সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতার মামলা

:: নাগরিক প্রতিবেদক ::

সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া (৩৬)।

থানায় নথিভুক্ত হওয়া এজাহার অনুযায়ী গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ১৫ মিনিটে (২৯.৩.২০২৩) মামলাটি হয়েছে। বাদির পরিচয়ে লেখা হয়েছে তিনি ঢাকার কল্যাণপুরের বাসিন্দা। তাঁর ফেসবুক পেজের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। তিনি আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।

গোলাম কিবরিয়ার এজাহারে লিখেছেন, ‘আমি গত ২৯/০৩/২০২৩ তারিখ রাত (মঙ্গলবার দিবাগত রাত) অনুমান ০১.৩২ ঘটিকার সময় ব্যক্তিগত কাজে তেজগাঁও থানাধীন ফার্মগেটস্থ আল রাজী হাসপাতালের সামনে অবস্থানকালে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ব্রাউজ করার সময় দেখতে পাই যে, গত ২৬ মার্চ (২০২৩) মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করে। একই সাথে উক্ত সংবাদটি প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেজে প্রথম আলো পত্রিকা অফিস থেকে শেয়ার করে। উক্ত সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি, সেই শিশুটির নাম জাকির হোসেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলেছে, ‘‘পেটে ভাত না ফুটলে স্বাধীনতা দিয়া কি করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।” সামাজিক মাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়।’

মামলার বাদী সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। তিনি আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।

মামলায় বাদির অভিযোগ, উক্ত সংবাদটি দেশে–বিদেশে হাজার হাজার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন। এই ঘটনায় মহান স্বাধীনতা দিবসে দেশের গৌরবউজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে জনগণসহ বহিঃবিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে একাত্তর টেলিভিশন চ্যানেল ও তাদের অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রথম আলো উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। যে শিশুটির কথা প্রথম আলোর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। নাম পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রথম আলোর এই খবর বাংলাদেশের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির চরম অবনতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বাদি মামলাটি করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে আজ বুধবার ভোর চারটার দিকে তাঁর সাভারের বাসা থেকে সিআইডির পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তাঁকে আটকের কথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ স্বীকার করেননি।

সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল

সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে তুলে নেওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সাংবাদিক শামসুজ্জামান একজন মানুষের উক্তি, সত্য ঘটনা তুলে ধরেছেন। এটি করে তিনি কী অপরাধটা করেছেন, সেটা বোধগম্য নয়।

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এটা ভয়াবহ ঘটনা। ওই সাংবাদিক কী অপরাধটা করেছেন, আমি তো বুঝলাম না! সত্য যে ঘটনা, সেটা তিনি তুলে ধরেছেন। একজন মানুষের যে উক্তি, সে উক্তি তুলে ধরেছেন।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অপরাধটা কী, ২৬ মার্চের দিনেই এটা করাটা? তার মানে স্বাধীনতাকে অপমান করা হয়েছে, মানহানি করা হয়েছে। তো একটা মানুষ যদি স্বাধীনতার দিনে ক্ষুধার্ত বোধ করে, সে যদি বঞ্চিত বোধ করে এবং সে যদি ওই কমেন্টটা দেয় যে দেশ স্বাধীন হয়ে আমার কী লাভ হলো। অপরাধটা কোথায়?’

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের এক স্বরাজ বিপ্লবীর পরিবারের ওপর নির্মিত একটি ছায়াছবির সংলাপ ‘স্বাধীনতা কী ধুয়ে খাব’ উদ্ধৃত করেন। তিনি বলেন, ‘যে স্বাধীনতা আমাদের খেতে দেয় না, যে স্বাধীনতা এভাবে মানুষকে নির্যাতন করে, নিপীড়ন করে, হত্যা করে, সে স্বাধীনতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এটাকে খেদোক্তি বলে। তার অর্থ তো এই নয় যে স্বাধীনতাবিরোধী। এখন শামুসুজ্জামান সাহেব রিপোর্ট করেছেন, তার জন্য তাঁকে তুলে নেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের কথা বলার কারণে যদি সাংবাদিককে হেনস্তা করা হয়, সেটা কি সরকারকে ক্রেডিট দিচ্ছে?’

সংবাদ সম্মেলনে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, একটা গণমাধ্যম তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে, অন্য গণমাধ্যম তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। এবার একটু ব্যতিক্রম দেখা গেল। একটা গণমাধ্যম একটা প্রতিবেদন তুলে ধরল, তার বিপরীতে একাধিক গণমাধ্যম পাল্টা প্রতিবেদন করল। এটা গণমাধ্যমের মধ্যে বিভক্তি  তুলে ধরার কোনো উদ্দেশ্য কি না?

জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা এটা নতুন নয়, অনেক পুরোনো। সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠানগুলো—প্রেসক্লাবে বলেন, ডিআরইউ বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ভাগ করা হয়েছে। লাভটা কোথায়? লাভটা হচ্ছে; যেসব সংবাদপত্র সত্য কথাগুলো তুলে ধরে, তারা কিছুটা ভয়কে জয় করে কিছুটা তুলে ধরে, এইগুলোকে বিপদগ্রস্ত করে ফেলা।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কিছু কিছু সাংবাদিক আছে, যাদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দিয়ে তাদের দিয়ে তাদের পক্ষে কথা বলায়।’ তিনি বলেন, ‘টক শোগুলো যে হয়, দেখবেন, এমন এমন লোকদের নিয়ে আসে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে, বিরোধী মতের পক্ষ থেকে, যারা কথাই ঠিকমতো বলতে পারে না— এমনও আছে। এটা কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে, সেভাবেই আনা হয় এবং যারা কথা বলতে পারে, তাদের ডাকা হয় না। একটাই লক্ষ্য যে আমাকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *