■ কুমিল্লা প্রতিনিধি ■
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে দুই সন্তানসহ নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার বাংগরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে স্থানীয়দের দাবি, একটি মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা থেকে ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান, ডিবি, সিআইডি, পিবিআই এবং র্যাব কর্মকর্তারা।
নিহতরা হলেন- রুবি আক্তার (৫৮), তার মেয়ে জোনাকি আক্তার (৩২) এবং ছেলে মো. রাসেল(৩৫)। এছাড়া রুবি আক্তারের আরেক মেয়ে রুমা আক্তারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার বিকেলে রুবির মেয়ের জামাই মনির হোসেন স্থানীয় স্কুল শিক্ষক রুহুল আমিনের একটি মোবাইল ছিনতাই করে। এ ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া এবং আকাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল রুবিকে জিজ্ঞাসা করতে গেলে তাদের ওপর হামলা করা হয়। এতে এলাকায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল এবং ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। খবর পেয়ে এলাকার শতাধিক লোক ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই রুবি, তার ছেলে রাসেল এবং মেয়ে জোনাকি নিহত হয়। আহত হয় আরেক মেয়ে রুমা আক্তার।
আকাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল বলেন, মোবাইল ছিনতাইয়ের একটি ঘটনা আমি জিজ্ঞেস করতে গেলে আমাকে এবং ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়াকে মারধর করা হয়। আমরা সম্মান বাঁচাতে ঘটনা এড়িয়ে এলাকায় চলে যাই। পরে গ্রামবাসীর সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে গণপিটুনিতে মাদক ব্যবসায়ী রুবি, তার ছেলে এবং মেয়ে নিহত হয়। আসলে এমন হত্যাকাণ্ড কোনভাবেই কাম্য নয়।
বাঙ্গুরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, নিহত রুবি আক্তার, তার মেয়ে জোনাকি এবং ছেলে রাসেল ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মাদকসহ অন্যান্য অপরাধে মামলা রয়েছে।
কুমিল্লা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান বলেন, যারা হতাহত হয়েছে তারা অপরাধী হয়ে থাকলে তাদেরকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে পারতো। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে যারা এই হত্যাকাণ্ড করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার ওই নারী ও তার স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুমিল্লা-৩ মুরাদনগরের সাবেক এমপি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুরে ভুক্তভোগীর বাড়ি মুরাদনগরের পাচকিত্তা বাহারচরে গিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারসহ স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হীনমন্যতায় না ভোগার পরামর্শ দেন তিনি।
এসময় কায়কোবাদ বলেন, আমি যেমন এ মুরাদনগরের সন্তান আপনারও এ মাটিরই সন্তান। এখানে আমার যেমন অধিকার আপনাদেরও তেমন অধিকার। ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে হেনেস্তা করার সুযোগ নেই। যেহেতু এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত চলমান, তাই আমি বেশি কিছু বলব না। সুষ্ঠু বিচার করতে হবেই হবে। হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি ছিল, আছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমি আপনাদের পাশে আছি। আপনারা নির্ভয়ে বসবাস করুন।
কুমিল্লার মুরাদনগরে ভুক্তভোগীর বাড়িতে কায়কোবাদতবে কায়কোবাদ যখন ওই বাড়িতে যান, তখন ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ছিলেন না।
এ প্রসঙ্গে কায়কোবাদ বলেন, ‘আমি এখানে এসেছিলাম সকলের সাথে দেখা করতে, কথা বলতে। কিন্ত পুলিশ ও আমাদের মাননীয় শিশু উপদেষ্টা ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে এখান থেকে দূরে নিয়ে যায়। আমি জানতে চাই, তাদের উদ্দেশ্য কি। তারা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আপনাদের সাথে বিএনপির বিরোধ সৃষ্টি করার জন্য আওয়ামিলীগ ও এনসিপি যে ষড়যন্ত্র করেছে তা সফল হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ। আমাদের সাথে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সুসম্পর্ক নষ্ট করতেই আওয়ামী লীগ নেতাকে বিএনপি বলে অপপ্রচার করেছে একটি পক্ষ। ওরা চায় হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা লাগিয়ে এ দেশকে ভারতের অঙ্গ রাজ্য বানাতে। ওদের ষড়যন্ত্র শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে নয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির বিরুদ্ধে।