নির্বাচনে ‘কিংস পার্টি’র সবার ভরাডুবি

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত দল- তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এবারের নির্বাচনে ২৭০টি আসনে প্রার্থী দিয়ে সবগুলোতে হেরে গেছে।

কয়েকজন প্রার্থী প্রার্থী ছাড়া বাকি সবার জামানাত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। জাতীয় পার্টিকে পেছনে পেলে তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএম সংসদে বিরোধী দল হবার স্বপ্ন দেখছিল।

২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন লাভ করে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপি।

একই বছরের ১০ আগস্ট একইদিনে নতুন করে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ জাতীয়বাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্ট (বিএসপি)।

এ তিনটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকারের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপি এবারের নির্বাচনে ১৩৫টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল।

বিএনপির আরেক বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরের নেতৃত্বাধীন বিএনএম মনোনয়ন দিয়েছিল ৫৬টি আসনে আর বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ৭৯ আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল।

তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান, বিএনপির এক সময়ের প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে নির্বাচন করলেও আসতে পারেননি মূল লড়াইয়ে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে বিপুল ভোটে হেরেছেন তিনি। আসনটিতে নাহিদ ৫৮ হাজার ১২৬ ভোট পেয়ে পঞ্চমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আর ১০ হাজার ৮৫৮ ভোট পেয়েছে তৃতীয় অবস্থানে শমসের মবিন চৌধুরী। 

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার লড়ছেন এই আসনের চতুর্থবার নৌকার প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের বিরুদ্ধে। গাজীর এলাকায় শক্ত অবস্থান থাকায় তৈমুর পাত্তাই পাননি। তিনি মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। বিপরীতে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন গাজী। মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে লড়ছেন অন্তরা সেলিমা হুদা। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন আহামেদের কাছে ভরাডুবির মুখে পড়তে হয় তাকে। অন্তরা সেলিমা হুদা পেয়েছেন ৬ হাজার ৩৩৭ প্রার্থী। আর বিজয়ী প্রার্থী মহিউদ্দিন পেয়েছেন ৯৫ হাজার ৮৬০ ভোট। 

মৌলভীবাজার-২ আসনে সাবেক বিএনপির এমপি এম এম শাহীনের একসময় ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান থাকলেও এবার নৌকার কাছে বিপুল ব্যবধানে ধরাশায়ী হয়েছেন তিনি। অবশ্য ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে কারচুপির অভিযোগ তুলে তিনি ভোট বর্জন করেছেন। আসনটিতে নৌকার প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল পেয়েছেন ৭২ হাজার ৭১৮ ভোট। আর এম এম শাহীন ১১ হাজার ৪৪৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। 

নতুন নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিএনএম ৮৩ আসনে প্রার্থী দিলেও ভোটের চূড়ান্ত লড়াইয়ে ছিলেন ৫২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে আলোচনায় ছিলেন চারজন। 

বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর প্রার্থী হয়েছিলেন ফরিদপুর-১ আসনে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কাছে বিপুল ভোটে ধরাশায়ী হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি জাফর। আসনটিতে নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমান পেয়েছেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৩১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের আরিফুর রহমান দোলন পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৯৮৯ ভোট। জাফর ২২ হাজার ৪৬৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। 

সাতক্ষীরা-৪ আসনে সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত নেতা বিএনএম থেকে এ এইচ এম গোলাম রেজা লড়লেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম আতাউল হক দোলনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ই আসতে পারেননি। আসনটিতে দোলন পেয়েছেন এক লাখ ৪০ হাজার ৪৬ ভোট। বিপরীতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা এইচ এম গোলাম রেজা পেয়েছেন ৩৮ হাজার ৯৮৬।

নীলফামারী-১ আসনে বিএনএমের থেকে লড়লেও পাত্তা পাননি জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি জাফর ইকবাল সিদ্দিকী। আসটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯০২ ভোট। আর জাফর ইকবাল সিদ্দিকী ১৩ হাজার ২২৪ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।

পাবনা-২ আসনে সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী নতুন নিবন্ধিত দল বিএনএমের হয়ে ভোটযুদ্ধে নামলেও আসতে পারেননি মূল লড়াইয়ে। অবশ্য বিকেলে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন তিনি। এই আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আহমেদ ফিরোজ কবির ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৪২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম ডলি সায়ন্তনী পেয়েছেন ৪৩৮২ ভোট।

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ১২১ আসনে প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করলেও চূড়ান্ত লড়াইয়ে রয়েছেন ৮১ জন প্রার্থী। দলের সভাপতি সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ মাইজভাণ্ডারী চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নির্বাচন করলেও জয়ী হতে পারেননি। আসনটিতে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৩৭০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব তরমুজ প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৫৮৭ ভোট। আর সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ মাইজভাণ্ডারী পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ১৩৮ ভোট।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *