মস্কোয় হামলা: নিহত ১৩৭, হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশ

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

মস্কোর ক্রোকাস সিটি কনসার্ট হলে হামলায় ১৩৭ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ১৪৩ জন নিহতের খবর দিয়েছে।

ঘটনায় চার ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে রাশিয়ার আদালত। এদের তিনজনকে চোখ বেঁধে মস্কোর একটি আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চতুর্থজন হুইলচেয়ারে বসা ছিলেন। চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে।

শুক্রবারের ক্রোকাস সিটি হলে হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট- আইএস ভিডিও পোস্ট করেছে।

মস্কোর বাসমানি ডিস্ট্রিক্ট আদালতে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে চারজনের হাজির করা হয়। এরমধ্যে মধ্যে তিনজনকে চোখ বেঁধে হাজির করা হয়। অন্যজনকে আনা হয় হুইল চেয়ারে। তাদের সবার বিরুদ্ধে আনা হয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটনের অভিযোগ।

আদালতে হাজির করা চারজন হলেন- দালের্দজন মিরজোয়েভ, সাইদআক্রামি মুরোদালি রাচাবালিজোদা, শামসিদিন ফারিদুনি ও মুহাম্মাদসোবির ফায়জভ। তাদের মধ্যে মিরজোয়েভ ও রাচাবালিজোদা হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এদের মধ্যে মিরজোয়েভ তাজিকিস্তানের নাগরিক।

মিরজোয়েভ তাজিকিস্তান থেকে রাশিয়াতে আসা একজন অবৈধ অভিবাসী। ৩২ বছরের মিরজোয়েভ রাশিয়াতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় আসলেও সেটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

২৮ বছরের সাইদাকরম রাচাবালিজোদা মস্কোতে বসবাস করলেও জন্ম তাজিকিস্তানে।

২৪ বছরের শামসিদ্দিন ফরিদুনির জন্ম তাজিকিস্তানে, পেশায় কারখানা কর্মী।

আটক আরেকজন হলেন মুহম্মদসবির ফয়জভ, পেশায় একজন হেয়ারড্রেসার, তাজিকিস্তানের নাগরিক। 

ক্রোকাস সিটি হল সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের সবার বিরুদ্ধে রাশিয়ার সন্ত্রাসী আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় মারধরের কারণে মিরজোয়েভ ও রাচাবালিজোদার চোখের নিচে কালশিটে পড়ে গেছে। আরেক জঙ্গি রাচাবালিজোদার কানে ছিলো ব্যান্ডেজ। 

ফারিদুনির মুখ মারাত্মকভাবে ফুলে গেছে। আর ফায়জভকে অজ্ঞান অবস্থায় হুইলচেয়ারে করে আদালতে আনা হয়েছিলো এবং তার একটি চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে গত শুক্রবার রাতে ক্রোকাস সিটি হল কনসার্ট সেন্টারে কনসার্ট দেখতে জড়ো হওয়া মানুষদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় একদল বন্দুকধারী। এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩৭ জন নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি আহত হয়েছেন প্রায় দেড়শো মানুষ। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, হামলায় পাঁচ বন্দুকধারী অংশগ্রহণ করেছে।

অন্যদিকে হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কুখ্যাত জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের আফগান শাখা ‘ইসলামিক স্টেট খোরাসান’ বা আইএস-কে।

হামলার কয়েক ঘণ্টার পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। তারা জানিয়েছে তাদের আফগান শাখা আইএস-কে এই হামলা চালিয়েছে। টেলিগ্রামে জঙ্গিদের ওয়েবসাইট আমাক এজেন্সির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মস্কোতে আইএস যোদ্ধারা হামলা চালিয়ে শতাধিক মানুষকে হতাহত করেছে এবং ঘটনাস্থলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে নিরাপদে তাদের ঘাঁটিতে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছে।’

আদালতের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ২২ মে বিচার কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত এই চারজন আটক অবস্থায় থাকবে।

শুক্রবার রাতে মস্কোর উপকণ্ঠে ক্রোকাস সিটি হলে চারজন বন্দুকধারী হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর তাদের গ্রেফতার করা হয়।

মস্কোর এ কনসার্টে অংশ নেওয়া আনুমানিক ছয় হাজার মানুষের ওপর হামলাকারীরা গুলি চালানো শুরু করে। অনুষ্ঠানস্থলে তারা আগুন জ্বালিয়ে দেয়ার ফলে ছাদ ধসে পড়ে।

২০১৫ সালে মিশরে ২২৪ জন যাত্রীবাহী একটি রাশিয়ান বিমানে বোমা হামলার দাবি করেছিল আইএস। ওই যাত্রীদের বেশিরভাগই ছিলেন রাশিয়ান নাগরিক।

আইএস ২০১৭ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ মেট্রোতে বোমা হামলারও দাবি করেছিলো। যাতে ১৫ জন নিহত হয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, আইএস বেশ কয়েকটি কারণে রাশিয়াকে প্রাথমিক টার্গেট বলে মনে করে।

যার মধ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের শাসনামলে সিরিয়ায় আইএসের শক্তিশালী একটি ঘাঁটি ধ্বংস করার বিষয়ে রাশিয়ার ভূমিকা ছিলো।

১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ চেচনিয়ায় মস্কোর দুটি নৃশংস যুদ্ধ এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েত আমলের আগ্রাসনও আইএসের হামলার কারণ বলে তারা মনে করেন।

আইএস – কে প্রধানত আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার কিছু অংশে কাজ করে। এর নাম এই অঞ্চলের একটি পুরানো শব্দের উপর ভিত্তি করে করা হয়।

আইএসের শাখাগুলির মধ্যে এই শাখা সবচেয়ে সক্রিয়। ২০২১ সালের আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে কাবুল বিমানবন্দরে মারাত্মক আত্মঘাতী হামলার জন্য তারা দায়ী ছিল।

তারা প্রায়ই প্রচারণা চালানোর সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *