ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ষষ্ঠ শিরোপা অস্ট্রেলিয়ার

:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::

টানা দশ ম্যাচ জিতে অপরাজিত স্বাগতিক ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ১ লাখ  ৩২ হাজার দর্শককে নিশ্চুপ করে দিল অসিরা।

১২ বছর পর বিশ্বকাপ নিজেদের মাটিতে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন অধরাই থাকল ভারতের। প্রথম দেশ হিসেবে তিন ফরম্যাটেই শিরোপা জেতার স্বাদ পেল অস্ট্রেলিয়া। ৮ বছর পর বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলল তারা।

ভারতের দেয়া ২৪১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ৪১ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ট্রাভিস হেড ও মারনাস লাবুশেনের অনবদ্য জুটিতে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। চতুর্থ উইকেটে হেড-লাবুশেন মিলে গড়েন ১৯২ রানের জুটি। বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি। ৭ ওভার বাকি থাকতে জয় পায় অসিরা।

৬ষ্ঠ ব্যাটসম্যান ও ৩য় অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে সেঞ্চুরি হাঁকালেন ট্রাভিস হেড। আর ফাইনালে রান তাড়া করতে নেমে এটি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ‘৯৬ আসরে অরবিন্দ ডি সিলভা করেছিলেন প্রথমটি।

ট্রাভিস হেডের ক্যারিয়ারের ৫ম ও সবচেয়ে স্মরণীয় সেঞ্চুরি এটি। ৯৫ বলে মাইলফলক ছোঁন তিনি। জয় থেকে দুই রান দূরে থাকতে আউট হন। ১২০ বলে ১৫টি চার ও ৪টি ছয়ে করেন ১৩৭ রানে। বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্যক্তিগত সংগ্রহের তালিকায় এটি চতুর্থ সর্বোচ্চ রান।

ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ষষ্ঠ শিরোপা অস্ট্রেলিয়ার
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ১ লাখ  ৩২ হাজার দর্শককে নিশ্চুপ করে দিল অসিরা। বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে তারা।

মারনাস লাবুশেনের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ১১০ বলে ৫৮ রান।

ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে দারুণ সূচনা এনে দিয়েছিলেন শামি। দ্বিতীয় ওভারেই বিরাট কোহলিকে স্লিপে ক্যাচ দেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা এই পেসার। দলীয় ১৬ রানেই প্রথম উইকেটের পতন হয় অসিদের। মিচেল মার্শের দূর্বল ফুটওয়ার্কের মাশুল দিয়ে বুমরাহর বলে উইকেটের পেছনে রাহুলের হাতে ধরা পড়েন। স্টিভেন স্মিথ আউট হয়েছেন নিজের আর আম্পায়ারের মিলিত ভুলে। বলের ইম্প্যাক্ট ছিল স্ট্যাম্পের বাইরে। কিন্তু আম্পায়ার আঙুল তুলেছেন। খানিক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগা স্মিথও আর রিভিউ নেননি। জয় থেকে ২ রান দূরে থাকা অবস্থায় হেড আউট হন সিরাজের বলে গিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ম্যাক্সওয়েল এক বল মোকাবেলা করে ২ রান নিলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় অসিরা।

প্রথম দেশ হিসেবে তিন ফরম্যাটেই শিরোপা জেতার স্বাদ পেল অস্ট্রেলিয়া। ৮ বছর পর বিশ্বকাপের ষষ্ঠ শিরোপা ঘরে তুলল তারা।

ফাইনালে টস জিতে আজ ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে স্টার্ককে পুল করতে যান গিল। টপ এজ হওয়া বল মিড অনে তালুবন্দী করেন অ্যাডাম জাম্পা। ৭ বলে ৪ রান করা গিল বিদায় নিলে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ৪.২ ওভারে ১ উইকেটে ৩০ রান।

দশম ওভারে বোলিংয়ে আসা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে ছক্কা ও চার মারেন রোহিত। ওভারের চতুর্থ বল লেগ সাইডে উড়িয়ে মারতে যান রোহিত। লিডিং এজ হওয়া বল চলে যেতে থাকে অফসাইডে। কাভার থেকে উল্টো দিকে দৌড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন ট্রাভিস হেড। ৩১ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন রোহিত। ভেঙে যায় দ্বিতীয় উইকেটে রোহিত-কোহলির ৩২ বলে ৪৬ রানের জুটি। ১১ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কামিন্সের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আয়ারের ব্যাট ছুয়ে বল চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক জশ ইংলিশর হাতে। ৪ রান করে আউট হন তিনি। ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ১০.২ ওভারে ৩ উইকেটে ৮১ রান। 

৩ উইকেট হারানোর পর ব্যাটিংয়ে আসেন লোকেশ রাহুল। চাপের মধ্যেই কোহলি ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৭২তম ফিফটি তুলে নেন। ২৬তম ওভারের প্রথম বলে লং অনে ঠেলে সিঙ্গেল নিয়ে পেয়েছেন ফিফটির দেখা। 

২৯তম ওভারের তৃতীয় বলে কামিন্সকে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান কোহলি। ৬৩ বলে ৪ চারে ৫৪ রান করেন ভারতীয় এই ব্যাটার। ভেঙে যায় চতুর্থ উইকেটে কোহলি-রাহুলের ১০৯ বলে ৬৭ রানের জুটি। 

কোহলির আউটের পর ফিফটি তুলে নেন রাহুলও। ফিফটি করতে ৮৬ বল খেলেন রাহুল। ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা রবীন্দ্র জাদেজা ২২ বলে ৯ রান করে কট বিহাইন্ড হয়েছেন হ্যাজলউডের বলে। পঞ্চম উইকেটে রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে জুটিটা ছিল ৪৪ বলে ৩০ রানের। তারপর ৪২ তম ওভারের তৃতীয় বলে রাহুলের উইকেট নিয়ে স্টার্ক ভারতকে বড় ধাক্কা দিয়েছেন। রাহুল ১০৭ বলে ১ চারে ৬৬ রান করে বিদায় নিয়েছেন। ভারতের স্কোর হয়ে যায় ৪১.৩ ওভারে ৬ উইকেটে ২০৩ রান। রাহুলের ৬৬ রানই ভারতের ইনিংসের সর্বোচ্চ রান। পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করে ২৪০ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকেরা। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন স্টার্ক। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন কামিন্স ও হ্যাজলউড। ম্যাক্সওয়েল ও জাম্পা ১টি করে উইকেট নিয়েছেন। ১টি হয়েছে রান আউট। উইকেটরক্ষক ইংলিশ ধরেছেন ৫টি ক্যাচ। পুরো ইনিংসে ভারত ১৩ চার ও ৩ ছক্কা মেরেছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *