের শুনানি স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে, এর আগে তার জামিনসংক্রান্ত আবেদন শুনানির সুযোগ নেই।

খাদিজার জামিনের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তাঁর আইনজীবী বিএম ইলিয়াস কচি বলেন, আপিল বিভাগ খাদিজার জামিন আবেদনের শুনানি মুলতবি রাখায় জামিন স্থগিত থাকছে। তবে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যকর করলে নতুন প্রেক্ষাপটে খাদিজার জামিনের বিষয়ে উচ্চ আদালতে ফের আবেদন করা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদী ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর মেজর দেলোয়ার হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক ভিডিও দেখতে পান। সেখানে সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বাংলাদেশ বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন।

এ ছাড়া তারা উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করছে। এটা ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯, ৩১ ও ৩৫ ধারার অপরাধ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে গত বছরের ২৭ আগস্ট মিরপুরের বাসা থেকে খাদিজাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সঞ্চালক খাদিজা গ্রেফতার হলেও মেজর দেলোয়ার এখনো বিদেশে অবস্থান করছেন। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *