১৫৬ দিন পর বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে দীর্ঘ ১৫৬ দিন পর বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) গুলশানের বাসভবনে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের সম্মিলিত বৈঠকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের তাঁর বাসা ফিরোজায় পৌঁছান।

মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে শারীরিক কিছু জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দীর্ঘ ১৫৬ দিন চিকিৎসা গ্রহণ শেষে বিকেল ৫টায় হাসপাতাল থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন খালেদা জিয়া। তাঁকে বহন করা গাড়িটি হাসপাতাল থেকে ৩০০ ফুট সড়ক, কুড়িল উড়ালসড়ক, শেওড়া বাসস্ট্যান্ড হয়ে বনানী কবরস্থান সড়ক দিয়ে গুলশানের বাড়িতে যায়।

খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ির সামনে শত শত মোটরসাইকেলে করে হাজারো নেতা-কর্মী ছিলেন। তাঁরা মিছিল করতে করতে খালেদা জিয়াকে বাসায় নিয়ে যান। এ সময় নেতা-কর্মীরা সরকার ও নির্বাচনবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসা, পুরোটা পথ নেতা-কর্মীরা সড়কে থেমে থেমে এভাবে স্লোগান দেন। এতে বিমানবন্দর সড়কের রাজধানীমুখী অংশে যানজটের সৃষ্টি হয়।

বুধবার রাতে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বৈঠক করেন গত মঙ্গলবার রাতে। সেই বৈঠকে তাঁর স্বাস্থ্যের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে হাসপাতাল থেকে তাঁকে বাসায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে তাঁর পরিবার থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি। এমন পরিপ্রেক্ষিতে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত ২৭ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে তাঁর রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এখন তাঁর স্বাস্থ্য অনেকটা স্থিতিশীল, তাই তাঁকে বাসায় নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

গত মঙ্গলবার বিকেলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়েছিল। সেখানে আড়াই ঘণ্টার কিছু বেশি সময় চিকিৎসা দেওয়ার পর আবার কেবিনে নেওয়া হয়। গত পাঁচ মাসে এ নিয়ে একাধিবার সিসিইউতে নেওয়া হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।

গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা কার্যক্রম সার্বক্ষণিক তদারকি করছে।গত ২৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হামিদ আহমাদ আবদুর রব, ইন্টারভেনশনাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডেস এবং হেপাটোলজির অধ্যাপক জেমস পিটার হ্যামিলটন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার লিভারে রক্তক্ষরণ বন্ধে টিপস পদ্ধতি ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার করেন। 

৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভার সেরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় রয়েছে তার।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *