:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::
বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচ হেরে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার যেন শনির দশা। ভারতের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও হারল তারা।
এর আগে ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। আর টানা দুই ম্যাচ জিতে রান রেটে এগিয়ে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে উঠে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
অধিনায়ক বাভুমাকে নিয়ে ২০ ওভারের মধ্যেই দলের রান তিন অঙ্কে নিয়ে যান ডি কক। বাভুমা ছন্দে ছিলেন না মোটেও, ৫৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংসেই ক্যাচ দিয়ে বাঁচেন তিনবার। তবে ডি ককের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকাকে রান নিয়ে ভাবতে হয়নি। আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা এই বাঁহাতির ইনিংসে এ দিনও ছিল স্ট্রোকপ্লের পসরা। ৮টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৫টি ছক্কা, সবকটি ছক্কাই এসেছে লেগ সাইডে বিহাইন্ড দ্য স্কয়ারে। কামিন্সকে পুল করে মারা অমন একটি ছক্কায় ৯০ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৯ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরিটি পান তিনি।
ম্যাক্সওয়েলের বলে ডি কক যখন বোল্ড হয়ে ফেরেন, প্রোটিয়াদের রান তখন ৩ উইকেটে ১৯৭। হাতে ছিল ১৫.১ ওভার। তবে উইকেট-বল দুটিই হাতে থাকার পরও শেষ দিকে প্রত্যাশিত মাত্রায় বড় ঝড় তুলতে পারেননি হেনরিখ ক্লাসেন-ডেভিড মিলাররা। মার্করামের ৪৪ বলে ৫৬ রানের ইনিংসের সুবাদে অবশ্য তিনশ পেরোয় স্কোর। স্টার্কের করা ইনিংসের পঞ্চাশতম ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে আসে মাত্র ১ রান।
৩১২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া উদ্বোধনী জুটি ভেঙে যায় ২৭ রানেই। ষষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলে মার্কো জেনসেনকে লেগ সাইডে ঘুরাতে যান মার্শ। আউটসাইড এজে আকাশে অনেকক্ষণ ভেসে থাকা বল মিড অফে তালুবন্দী করেছেন টেম্বা বাভুমা। ১৫ বলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়াই করেছেন ৭ রান। মার্শের আউটের পর দ্রুত বিদায় নেন ডেভিড ওয়ার্নারও। সপ্তম ওভারের শেষ বলে লুঙ্গি এনগিদিকে ব্যাকফুটে কাট করতে যান ওয়ার্নার। কাভার পয়েন্ট এলাকায় ডাইভ দিয়ে ক্যাচ ধরেছেন রাসি ফন ডার ডুসেন। ৭ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ২ উইকেটে ২৭ রান।
মার্শ, ওয়ার্নারের বিদায়ের পর চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন মারনাস লাবুশেন। তিন নম্বরে নামা স্টিভ স্মিথের সঙ্গে লাবুশেনের জুটিটা জমতে না জমতেই অস্ট্রেলিয়া খায় আরও এক ধাক্কা। দশম ওভারের পঞ্চম বলে স্মিথের বিপক্ষে এলবিডব্লুর আবেদন করেন কাগিসো রাবাদা। অনফিল্ড আম্পায়ার সাড়া না দেওয়ায় রিভিউ নেন প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমা। তাতে আউট হয়ে যান স্মিথ। ৯.৫ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৫০ রান। ১৬ বলে ৪ চারে ১৯ রান করেন স্মিথ।
মার্শ, ওয়ার্নার, স্মিথ-৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া অস্ট্রেলিয়াকে দ্রুত আরও একটি ধাক্কা দেন রাবাদা। ১২তম ওভারের প্রথম বলে দুর্দান্ত ডেলিভারিতে ইংলিশকে বোল্ড করেন রাবাদা। বোলিংয়ে দুর্দান্ত গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ। ১৭তম ওভারের প্রথম বলে ম্যাক্সওয়েলকে কট এন্ড বোল্ড করেন কেশব মহারাজ। ১৭ বলে ৩ রান করতে পেরেছেন অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার। একপ্রান্তে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকা লাবুশেনকে একা ফেলে আউট হয়ে যান স্টয়নিসও। স্টয়নিসের উইকেটে রাবাদার যতটা না অবদান, তাঁর চেয়ে বেশি অবদান ডি ককের। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে স্টয়নিসের গ্লাভসে লাগা বল বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্তভাবে ধরেছেন ডি কক। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো অজিদের স্কোর দাঁড়ায় ১৭.২ ওভারে ৬ উইকেটে ৭০ রান।
৭০ রানে ৬ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা বলতে গেলে এখানেই ফিকে হয়ে যায়। এরপর সপ্তম উইকেটে লাবুশেন-মিচেল স্টার্কের ৯৪ বলে ৬৯ রানের জুটিতেই যা একটু লড়াই করেছিল অস্ট্রেলিয়া। অজিদের ইনিংসের সর্বোচ্চ এই জুটি ভাঙেন ইয়ানসেন। ৩৪তম ওভারের তৃতীয় বলে জেনসেনকে আপার কাট করতে যান স্টার্ক। উইকেটরক্ষক ডি কক সহজ ক্যাচ ধরেছেন। ৫১ বলে ২৭ রান করেছেন স্টার্ক। স্টার্কের বিদায়ের পর দ্রুত বিদায় নেন লাবুশেনও। ৩৫তম ওভারের পঞ্চম বলে মহারাজকে ইনসাইড আউট শট খেলতে যান লাবুশেন। শর্ট কাভারে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেছেন বাভুমা। লাবুশেনের ৭৪ বলে ৪৬ রানের ইনিংসটাই অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোর।
স্টার্ক, লাবুশেন আউট হওয়ার পর বাকিটুকু শুধুই ছিল আনুষ্ঠানিকতার। ৩৮ রানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে ৪০.৫ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। যেখানে হ্যাজলউডকে আউট করে অজিদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন তাব্রেইজ শামসি। ১৩৪ রানে হারা অস্ট্রেলিয়ার নেট রানরেট এখন -১.৮৪৬। তাদের নিচে আছে শুধুই আফগানিস্তান। দশ নম্বরে থাকা আফগানদের নেট রানরেট -১.৯০৭।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩১১/৭ (ডি কক ১০৯, মার্করাম ৫৬, বাভুমা ৩৫; ম্যাক্সওয়েল ২/৩৪, স্টার্ক ২/৫৩)।
অস্ট্রেলিয়া: ৪০.৩ ওভারে ১৭৭ (লাবুশেন ৪৬, স্টার্ক ২৭, কামিন্স ২২; রাবাদা ৩/৩৩, মহারাজ ২/৩০)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩৪ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: কুইন্টন ডি কক