প্রোটিয়াসদের সাথে হারে সান্ত্বনা মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি

:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::

বিশ্বকাপে প্রোটিয়াসদের সাথে ১৪৯ রানে হারের দিনে বাংলাদেশের সান্ত্বনা কেবল মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি। বিশাল জয়ে নিউজিল্যান্ডকে হটিয়ে ৫ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। 

মঙ্গলবার ভারতের মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৩৮২ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের হয়ে ১৪০ বলে ১৭৪ রান করেন ওপেনার কুইন্টন ডি কক। ৪৯ বলে ৯০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন হেনরিক ক্লাসেন। ৬৯ বলে ৬০ রানে ফেরেন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। 

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে দলীয় সর্বোচ্চ ৩৮২ রান করে প্রোটিয়ারা। এর আগে ২০১৭ সালে ইস্ট লন্ডনে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে সর্বোচ্চ ৩৬৯ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

৩৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সতর্ক শুরু করেছিলেন লিটন দাস ও তানজিদ তামিম। ৬ ওভারে তাদের ব্যাটে আসে ৩০ রানের উদ্বোধনী জুটি। মার্কো জেনসেন ষষ্ঠ ওভারের প্রথম দুই বলেই তিনি ফেরান তানজিদ ও শান্তকে। জুনিয়র তামিম ১২ রান করে আউট হলেও শান্ত রান না করেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন।

পরের ওভারেই ফিরে যান সাকিব। লিজার্ড উইলিয়ামসের অফ স্টাম্পের বাইরে থাকা বলে ব্যাট ছুঁয়ে ক্যাচটি নিয়েছেন হেনরিক ক্লাসেনের হাতে। এরপর আউট হন মুশফিকুর রহিম।

৪২ রানে যখন ৪ উইকেট হারিয়ে কঠিন চাপে বাংলাদেশ তখন মাঠে নামেন মাহমুদউল্লাহ। লিটনের সাথে ১৬ রানের জুটি হতেই থামিয়ে দেন রাবাদা। লিটন আউট ৪৪ বলে ২২ রান করে। এরপর আউট হন মেহেদী মিরাজ।

মিরাজের বিদায়ের পর মাঠে নামা নাসুম আহমেদের সঙ্গে ৪১ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ। দলীয় ১২২ রানে বিদায় নেন নাসুম।

ব্যাটসম্যানরা যাওয়া আসার মধ্যে থাকলেও মাহমুদউল্লাহ অন্যপ্রান্ত ঠিকই আগলে রাখছিলেন। হাসানের বিদায়ের পর এই ব্যাটসম্যানকে সঙ্গ দিতে মাঠে নামেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার সঙ্গে গড়েন ৬৮ রানের জুটি। এই জুটির মধ্যেই অনেক ঘটনা ঘটে যায়। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ তার ব্যাট ঠিকই চালিয়ে যান। তাতে পেয়ে যান ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরির দেখা।

রাবাদার বলে লেগ সাইডে খেলে ডাবলস। মাহমুদউল্লাহ ৯৯। এরপর শর্ট বলে ফাইন লেগে খেলে সিঙ্গেলে মাহমুদউল্লাহ পেয়েছেন সেঞ্চুরি! উদ্‌যাপনে লাফ দিয়েছেন, এরপর আঙুল দিয়ে ইশারা করেছেন ওপরের দিকে। এরপর দিয়েছেন সিজদা।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে টানা দুই ম্যাচে ১০০ পেরিয়েছিলেন।। মাহমুদউল্লাহর পরের সেঞ্চুরিটি ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। ২০১৭ সাল কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই সেঞ্চুরিই ছিল মাহমুদউল্লাহর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বশেষ। আজ আরেকটির দেখা পেলেন তিনি। অথচ বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপের দলেও ছিলেন না তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে দলে ফেরানো হয়। এরপর বিশ্বকাপ দলেও জায়গা পান। আগের দুই ম্যাচে লড়াই করলেও ইনিংস বড় করার সুযোগ পাননি সেভাবে। আজ ছয়ে এসেছিলেন। দলের অবস্থা সুবিধার ছিল না মোটেও। এখনো যে আছে, তা নয়। তবে লড়াইটা চালিয়ে গেছেন মাহমুদউল্লাহ। এমন দিনে ব্যক্তিগত অর্জনই হতে পারে সান্ত্বনা!

১১১ বলে ১১ চার ও ৪ ছক্কায় তিনি ১১১ রান করে আউট হন। তার বিদায়ের পর আর বেশিক্ষণ টিকেনি বাংলাদেশও। গুটিয়ে যায় ২৩৩ রানে। তাতে নিশ্চিত হয় ১৪৯ রানের জয়।

তার আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই সেঞ্চুরি করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তাঁর চার সেঞ্চুরির সব বিদেশের মাটিতে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান তিনি, এবার বিশ্বকাপে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিকও হলেন মাহমুদউল্লাহ। 

সেঞ্চুরির আগে নতুন এক মাইলফলকে পা রাখেন মাহমুদউল্লাহ। তামিম ইকবালকে টপকে ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশিদের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তিনে উঠে এলেন তিনি। ২৯ ইনিংসের তামিমের রান ৭১৮ আর ২১ ইনিংসে মাহমুদউল্লার রান ৭৯১*। এই তালিকায় ১২০২ রান নিয়ে সাকিব আল হাসান শীর্ষে। মুশফিকের রান ১০৪২। 

টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৩৮২ রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের হয়ে ১৪০ বলে ১৭৪ রান করেন ওপেনার কুইন্টন ডি কক। ৪৯ বলে ৯০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন হেনরি ক্লেসেন। ৬৯ বলে ৬০ রানে ফেরেন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। 

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে এদিন দলীয় সর্বোচ্চ ৩৮২ রান করে প্রোটিয়ারা। এর আগে ২০১৭ সালে ইস্ট লন্ডনে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে সর্বোচ্চ ৩৬৯ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

মঙ্গলবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৬ রানে ২ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তৃতীয় উইকেটে এইডেন মার্করামের সঙ্গে ১৩৭ বলে ১৩১ রানের জুটি গড়েন ওপেনার কুইন্টন ডি কক। ৬৯ বলে ৭টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৬০ রান করে ফেরেন অধিনায়ক মার্করাম।

এরপর চতুর্থ উইকেটে হেনরি ক্লেসের সঙ্গে রীতিমতো তাণ্ডব চালান ডি কক। এই জুটিতে তারা মাত্র ৮৭ বল মোকাবেলা করে ১৪২ রানের জুটি গড়েন। ইনিংস ওপেন করতে নেমে ৪৫.১ ওভারে দলীয় ৩০৯ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ডি কক। তার আগে চলতি বিশ্বকাপে নিজের পঞ্চম ম্যাচে তৃতীয় সেঞ্চুরি হাঁকান।

হাসান মাহমুদের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১৪০ বলে ১৫টি চার আর ৭টি ছক্কার সাহায্যে ১৭৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন ডি কক। ডি কক আউট হওয়ার পর ব্যাটিং তাণ্ডব অব্যাহত রাখেন হেনরি ক্লেসেন ও ডেভিড মিলার। পঞ্চম উইকেটে মাত্র ২৫ বলে ৬৫ রানের জুটি গড়েন তারা। 

একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন হেনরিক ক্লেসেন। নার্ভাস নাইনটিতে আউট হওয়ার আগে ৪৯ বলে দুটি চার আর ৯টি ছক্কার সাহায্যে খেলেন ৯০ রানের ঝলমলে ইনিংস। ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে ডেভিড মিলার ১৫ বলে এক চার আর ৪টি ছক্কায় ৩৪ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকা থামে ৫ উইকেটে ৩৮২ রানে।

বাংলাদেশ দলের হয়ে ৯ ওভারে ৭৬ রান খরচ করে কোনো উইকেট পাননি মোস্তাফিজুর রহমান। ৯ ওভারে ৭৬ রানে ১ উইকেট নেন পেসার শরিফুল ইসলাম। মাত্র ৬ ওভারে ৬৭ রানে ২ উইকেট নেন পেসার হাসান মাহমুদ। ৯ ওভারে ৪৪ রানে ১ উইকেট নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৫ ওভারে ২৭ রানে কোনো উইকেট পাননি নাসুম।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *