ডেঙ্গুতে মৃত্যু ১০০০ ছাড়িয়েছে

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ১০০০ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ১৭ জন মারা গেছেন। এর ফলে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১০০৬ জন।

রাজধানীর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে গ্রামে। মৃত্যুও বেশি গ্রামে। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ২ লাখ ৬ হাজার ২৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

রোববার (১ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৮৮২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬২৯ জন ও ঢাকার বাইরের দুই হাজার ২৫৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৭ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা নয়জন ও ঢাকার বাইরের আটজন।

চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই লাখ ছয় হাজার ২৮৮ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৩ হাজার ৮৫১ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন এক লাখ ২২ হাজার ৪৩৭ জন।

এর মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন এক লাখ ৯৫ হাজার ৯২৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮০ হাজার ৮৩ জন এবং ঢাকার বাইরের এক লাখ ১৫ হাজার ৮৪২ জন।

বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নয় হাজার ৩৫৭ জন ডেঙ্গুরোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় তিন হাজার ১২০ জন এবং ঢাকার বাইরে ছয় হাজার ২৩৭ জন।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইতে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন শনাক্ত এবং প্রাণহানি ৩৪২ জন। সেপ্টেম্বরে শনাক্ত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন এবং ৩৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।।

এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার অন্য বছরের তুলনায় বেশি। আর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং মারা গেছেন শক সিনড্রোমে। বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার ছিল শূন্য দশমিক এক থেকে শূন্য দশমিক দুই শতাংশের মধ্যে। এবার সেই হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এ বছর মোট মৃত্যুর ৬৪ শতাংশ নারী এবং ৩৬ শতাংশ পুরুষ। তবে আক্রান্ত বেশি পুরুষ, ৫৫ শতাংশ। শিশু আক্রান্তের হার ২১ শতাংশ।

২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওই বছর ডেঙ্গুতে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০০২ সালে মৃত্যু হয় ৫৮ জনের। এরপর গত ১৫ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৫ এর নিচে। তবে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ১ লাখ ১ হাজার ৩৪৫ জন। এর মধ্যে মারা যান ১৭৯ জন।

দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে ২০১৪ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল সবচেয়ে কম। ওই বছর ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যু নেই, তবে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৭৫ জন। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ৬২ হাজার ৩৮২ জন আক্রান্ত হন এবং মৃত্যু হয় ২৮১ জনের। চলতি বছর প্রথম সাত মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ওই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল। এ বছর এই পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯ হাজার ৭১৬ জন। দৈনিক আক্রান্তের যে তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দিচ্ছে তাতে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *