অর্থ পাচার মামলায় আওয়ামী সাংবাদিক দোলন কারাগারে

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

২ হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা টাইমসের সম্পাদক আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আরিফুর রহমান দোলনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

সকালে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান তিনি। দুপুরের দিকে শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নাগরিক নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) তাপস কুমার পাল।

আরিফুর রহমান দোলন ‘ঢাকা টাইমস’ এর সম্পাদক। বাংলাদেশ কৃষক লীগের সহসভাপতি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন দোলন। নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমানের কাছে তিনি পরাজিত হন।

এর আগে এই মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়ার পর আরিফুর রহমান দোলন হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের জন্য আগাম জামিন পান। ছয় সপ্তাহ পর হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তৎকালীন বিচারক এত দিন জামিনের আবেদন নিষ্পত্তি করেননি। আজ ওই আবেদনের ওপর শুনানি হয়। দোলনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট বাহারুল ইসলাম।

এদিকে এই মামলাটিতে সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খোন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই খোন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরসহ ৪৭ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল আজ। আদালত অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২২ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

গত বছর ২৫ জুন এই মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। সম্পূরক অভিযোগ পত্রে নতুন ৩৭ জন আসামি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আগের অভিযোগপত্রে ১০ জন আসামি ছিলেন।

এই মামলায় ৪৭ আসামির মধ্যে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তাঁর ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেল, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমানসহ ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী রয়েছেন।

রুবেল-বরকত ছাড়াও উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আপন ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর, তার এপিএস সত্যজিৎ মুখার্জী, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহান, খোন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর, এএইচএম ফুয়াদ, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাহিম, কামরুল হাসান ডেভিড, মুহাম্মদ আলি মিনার ও তারিকুল ইসলাম ওরফে নাসিম।

সম্পূরক চার্জশিটের নতুন আসামিরা হলেন, নিশান মাহমুদ ওরফে শামীম, মো. বিল্লাল হোসেন, মো. সিদ্দিকুর রহমান ওরফে সিদ্দিক, মো. সাইফুল ইসলাম জীবন, অ্যাডভোকেট অনিমেশ রায়, শামসুল আলম চৌধুরী, দীপক কুমার মজুমদার, শেখ মাহতাব আলী, সত্যজিৎ মুখার্জি, মো. শহীদুল ইসলাম ওরফে মজনু, ফকির মো. বেলায়েত হোসেন, গোলাম মো. নাছিম, মো. জামাল আহমেদ ওরফে জামাল, বেলায়েত হোসেন মোল্লা, মো. আফজাল হোসেন খান ওরফে শিপলু, অমিতাব বোস, চৌধুরী মো. হাসান, মো. জাফর ইকবাল ওরফে হারুন মন্ডল, বরকতের স্ত্রী আফরোজা আক্তার পারভীন, রুবেলের স্ত্রী সোহেলী ইমরুজ পুনুম,  সাহেব সারোয়ার, আমজাদ হোসেন বাবু,  স্বপন কুমার পাল,  অ্যাডভোকেট জাহিদ বেপারী, খলিফা জামাল, হাফিজুল হোসেন তপন, রিয়াজ আহমেদ শান্ত,  আনোয়ার হোসেন আবু ফকির, মো. মনিরুজ্জামান মামুন, মাহফুজুর রহমান,  সুমন সাহা, মো. আব্দুল জলিল শেখ, মো. রফিক মন্ডল, খন্দকার শাহীন আহমেদ ওরফে পান শাহীন, আফজাল হোসেন খান ও সাংবাদিক মোহাম্মাদ আরিফুর রহমান দোলন।

গত বছর ৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) উত্তম কুমার সাহা ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ২০২২ সালের ২৬ জুন বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা দায়ের করেন সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুরে এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বরকত ও রুবেল। এ ছাড়া, মাদক ব্যবসা ও ভূমি দখল করে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন তাঁরা। ২৩টি বাস, ট্রাকসহ বিলাসবহুল গাড়ির মালিক হয়েছেন ওই দুই ভাই।

উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছেন তাঁরা। মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়।

পরে এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখে রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মাহমুদ হাসান একটি দরখাস্ত দিয়ে আদালতকে জানান, এই মামলায় ৬ জন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে অর্থ পাচারের দায় স্বীকার করেছেন। এর মধ্যে আসামি নিশান মাহমুদ শামীম ও বিল্লাল হোসেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। কিন্তু তাঁদেরকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অন্যদিকে অন্যান্য আসামির স্বীকারোক্তিতে অর্থ পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়ে গেছে এমন কয়েকজনের নাম বলেছেন। তাঁদেরকেও মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এই অবস্থায় আদালত শুনানি শেষে ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। পরে অধিকতর তদন্ত শেষে আরও ৩৭ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আরিফুর রহমান দোলন স্কুল জীবনেই ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে নাম লেখান। ১৯৮৮ সালে তিনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। পরবর্তীসময়ে ঢাকা কলেজের উত্তর ছাত্রাবাস শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হন। উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় অবস্থানকালে পশ্চিমবঙ্গে অধ্যয়নরত ছাত্রলীগের আদর্শের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ছাত্রলীগ পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সাংবাদিকতায় পেশা জীবন শুরু করা আরিফুর রহমান দোলন দেশের মূল ধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ঢাকা টাইমস’ ও জাতীয় সাপ্তাহিক ‘এই সময়’-এর সম্পাদক। এর আগে সাংবাদিকতার চাকরিকালে তিনি প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন, বাংলাভিশন টেলিভিশনসহ বিভিন্ন পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *