জগন্নাথের শিক্ষার্থী খাদিজার জামিন, মুক্তিতে বাধা নেই

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় প্রায় ১৬ মাস ধরে কারাবন্দি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে জামিন দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখেন। এই আদেশের ফলে তার মুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম আর খাদিজার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী বি এম ইলিয়াস কচি।

বিচারিক আদালতে দু’বার খাদিজার জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। অন্যদিকে চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে খাদিজা আবেদন করেন, যা রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের সঙ্গে গত ১০ জুলাই আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আপিল বিভাগ আবেদন শুনানি চার মাসের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেন। ফলে এই সময় পর্যন্ত খাদিজার জামিন স্থগিতই থাকে।

আগের ধারাবাহিকতায় খাদিজার জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আজ আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম শুনানি করেন। খাদিজার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী বি এম ইলিয়াস কচি ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় খাদিজাতুল কুবরাকে ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়। তখন তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। গত এক বছরে তার জামিন হয়নি। গত ১৬ মাস ধরে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তবে তিনি যে মামলায় গ্রেফতার আছেন, সেই মামলার বিচার শুরুই হয়নি। 

এদিকে গত জুলাইয়ে আপিল বিভাগের এক আদেশে আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত তার জামিনসংক্রান্ত আবেদনের শুনানি স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে, এর আগে তার জামিনসংক্রান্ত আবেদন শুনানির সুযোগ নেই।

খাদিজার জামিনের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তাঁর আইনজীবী বিএম ইলিয়াস কচি বলেন, আপিল বিভাগ খাদিজার জামিন আবেদনের শুনানি মুলতবি রাখায় জামিন স্থগিত থাকছে। তবে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যকর করলে নতুন প্রেক্ষাপটে খাদিজার জামিনের বিষয়ে উচ্চ আদালতে ফের আবেদন করা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদী ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর মেজর দেলোয়ার হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক ভিডিও দেখতে পান। সেখানে সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বাংলাদেশ বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন।

এ ছাড়া তারা উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করছে। এটা ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯, ৩১ ও ৩৫ ধারার অপরাধ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

সঞ্চালক খাদিজা গ্রেফতার হলেও মেজর দেলোয়ার এখনো বিদেশে অবস্থান করছেন। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *