শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয়

:: ক্রীড়া প্রতিবেদন ::

বিশ্বকাপে টানা ৬ ম্যাচ হারের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে লঙ্কানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয় এটি। এই জয়ের ফলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সম্ভাবনা টিকে থাকল বাংলাদেশের।

এই জয়ে ৪ পয়েন্ট ও -১.১৪২ নেট রান রেট নিয়ে টেবিলের ৭ম অবস্থানে উঠে এল বাংলাদেশ।

শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৮০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫০ পেরোনোর আগেই দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাসকে হারায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের দুই ওপেনারকেই আউট করেন শ্রীলঙ্কার পেসার দিলশান মাদুশঙ্ক। ৯ রানে আউট হওয়ায় তানজিদের বিপরীতে ভালো শুরু করা লিটন এলবিডব্লিউ হয়েছেন ২৩ রানে।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসান ১৬৯ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের জয়ের পথটা সহজ করে দেন। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম শতরানের এবং বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে তৃতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি। আগের সর্বোচ্চ জুটি ছিল মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে সাকিবের। ২০১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৪২ রানের জুটি গড়েছিলেন তাঁরা। আর যেকোনো উইকেটে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৯ বিশ্বকাপেই লিটন দাসকে নিয়ে অপরাজিত ১৮৯ রানের জুটি গড়েছিলেন সাকিব।

এবারের বিশ্বকাপে শান্তর দ্বিতীয় ফিফটির বিপরীতে প্রথম পেয়েছেন সাকিব। প্রথম ফিফটি দিয়ে একটি কীর্তিও গড়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। বিশ্বকাপের ইতিহাসে পঞ্চাশোর্ধ্ব ১৩ তম ইনিংস খেললেন সাকিব। তাঁর ওপরে আছেন দুই ভারতীয় বিরাট কোহলি ও শচীন টেন্ডুলকার। পঞ্চাশোর্ধ্ব ১৪ ইনিংস খেলা কোহলির বিপরীতে ২১ ইনিংস নিয়ে শীর্ষে আছেন কিংবদন্তি শচীন।

ফিফটি করলেও সেঞ্চুরির আক্ষেপে পুড়েছেন সাকিব–শান্ত। শান্ত ১০ রানের জন্য বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি মিস করেছেন। তাঁর ১০১ বলে ৯০ রানের ইনিংসে চার ছিল ১২ টি। ৮২ রানে আউট হয়েছেন সাকিব। ৬৫ বলের ইনিংসে ১২ চারের বিপরীতে ২ ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। দুজনকেই আউট করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ‘টাইমড আউট’ হওয়া অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস।

সেঞ্চুরি মিস করলেও দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পথে একটি মাইলফলক অর্জন করেছেন সাকিব। বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে সাড়ে ৭ হাজার রান করেছেন। তাঁর আগেই এই কীর্তি গড়েছেন মুশফিক ও তামিম ইকবাল। বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া তামিম তো প্রথম ব্যাটার হিসেবে ৮ হাজার রানও করেছেন। ৮৩৫৭ রানে বাংলাদেশি ওপেনার আছেন শীর্ষে। আর মুশফিক ৭৫৮৫ রানে আছেন দুইয়ে। ৭৫৭০ রানে সাকিব তিনে।

ম্যাথুসের জোড়া আঘাতে বাংলাদেশ কিছুটা চাপে পড়েছিল। সাকিব–শান্তর পর দ্রুত ফিরে গিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আউট হওয়ার আগে অবশ্য ৩৮ রানের জুটি গড়ে দলের জয়টা কার্যত শেষ করে দিয়েছিলেন দুজনে। মুশফিকের ১০ রানের বিপরীতে ২২ রানে আউট হন মাহমুদউল্লাহ। দ্রুত ৩ রানে ফিরে যান মেহেদী হাসান মিরাজও। জয়ের শেষ চারটিও আসে ৯ রানে অপরাজিত থাকে তানজিদের ব্যাট থেকে। অন্যদিকে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। ৬৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার মাদুশঙ্ক।

দিল্লিতে টস জিতে বোলিং করতে নামে বাংলাদেশ। পেসার মুস্তাফিজের জায়গায় একাদশে ঢোকেন তানজিম হাসান সাকিব। প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নেন পেসার শরিফুল ইসলাম। কুশল পেরেরার (৪) খেলা শট ‘এজড’ হলে লাফিয়ে তালুবন্দি করেন মুশফিক। 

শ্রীলঙ্কা ৬৬ ও ৭২ রানে হারায় দলের দুই সেট ব্যাটার কুশল মেন্ডিস ও পাথুন নিশাঙ্কাকে। তিনে অধিনায়ক মেন্ডিসকে (১৯) বোল্ড করেন তানজিম। ওপেনার নিশাঙ্কাকে তুলে নেন অধিনায়ক সাকিব। ডানহাতি ওপেনার নিশাঙ্কা খেলেন ৪১ রানের ইনিংস। সাদিরা সামারাবিক্রমা ও চারিথ আশালঙ্কা ৬৩ রানের জুটিতে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন। 

ইনিংসের ২৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলের ১৩৫ রানে দুই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। সাকিবের বলে সামারাবিক্রমা ৪২ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলে ক্যাচ দেন। ক্রিজে এসে বল খেলার আগে অ্যাঞ্জেল ম্যাথুস ২ মিনিট পার করে ফেলায় ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ‘টাইমড আউট’ হন। 

পাঁচে নামা চারিথ আশালঙ্কা ১০৫ বলে ১০৮ রানের ইনিংস খেলে ওই আক্ষেপ অনেকটা মিটিয়ে দেন। ২৬ বছর বয়সী ব্যাটার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরির ইনিংস সাজান ছয়টি চার ও পাঁচটি ছক্কার শটে। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা খেলেন ৩৪ রানের ইনিংস। মিরাজের বলে স্টাম্প তুলে তাকে আউট করেন মুশফিক। এছাড়া মহেষ থিকসানা ২২ রানের ইনিংস খেলেন।  

বাংলাদেশ দলের হয়ে দারুণ বোলিং করে পেসার শরিফুল ইসলাম ৯.৩ ওভারে ৫২ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। পেসার তানজিম সাকিব ১০ ওভারে ৮০ রান দিয়ে উইকেট নিয়েছেন ৩টি। এছাড়া ১০ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।

প্রথম ব্যাটার হিসেবে ‘টাইমড আউট’ হলেন ম্যাথুস

দিল্লিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে ‘টাইমড আউট’ হয়েছেন অ্যাঞ্জেল ম্যাথুস। একজন ব্যাটার আউট হওয়ার পর কিংবা স্বেচ্ছা অবসরে যাওয়ার পর আইসিসি’র বেধে নেওয়া সময় অর্থাৎ দুই মিনিটের মধ্যে নতুন ব্যাটার ক্রিজে এসে বল খেলার জন্য প্রস্তুত না হলে সেটা টাইমড আউট হিসেবে বিবেচিত হয়।  

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে এটাই প্রথম টাইমড আউটের ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে ম্যাথুস মাঠে থাকা আম্পায়ার ও বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিবের সঙ্গে কথা বললেও কোন লাভ হয়নি। 

শ্রীলঙ্কার ব্যাটার অ্যাঞ্জেল ম্যাথুস ইনিংসের ২৪.২ ওভারে ওই আউট হয়েছেন। ২৪.২ ওভারে তুলে খেলতে গিয়ে চারে নামা লঙ্কান ব্যাটার সাদিরা সামারাবিক্রমা ক্যাচ দেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তা তালুবন্দি করেন। ক্রিজে এসে ম্যাথুস বল খেলার আগেই দুই মিনিট পার করে ফেলেন। 

আইসিসির ৪০.১.১ ধারায় বলা আছে, নতুন ব্যাটারকে দুই মিনিটের মধ্যে বল খেলার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। ৪০.১.২ ধারায় বলা আছে, যদি কোন ব্যাটার দুই মিনিটের মধ্যে মাঠে প্রবেশ না করেন, আম্পায়ার ১৬.৩ ধারার প্রয়োগ করে তিন মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করে নতুন ব্যাটারকে আউট ঘোষণা করতে পারবেন। ৪০.২ ধারায় বলা আছে, টাইম আউট উইকেটের কৃতিত্ব বোলার পাবেন না। অর্থাৎ বোলারের নামে উইকেট জমা হবে না।

ম্যাথুসের ‘টাইমড আউট’ নিয়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার পক্ষে ভিন্ন ভিন্ন মত দেখা গেছে। ক্রিকইনফোর ধারাবিবরণীতে যেমন বলা হয়েছে, সাকিব টাইম আউটের আবেদন না করে ম্যাথুসকে সতর্ক করে দিতে পারতেন। 

আবার অন্য মন্তব্যে বলা হয়েছে, ম্যাথুস একটা বল ভিন্ন ওই হেলমেট পরে খেলতে পারতেন। কিংবা বোলার যেহেতু সাকিব আল হাসান ছিলেন অর্থাৎ স্পিন বোলিংয়ের মুখোমুখি হতে হতো। ম্যাথুস  হেলমেট ছাড়াই একটা বল খেলতে পারতেন। এটাকে অনেকে ‘ব্রেন ফেড’ বলেও মন্তব্য করছেন। ম্যাথুসের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটারের ভুল হেলমেট নিয়ে খেলতে নামাও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *