:: তাহসিন আহমেদ ::
উন্নয়নের দেড় দশকে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা যখন ম্রিয়মাণ অবস্থা পার করছে তখন নিঃসন্দেহে মানবজমিন আমাদের গণমাধ্যম জগতে আলোকবর্তিকার ভূমিকায় অবতীর্ণ। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে স্রোতের বিপরীতে হেটে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের লড়াইয়ে মানবজমিনের বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা ছিল প্রশংসা করার মত। তথাকথিত ডামি নির্বাচনের দিন বাংলাদেশ থেকে ব্লক করে দেওয়ার পরও দমানো যায়নি মানবজমিনকে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই রাজনৈতিক খবর পরিবেশনে মুন্সিয়ানার কারণে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে পত্রিকাটি। পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মহিলা হলের সামনে রিকশাওয়ালাদের পা তুলে বিশ্রাম নেওয়ার ওপর প্রতিবেদন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্চিত হবার বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। ১৯৮২ সালে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ইত্তেফাকের কূটনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার সময় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সাংবাদিক হিসেবে বিশ্বকাপ ফুটবল কাভার করার গৌরব অর্জন করেন। তিনি সৌদি আরবের হাফার আল-বাতিন থেকে ইত্তেফাকের জন্য উপসাগরীয় যুদ্ধের কভার করেন।
প্রথম বাংলাদেশী সাংবাদিক হিসাবে তিনি ১৯৯০ ফিফা বিশ্বকাপ এবং পরবর্তী পাঁচটি টুর্নামেন্ট কভার করেন; ডিয়েগো ম্যারাডোনা, পাওলো রসি এবং জন বার্নেসের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
তিনি ১৯৯২ সালে আজকের কাগজ পত্রিকায় সহযোগী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে বাংলাবাজার পত্রিকার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি এর প্রধান সম্পাদক হিসাবে মানবজমিন প্রতিষ্ঠা করেন।
মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী মৌলভীবাজার কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে দলীয় সাংবাদিকতার তমসাচ্ছন্ন সময়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গণমানুষের মুখপাত্রে পরিণত হওয়া দৈনিক মানবজমিনের ২৬তম বর্ষে পদার্পণের শুভেচ্ছা। বাংলাদেশের ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে সাহসী সাংবাদিকতার বাতিঘর হিসেবে টিকে থাকুক পত্রিকাটি আপন মহিমায়।