ডাচদের হারিয়ে জয়ের দেখা মিলল ইংল্যান্ডের

:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::

বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসকে ১৬০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে অবশেষে জয়ের দেখা মিলল ইংল্যান্ডের। এই জয়ে পয়েন্ট তালিকার ৭ম স্থানে উঠে এসেছে ইংলিশরা।

জয়ের জন্য ৩৪০ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মঈন আলী ও আদিল রশিদের স্পিনের সামনে ৩৭.২ ওভারে ৭৬ বল বাকি থাকতেই ১৭৯ রানে অলআউট হয়ে যায় নেদারল্যান্ডস।

বেন স্টোকসের চলতি বিশ্বকাপে প্রথম শতক, ডেভিড ম্যালান ও ক্রিস ওকসের অর্ধশতকে আগে ব্যাট করে ৩৩৯ রান তোলে ইংল্যান্ড।

ইংল্যান্ডের দেয়া ৩৪০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৫ রানেই বিদায় নেন ডাচ ওপেনার ম্যাক্স। তিনে নামা কলিন অ্যাকারম্যান ফেরেন শূন্য রানে। চারে নেমে ওপেনার ওয়েসলে বারেসির জুটি গড়েন অ্যাঙ্গলব্রেখট। তবে রান আউট হয়ে বারেসি (৩৭) ফিরে গেলে ভাঙে জুটি। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অ্যাঙ্গলব্রেখটও। তিনি বিদায় নেন ৩৩ রান করে। এরপর বাস ডি লিড এসে করেন ১০ রান।

ষষ্ঠ উইকেটে স্কট এডওয়ার্ডসের সঙ্গে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৫৯ রানের জুটি গড়েন নিদামানুরু। এডওয়ার্ডসকে ৩৮ রানে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন মঈন। পরবর্তীতে নিদামানুরু ছাড়া আর কেউ টিকতে পারেননি। অপরাজিত থাকা নিদামানুরু করেন ৩৪ বলে সর্বোচ্চ ৪১ রান। এঙ্গেলব্রেখট ও বাস ডি লিডি দ্রুত ফেরার পর তেজা নিদামানুরু ও অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস অপেক্ষায় রাখেন ইংল্যান্ডকে। নিদামানুরু ৩টি ছক্কায় ঝোড়ো ব্যাটিং শুরু করেছিলেন। কিন্তু একদিকে তাঁকে রেখে গুটিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস, ১৬ রানেই শেষ ৫ উইকেট হারায় তারা। ইংলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট শিকার করেন মঈন আলী ও আদিল রশিদ। ডেভিড উইলি নেন দু’টি উইকেট। এছাড়া ক্রিস ওকস পান একটি উইকেট।

টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের সপ্তম ওভারে গিয়ে নিজেদের প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। আরিয়ান দত্তের বলে ব্যাক ফুটে গিয়ে প্যাডেল সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে পল ভ্যান ম্যাকেরিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ১৫ রান করা বেয়ারস্টো।

৩৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মালান। এবারের বিশ্বকাপে এটি তার তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি। এদিকে তিনে নামা জো রুটকে নিয়ে বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিলেন মালান। তাদের দু’জনের ৮৫ রানের জুটি ভাঙেন লোগান ভ্যান বিক। ডানহাতি এই পেসারের রিভার্স স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন ২৮ রান করা রুট। ডানহাতি এই ব্যাটারের পর সেঞ্চুরির পথে থাকা মালান রান আউটে কাঁটা পড়ে সাজঘরে ফেরেন। আউট হওয়ার আগে ৮৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন মালান।

বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি পাঁচ নম্বরে নামা হ্যারি ব্রুক। বাস ডি লিডের করা স্টাম্পের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে কলিন অ্যাকারম্যানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১১ রান করা ব্রুক। ক্রিজে এসে আরও একবার হতাশ করেছেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। ভ্যান ম্যাকেরিনের স্লোয়ার বলে মিড অফে দাঁড়িয়ে থাকা নিদামানুরুর হাতে ক্যাচ দেন ৫ রান করা বাটলার।

ব্যর্থতার পাল্লা ভারী করেন মঈন আলীও। আরিয়ানের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ১৪ রান করা এই বাঁহাতি ব্যাটার। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ৫৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন স্টোকস। ওকসকে সঙ্গে নিয়ে সপ্তম উইকেটে গড়েন ১২৯ রানের জুটি। চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে দিয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগারও স্পর্শ করেন স্টোকস। ভ্যান ম্যাকেরিনের বলে রিভার্স ‍সুইপ করে চার মেরে ৭৮ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন তারকা এই অলরাউন্ডার।

স্টোকসকে দারুণ সঙ্গ দেন ক্রিস ওকস। বলের সাথে পাল্ল দিয়ে রান করেন এই ইংলিশ অলরাউন্ডার। সেই সাথে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি। ডি লিডের বলে আউট হওয়ার আগে ৪৫ বলে ৫১ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেন ওকস। ইনিংসের শেষ ওভারের চতুর্থ বলে ভ্যান বিককে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন ১০৮ রানের ইনিংস খেলা স্টোকস।

স্টোকস শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ৮৪ বলে খেলেন ১০৮ রানের ইনিংস। তার ব্যাট থেকে ছয়টি করে চার ও ছক্কার শট আসে। ওকস ৪৫ বলে ৫১ রান করে আউট হন। পাঁচটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা মারেন এই পেস অলরাউন্ডার।      

নেদারল্যান্ডসের হয়ে অলরাউন্ডার বাস ডি লিড ৩ উইকেট নিলেও ১০ ওভারে দেন ৭৪ রান। এছাড়া আরিয়ান দত্ত ও লগান ফন বিক দুটি করে উইকেট নেন।      

শনিবার ইডেন গার্ডেনে পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ কিছু করতে পারলে চ্যাম্পিন্স ট্রফির টিকিট কাটতে পারবে ইংলিশরা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আশা অনেকটাই কমে গেছে ডাচদের। নিজেদের শেষ ম্যাচে তারা খেলবে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে আরেকটি অঘটন ঘটালেও কয়েকটি দলের সঙ্গে পয়েন্ট ও নেট রান রেটের হিসাব-নিকাশও আছে তাদের। তবে ইংল্যান্ডের এই জয় আবার বাংলাদেশের জন্যও ঝুঁকির। ৮ ম্যাচে দুই জয়ে ৪ পয়েন্টে রানরেটের ব্যবধানে বাংলাদেশকে টপকে পয়েন্ট টেবিলের সাতে চলে এসেছে জশ বাটলারের দল। আটে চলে গেছে বাংলাদেশ। সমান ৪ পয়েন্ট হলেও রানরেটের কারণে শ্রীলঙ্কা আছে টেবিলের নয়ে, নেদারল্যান্ডস চলে গেল তলানিতে। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৩৯/৯ (স্টোকস ১০৮, ম্যালান ৮৭, ওকস ৫১; ডি লিডি ৩/৭৪, আরিয়ান ২/৬৭, ফন বিক ২/৮৮)

নেদারল্যান্ডস: ৩৭.২ ওভারে ১৭৯ (নিদামানুরু ৪১*, এডওয়ার্ডস ৩৮, বারেসি ৩৭; মঈন ৩/৪২, রশিদ ৩/৫৪, উইলি ২/১৯)

ফল: ইংল্যান্ড ১৬০ রানে জয়ী

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *