:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপে শুভসূচনা হলো নিউজিল্যান্ডের। এই জয়ে গত বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের মধুর প্রতিশোধ নিল কিউইরা।
ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্রর জোড়া সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে নিউজিল্যান্ড ২০২৩ বিশ্বকাপে তাদের সেরা দল হিসেবে জানান দিল।
বৃহস্পতিবার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। ওপেনিং জুটিতে ৪০ রানের ভালো জুটি পেলেও পরে নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে তারা। ওপেনার ডেডিভ মালান ১৪ ও জনি বেয়ারস্টো ৩৩ রান করে ক্যাচ দেন। তারা বিদায় নিলে চারে নামা হ্যারি ব্রুক ২৫ রান যোগ করেন। এরপর মঈন আলী ১১ রান করে ফেরেন।
দলের হয়ে সেরা জুটি দেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার জো রুট ও জস বাটলার। তারা ৭৮ রান যোগ করেন।
১১৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ড যখন স্বস্তিতে ঠিক সেময় জস বাটলারকে নিয়ে দুর্দান্ত এক জুটি গড়েন জো রুট। পঞ্চম উইকেটে ৭০ রানের জুটি গড়েন তাঁরা। তাঁদের জুটি ইংল্যান্ডকে বড় সংগ্রহের আশা দেখাচ্ছিল। আর নিউজিল্যান্ডকে জুটি না ভাঙার আক্ষেপে পোড়াচ্ছিল। ৩৩ তম ওভারে হেনরির হাতে বল তুলে দিলেন অধিনায়ক টম লাথাম। ওভারের দ্বিতীয় বলেই লাথামের আস্থার প্রতিদান দিলেন কিউই পেসার। দলের আতঙ্ক হয়ে ওঠা বাটলারকে ৪৩ রানে ফিরিয়ে দিলেন তিনি। পরে ইংল্যান্ডের শেষ স্বীকৃত ব্যাটার স্যাম কারানকেও আউট করেন তিনি। দুই দল মিলিয়ে তাঁর চেয়ে আর কোনো বোলার বেশি উইকেট পায়নি। এক মেডেন দিয়ে ১০ ওভারে ৪৮ রানে ৩ উইকেট নেন।
পাঁচে নামা অধিনায়ক বাটলার ৪২ বলে দুটি করে চার ও ছক্কায় ৪৩ রান করে আউট হন। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৭ রানের ইনিংস খেলেন জো রুট। তিনি ৮৬ বল খেলে চারটি চার ও এক ছক্কায় ওই রান করেন। এরপর লিয়াম লিভিংস্টোন (২০) ও স্যাম কারেন (১৪), আদিল রশিদ (১৫) ও মার্ক উডের (১৩) ছোট ছোট সংগ্রহে লড়াই করার জন্য ৯ উইকেটে ২৮২ রানের পুঁজি পায়।
কিন্তু লড়াই করার পুঁজিতে লড়তে পারেননি চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বোলাররা। কিউইদের স্কোরবোর্ডে রান ১০ হতেই দলটির ওপেনার উইল ইয়ংকে তুলে নেন স্যাম কারেন। ইয়ং গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফেরেন। এরপর ডেভন কনওয়ে ও তিনে নামা রাচিন রবিন্দ্র সেঞ্চুরি করে ২৭৩ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে জয় এনে দেন।
ওপেনার কনওয়ে খেলেন ১২১ বলে ১৫২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। আইপিএলের সুবাদে ভারতের জল-হাওয়া পরিচিত হয়ে যাওয়া এই ব্যাটার ১৯টি চার ও তিনটি ছক্কা তোলেন। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামস না থাকায় তিনে ব্যাট করতে নেমে তরুণ অলরাউন্ডার রাচিন রবিন্দ্র ১২৩ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। তার ৯৬ বলে সাজানো ইনিংসে ১১টি চার ও পাঁচটি ছক্কার শট ছিল।
দেশের হয়ে কনওয়ে ও রবিন্দ্র ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি দিয়েছেন। এর আগে ২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জেমস মার্শাল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ২৭৪ রানের জুটি গড়েছিলেন। যেটি তাদের সবচেয়ে বড় ওপেনিং জুটি। এবার তিনে দেশের হয়ে সর্বাধিক রানের জুটি দিলেন রাচিন ও কনওয়ে। সেঞ্চুরির সঙ্গে একটি উইকেট নেওয়ায় রাচিন ম্যাচ সেরা হয়েছেন। ব্ল্যাক ক্যাপসদের হয়ে ম্যাট হেনরি তিন উইকেট নিয়েছেন। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন মিশেল সাটনার ও গ্লেন ফিলিপস।
কনওয়ে-রবীন্দ্রর সেঞ্চুরিতে যত রেকর্ড
কনওয়ে ও রাবীন্দ্র বিশ্বকাপের চতুর্থ সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড গড়েছেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে গ্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলস জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৭২ রানের জুটি গড়েছিলেন। সৌরভ গাঙ্গুলি ও রাহুল দ্রাবিড় ১৯৯৯ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩১৮ রানের জুটি দিয়েছিলেন।
২০১১ বিশ্বকাপে তিলেকারত্নে দিলশান ও উপুল থারাঙ্গা গড়েছিলেন ২৮২ রানের জুটি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এসেছিল তাদের ওই জুটি। এবার ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রাবীন্দ্র ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দিলেন ২৭৩ রানের জুটি। ২০১৫ বিশ্বকাপে ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৬০ রানের জুটি গড়েছিলেন।
বিশ্বকাপ অভিষেকে তৃতীয় কনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি পেয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাচিন রাবীন্দ্র। ২৩ বছর ৩২১ দিনে সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির রেকর্ড বিরাট কোহলির। তিনি ২০১১ বিশ্বকাপে ২২ বছর ১০৬ দিনে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন। ১৯৯২ বিশ্বকাপ অভিষেকে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ২৩ বছর ৩০১ দিনে।
বিশ্বকাপ অভিষেকে সবচেয়ে বেশি বয়সে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছেন ডেভন কনওয়ে। ২০০৭ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের জেরমি বেরি ৩৩ বছর ১০৫ দিনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। কনওয়ে ৩২ বছর ৮৯ দিনে সেঞ্চুরি পেলেন।
ইংল্যান্ড একাদশ : জনি বেয়ারস্টো, দাভিদ মালান, জো রুট, হ্যারি ব্রুক, জস বাটলার (অধিনায়ক), লিয়াম লিভিংস্টোন, মঈন আলী, স্যাম কারান, ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ ও মার্ক উড।
নিউজিল্যান্ড একাদশ : ডেভন কনওয়ে, উইল ইয়াং, ড্যারিল মিচেল, টম ল্যাথাম, গ্লেন ফিলিপস, জিমি নিশাম, মিচেল স্যান্টনার, রাচিন রবীন্দ্র, ম্যাট হেনরি, ট্রেন্ট বোল্ট ও মার্ক চাপম্যান।