বিচিন্তা’র মিনার মাহমুদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

দেশে সাপ্তাহিক পত্রিকায় আধুনিকতার প্রবর্তক মিনার মাহমুদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের এই দিনে মারা যান করেন তিনি।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মিনার মাহমুদের কবর জিয়ারত, দোয়া পাঠ ও দিলু রোড ছাতা মসজিদে বাদ জুম্মা মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।

১৯৫৯ সালে ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করা মিনার মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্র জীবনেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন। ফরিদপুর থাকার সময়ে এক সময়ের আলোড়ন তোলা সংগঠন ‘লেখক শিবির’ করতেন মিনার মাহমুদ। তিনি সাপ্তাহিক বিচিত্রায় রিপোর্টিংয়ের সনাতনি প্রথাটা ভেঙে আধুনিকতা আনেন।

১৯৮৭ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে সম্পাদক হিসেবে আবির্ভাব ঘটে মিনার মাহমুদের। ৩২ পৃষ্ঠার নিউজপ্রিন্ট ‘বিচিন্তা’ তাকে সাফল্য এনে দেয়। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রোষানলে পড়ে কারাগারে যেতে হয় মিনার মাহমুদকেব। বন্ধ করে দেয়া হয় পত্রিকাটির প্রকাশনা।

১৯৯০ সালে সামরিক শাসন হটিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পর ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে মিনার মাহমুদ দ্বিতীয় দফায় বিচিন্তা প্রকাশ করেন। এবারের যাত্রাও মসৃণ হয়নি তার জন্য। নানা মহলের মামলা, হয়রানির কারণে কিছু দিন পর পত্রিকাটি বন্ধ করে দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ২০০৯ সালে দেশে ফিরে আবারও বিচিন্তা প্রকাশ করেন। তবে ‘করপোরেট সংস্কৃতি’র দাপট সামাল দিতে না পেরে এদফায় হাল ছাড়লেন মিনার মাহমুদ। তারপর ২০১২ সালের ২৯ মার্চ আত্মহননের পথ বেছে নেন তিনি।

মিনার মাহমুদের সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে গল্পের বই ‘মনে পড়ে রুবী রায়’, উপন্যাস ‘আমার দেবী ফুলন’, জার্নাল ‘পিছনে ফেলে আসি’, ‘নির্ঘুম স্বপ্নের দেশে’।

২০০৯ সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি আবারও শুরু করতে চান সাংবাদিকতা। পুনরায় প্রকাশ করেন বিচিন্তা। তবে ‘কর্পোরেট সংস্কৃতি’র দাপট সামাল দিতে না পেরে এ দফায় হাল ছাড়লেন মিনার মাহমুদ। ২০১২ সালের ২৯ মার্চ তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন। ঢাকা রিজেন্সি হোটেলের সপ্তমতলার একটি কক্ষ থেকে সন্ধ্যায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই কক্ষে প্রায় একশটি ঘুমের বড়ির খোসা পেয়েছিল পুলিশ।

তার পিতৃপ্রদত্ত নাম মোহাম্মদ আলী মিনার। নামের শেষাংশ ‘মিনার’ আসলে তার ডাকনাম। বাড়ী ফরিদপুর-এ। ১৯৭৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে বিএসএস (সম্মান) এবং ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এমএসএস ডিগ্রী লাভ করেন। 

ছাত্র জীবনে তিনি লেখালিখি শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। ২০০৯-এ দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজ করার চেষ্টা করেন।এছাড়া বিচিন্তা পুনঃ প্রকাশ করেন। সেই বছরের শুরুতে তিনি শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার প্রস্তাব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশে সাপ্তাহিক রাজনৈতিক পত্রিকায় রিপোর্টিং ভিত্তিক বিদ্রোহীধারার আধুনিকতার প্রবর্তক ছিলেন মিনার মাহমুদ। মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে তিনি আজকের প্রত্যাশা নামক একটি দৈনিক পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *