১০ বছরে বাংলাদেশে ৯ হাজার ৬৫৫ ধর্ষণ

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

বাংলাদেশে গত ১০ বছরে ৯ হাজার ৬৫৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৭৯টি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর দিকে দেশে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৬২৭টি ধর্ষণ হয়েছে।

বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

২০১৩ সালে থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়ে দেশে ৯ হাজার ৬৫৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৭৯টি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

দেশে যে পরিমাণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, সেই তুলনায় মামলা হয়েছে অনেক কম।

২০১৯ সালে ধর্ষণ হয়েছে ১ হাজার ৪১৩টি এবং এর মধ্যে মামলা হয়েছে ৯৯৯টি। ২০২০ সালে ধর্ষণ হয়েছে ১ হাজার ৬২৭টি এবং মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৪০টি। ২০২১ সালে ১ হাজার ৩২১টি ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৯১৬টি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ৭৩৪টি ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৫০৩টি।

দেশে ধর্ষণের ঘটনা বারবার ঘটার অন্যতম কারণ হলো বিচারহীনতার সংস্কৃতি। অপরাধীদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো তাহলে এত বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটতো না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করা কঠিন। এই ধরনের অপরাধ করে পার পাওয়া যায় এমন এক ধরনের ধারণা আছে। ফলে এই অপরাধগুলো বেশি ঘটছে।

মো. নূর খান, নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র

গত ১০ বছরে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫৭২ জনকে এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ১০৩ জন।

আসক সূত্রে জানা গেছে, তারা মূলত ৯টি জাতীয় দৈনিক ও কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এর বাইরেও সংবাদে প্রকাশ হয়নি এমন ধর্ষণের ঘটনাও তাদের তথ্যে সংযুক্ত করা হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, ‘ধর্ষণের সঙ্গে ক্ষমতার সম্পর্ক আছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের জৈবিক চাহিদা পূরণের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় তার শক্তি প্রদর্শনের চিন্তা। তাছাড়া বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা, নাগরিক অধিকার, সামাজিক সুরক্ষা—এসব কিছুর সঙ্গেও ধর্ষণের সম্পর্ক রয়েছে।’

সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ায় অনেকেই ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আনতে চান না জানিয়ে রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, ‘ধর্ষণের কোনো ঘটনা প্রকাশ পেলে উল্টো ভুক্তভোগীকেই সমাজ দোষীর চোখে দেখে এবং তাকেই কটু কথা শোনায়। অনেক সময় তার ওপরই দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং ধর্ষককে নিরপরাধী হিসেবে তুলে ধরা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাছাড়া আমাদের বিচার ব্যবস্থার কিছু সমস্যা আছে। বিচার পেতে অনেক ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এভাবে ধর্ষণকে বৈধতা দেওয়া হয়। এর ফলে সামাজিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বলেই দেশে বারবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।’

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান বলেন, ‘করোনাকালে অধিকাংশ মানুষ তাদের কাজের সুযোগ হারায়। ফলে তারা বাসায় বা নিজ এলাকায় থাকেন। একজন মানুষ যখন কাজের মধ্যে থাকে না এবং আর্থিকভাবে অনিশ্চিত অবস্থায় পড়ে তখন তার মধ্যে নানান ধরনের খারাপ চিন্তা কাজ করে। তখন তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। এ কারণেই করোনার সময় ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটে থাকতে পারে।’

এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘দেশে ধর্ষণের ঘটনা বারবার ঘটার অন্যতম কারণ হলো বিচারহীনতার সংস্কৃতি। অপরাধীদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো তাহলে এত বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটতো না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করা কঠিন। এই ধরনের অপরাধ করে পার পাওয়া যায় এমন এক ধরনের ধারণা আছে। ফলে এই অপরাধগুলো বেশি ঘটছে।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *