রসায়নে যৌথভাবে নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

চলতি বছর রসায়নে নোবেল যৌথভাবে পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন- যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্যারোলিন আর বার্তোজ্জি, ডেনমার্কের ইউনিভার্সিটি অব কোপেন হেগেনের অধ্যাপক মর্টেন মেলডাল ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ক্রিপস রিসার্সের গবেষক কে ব্যারি শার্পলেস।

নোবেল কমিটি জানায়, ক্লিক রসায়ন ও বায়োঅর্থোগোনাল রসায়নে অবদান রাখায় ক্যারোলিন আর বার্তোজ্জি, মর্টেন মেলডাল ও কে ব্যারি শার্পলেসকে রসায়নে এ বছরের নোবেল দেওয়া হলো। ‘ক্লিক কেমিস্ট্রি’ সংক্রান্ত তাঁদের গবেষণা আগামী দিনে ওষুধশিল্পকে নতুন মাত্রা দিতে পারে বলে মনে করছে নোবেল কমিটি ।

বুধবার রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস এই তিন জনের নাম ঘোষণা করেছে।

মোট পুরস্কার-মূল্য এক কোটি সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১০ লাখ ডলার বা ১০ কোটি ২৩ লাখ টাকা) সমান ভাবে ভাগাভাগি হবে তিন বিজ্ঞানীর মধ্যে। তাদের মধ্যে শার্পলেস ২০০১ সালে রসায়নে নোবেল পেয়েছিলেন। তিনি নোবেলের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিজ্ঞানী হিসাবে দু’বার রসায়নে এই সম্মাননা পেলেন। ‘ক্লিক কেমিস্ট্রি’ সংক্রান্ত তাদের গবেষণা আগামী দিনে ওষুধ শিল্পকে নতুন মাত্রা দিতে পারে বলে অভিমত নোবেল কমিটির।

১৯০১ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে রসায়নে এই নিয়ে মোট ১১৬ জন রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ৭ জন মহিলা বিজ্ঞানী। ২০২০ সালে নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে প্রথম বার কোনও একটি বিভাগে একসঙ্গে দুই মহিলার নোবেলপ্রাপ্তি ঘটেছিল রসায়নেই। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইউনিট ফর দ্য সায়েন্স অব প্যাথোজেনস-এর অধ্যাপক এমানুয়েল শার্পেন্টার এবং বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেনিফার এ দৌদনা যৌথ ভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন সে বছর।

১৯০৩ এবং ১৯১১ সালে মাত্র আট বছরের ব্যবধানে দু’বার দুই আলাদা বিষয়ে (পদার্থবিদ্যা এবং রসায়ন) নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন মাদাম কুরি। ১৯৫৮ এবং ১৯৮০ সালে রসায়নে দু’বার নোবেল সম্মাননা পাওয়ার রেকর্ড ছিল ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক স্যাঙ্কারের। বুধবার সেই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন শার্পলেস। 

গত বছর রসায়নে নোবেল পেয়েছিলেন জার্মানির বেঞ্জামিন লিস্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রে ডেভিড ম্যাকমিলান। তার আগের বছর জিনোম সম্পাদনার পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য যৌথভাবে রসায়নে নোবেল জিতে নেন দুই নারী। ফরাসি বিজ্ঞানী ইমানুয়েল কার্পেন্টার ও মার্কিন বিজ্ঞানী জেনিফার এ ডৌডানা এই পুরস্কার জেতেন। তাদের আগে মাত্র পাঁচজন নারী রসায়নে নোবেল পেয়েছেন। তারা হলেন, মেরি কুরি (১৯১১), জ্যালিয়ট কুরি (১৯৩৫), ডরোথি ক্রফউট হকিং (১৯৬৪), অ্যাডা আ ইয়োনাথ (২০০৯) এবং এইচ আর্নল্ড (২০১৮)।

২০১৯ সালে লিথিয়াম ব্যাটারি নিয়ে গবেষণা করে রসায়নে নোবেল পেয়েছিলেন তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের জন বি গুডএনাফ, বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এম স্ট্যানলি এবং মেইজো বিশ্ববিদ্যালয়ের আকিরা ইয়োশিনো। ২০১৮ সালে রসায়নশাস্ত্রে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার জেতেন আমেরিকার বিজ্ঞানী ফ্রান্সেস এইচ আরনল্ড, জর্জ পি স্মিথ এবং যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানী স্যার গ্রেগরি পি উইন্টার।

প্রতি বছর শান্তি, সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা ও অর্থনীতি- এই ছয় বিষয়ে যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন; তাদের পুরস্কার প্রদান করে সুইডেনভিত্তিক নোবেল ফাউন্ডেশন। পুরস্কার প্রদানের পর তা উদযাপনে উৎসবের আয়োজন করে নোবেল কমিটি। নোবেল কমিটির সদর দফতর নরওয়েতে।

উনবিংশ শতাব্দিতে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল আবিষ্কার করেছিলেন ডিনামাইট নামের ব্যাপক বিধ্বংসী বিস্ফোরক; যা তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পত্তির মালিক করে তোলে। মৃত্যুর আগে তিনি ৩ কোটি ১০ লাখ ক্রোনার রেখে গিয়েছিলেন, আজকের বাজারে যা প্রায় ১৮০ কোটি ক্রোনের সমান। আলফ্রেড নোবেলের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের গোড়াপত্তন ঘটে। ১৯৬৮ সালে এই তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *