‘মোকা’ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মোকা প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে বাতাসের গতি ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক নাগরিক নিউজকে বলেন, এটি প্রবল থেকে অতি প্রবলে পরিণত হয়েছে। উপকূল অতিক্রম করার সময় এটির গতি বাড়তেও পারে। আবার অনেক সময় গতি কমে যায়। এখন পর্যন্ত যে অবস্থায় আছে তাতে গতি বাড়ার সম্ভাবনা আছে। 

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তাকে ঘূর্ণিঝড় বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে হ্যারিকেন গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়। 

এটি শুক্রবার ভোর ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মোকা আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

ঢাকা, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, সন্দ্বীপ, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও হাতিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

উপকূলীয় এলাকায় ২০ ফূট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে

ঘূর্ণিঝড় মোকার প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ১০ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।

আজ শুক্রবার (১২ মে) সকালে তিনি বিভিন্ন আবহাওয়ার মডেল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানান।

ঘূর্ণিঝড় মোকার যাত্রাপথ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ভৌগলিক অবস্থান তুলে ধরে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ থেকে ১২ ফুট, বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে ৮ থেকে ১২ ফুট ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হতে পারে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষদের জীবন হুমকির সম্মুখীন উল্লেখ করে মোস্তফা কামাল পলাশ আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকা যখন সেন্টমার্টিন দ্বীপ অতিক্রম করবে সেসময় যেকোনো বিল্ডিংয়ের তিনতলার নিচে আশ্রয় নেওয়া কোনো মানুষের জীবন নিরাপদ নয়। সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রতি ইঞ্চি মাটি সমুদ্রের পানির নিচে থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *