প্রোটিয়াদের সাথে লড়াই করে হারল আফগানিস্তান

:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::

বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে প্রোটিয়াদের সাথে লড়াই করে হারল আফগানিস্তান। আফগানদের দেওয়া ২৪৫ রানের লক্ষ্যে ১৫ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। 

নয় ম্যাচে চার জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলের ছয়ে থেকে শেষ করল আফগানিস্তান।

২৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করে টেম্বা বাভুমা ও কুইন্টন ডি কক উদ্বোধনী জুটিতে ৬৪ রান করেন। ২৩ রানে বাভুমাকে আউট করে দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মুজিব উর রহমান। ২ রান পর ৪১ রান করা ডি কককে ফেরান মোহাম্মদ নবী। সে যাত্রায় ম্যাচে ফিরলেও তৃতীয় উইকেটে দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে আফগানদের এবার হতাশ করেন রাসি ফন ডার ডুসেন ও এইডেন মার্করাম। 

তৃতীয় উইকেটে কাটায় কাটায় ৫০ রানের জুটি গড়েন ডুসেন–মার্করাম। ২৫ রানে মার্করামকে আউট করে এবার দলকে ম্যাচে ফেরান রশিদ খান। পাঁচে নামা হেনরিক ক্লাসেনকে বোল্ড করে দলকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও এনে দিয়েছিলেন রশিদ। কিন্তু এক প্রান্ত আগলে রেখে আবারও আফগানদের কাছ থেকে ম্যাচে বের করে নেন ডুসেন। 

প্রথমে ডেভিড মিলারের সঙ্গে ৪৩ রানের জুটি গড়েন ডুসেন। পরে ২৪ রানে মিলার আউট হলে ষষ্ঠ উইকেটে আন্দিলে ফেলুকাওয়োর সঙ্গে দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে দলকে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। দুজনে মিলে দলীয় খাতায় যোগ করেন ৬৫ রান। ফেলুকাওয়োর ৩৯ রানের বিপরীতে ৭৬ রানের অপরাজিত থাকেন ডুসেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ৫ উইকেটের জয়ে আফগানরা বেশ ভালোই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে তারা। 

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অসম্ভব কিছু করার লক্ষ্যে আজ খেলতে নেমেছে আফগানিস্তান। প্রতিপক্ষকে কমপক্ষে ৪৩৮ রানে হারাতে হবে তাদের। গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেটের জয়ে এমন সমীকরণে মুখে পড়ে আফগানরা। 

আর পরে ব্যাটিং করলে কোনো সুযোগই থাকত না সেমিফাইনালে যাওয়ার। টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি। ত৪৩৮ রানের জয় পেতে হলে তো বড় সংগ্রহ করতে হবে তাদের। সেই চাপেই যেন পিষ্ট হয়েছেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও রশিদ খানরা। 

আহমেদাবাদে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৩৮ রানে জয় তো দূরে থাক আড়াই শ রানই করতে পারেনি আফগানরা। শেষ বলে অলআউট হয় ২৪৪ রানে। দেখে শুনে শুরুটা করেছিলেন গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। উদ্বোধনী জুটিতে ৪১ রান তোলেন দুজনে। ২৫ রানে গুরবাজ আউট হওয়ার পরেই যেন তাদের সামান্যটুকু আশাও মিইয়ে যায়। 

দলীয় ৪১ রানে গুরবাজ আউট হওয়ার পরের ওভারেই বিদায় নেন আফগানদের হয়ে বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ইব্রাহিম। ১৫ রানে আউট হন তিনি। দলীয় খাতায় ৪ রান যোগ হওয়ার পর বিদায় নেন অধিনায়ক শহীদিও। ২ রানে মহারাজের শিকার হন তিনি। 

 ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর আফগানদের হাল ধরেন রহমত শাহ ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই। ৪৯ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়ার ভিত্তি তৈরি করছিল তাঁরা। তবে তাঁদের জুটিকে আর বড় হতে দেননি লুঙ্গি এনগিদি। ২৬ রান রহমত আউট হওয়ার পরেই একের পর এক উইকেট হারায় আফগানিস্তান। 

এরপরেও যে ২৪৪ রানের সংগ্রহ পেয়েছে আফগানিস্তান তার পুরো কৃতিত্বই ওমরাজাইয়ের। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে এক প্রান্ত আগলে দলকে এই সংগ্রহ এনে দেন তিনি। তবে ৩ রানের আক্ষেপ তাঁর থেকেই যাবে। কেননা বলের অভাবে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করতে পারেননি তিনি। শেষ বল আফগানরা অলআউট হওয়ার সময় ৯৭ রানে অপরাজিত থাকেন এই অলরাউন্ডার। ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ইনিংসটি সাজিয়েছেন তিনি। ৪৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে প্রোটিয়াদের সেরা বোলার জেরাল্ড কোয়েৎজি। 

পরাজয়ে শুরু করে পরাজয়েই বিশ্বকাপ শেষ করল আফগানিস্তান; কিন্তু বিশ্বকাপের বর্তমান এবং সাবেক দুই চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন রশিদ খান-মোহাম্মদ নবি। 

বাংলাদেশের বিপক্ষে পরাজয়ে বিশ্বকাপ শুরু হয় আফগানিস্তানের। আজ শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হেরেই বিশ্বকাপ মিশন শেষ করল আফগানরা। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে গেছে আফগানরা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সফল একটি আসর শেষ করল তারা। 

বিশ্বকাপের এবারের আসরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে চমক দেখায় আফগানরা।

এরপর ১৯৯২ ও ১৯৯৬ সালের সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও শ্রীলংকাকে হারায় আফগানিস্তান। আফগানদের বিপক্ষে হেরে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে যায় পাকিস্তান।

বিশ্বকাপের এবারের আসরে তিন চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলংকাকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দেয় আফগানরা। আজ নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হেরে আসর থেকে বিদায় নেয় তারা। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *